লাগামহীন বীমাপলিসি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আসছে
শেয়ারবাজার রিপোর্টঃ লাইফ এবং নন-লাইফ বীমা কোম্পানীগুলো যাতে তার আর্থিক ক্ষমতার বাইরে লাগামহীন বীমাপলিসি বিক্রি করতে না পারে- সে ব্যাপারে শিগগিরিই একটি নীতিমালার আওতায় নিষেধাজ্ঞা আসছে। কোম্পানিগুলোর জন্য এ বিষয়ে একটি সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালা প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
উল্লেখ্য সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালা প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ সম্পর্কে বীমা আইন ২০১০ এ সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। এছাড়া জাতীয় বীমা নীতিতেও এ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।
এই নীতিমালার আওতায় কোম্পানিগুলো তার পরিশোধিত মূলধনের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ পর্যন্ত বীমা পলিসি বিক্রয়ের মাধ্যমে গ্রাহকের আর্থিক ঝুঁকি গ্রহণ করতে পারবে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলো লাগামহীনভাবে বীমা পলিসি বিক্রি করতে পারবে না। এতে কোম্পানিগুলোর আর্থিক ভিত্তির ওপর কোন প্রকার আঘাত লাগার সম্ভাবনা কমে যাবে বলে মনে করছে আইডিআরএ।
এদিকে এ নীতিমালার কারণে স্বল্প মূলধনী বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসা কমবে। অর্থাৎ বীমা পলিসি বিক্রি বা ব্যবসা বাড়াতে হলে মূলধন বাড়ানো ছাড়া কোম্পানিগুলোর অন্য কোন উপায় থাকবে না বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে ২০১০ সালের আগে নিবন্ধিত বীমা কোম্পানিগুলোকে আইডিআরএ বিভিন্ন সময়ে নির্দেশ দিলেও অধিকাংশ কোম্পানি এ নির্দেশ পরিপালন করেনি।
আইডিআরএ সূত্রে জানা যায়, দেশের বীমা কোম্পানিগুলো দাবী পরিশোধের ক্ষমতা যাচাই-বাছাই না করে ইচ্ছামতো বীমা পলিসি বিক্রি করছে। এতে বড় ধরণের বিপর্যয় হলে কোম্পানিগুলোর মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এই ধরণের ঝুঁকি এড়াতে এবং বীমা ব্যবসার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সলভেন্সি মার্জিন নামে একটি নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
এদিকে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্স্যুরেন্স সুপারভাইজরস (আইএআইএস) এর মতে, বীমা কোম্পানির ঝুঁকিভিত্তিক মূলধনের পর্যাপ্ততা অর্জনের জন্য সলভেন্সি-১ এর পাশাপাশি এর সুষ্ঠু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য সলভেন্সি-২ এর শর্তগুলো মেনে চলা জরুরি। সলভেন্সি-১ এর শর্ত অনুযায়ী বীমা ব্যবসায় বড় ধরণেল বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য বীমা কোম্পানগিুলোকে পর্যাপ্ত মূলধন অর্জন করতে হবে। এতে বড় ধরণের বিপর্যয়ের কারণে গ্রাহকের বীমা দাবি বেড়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হবে না। সলভেন্সি-২ এ বলা হয়েছে এ ঝুঁকি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হলে বীমা বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যালান্স শিট তৈরি, ঝুঁকি ভিত্তিক মূলধন সংরক্ষণ, নিজস্ব ঝুঁকি এবং সক্ষমতার মূল্যায়ন, উচ্চপর্যায়ের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানের মূল্যায়ন থাকতে হবে।
এ বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে আইডিআএ’র সদস্য মোহাম্মদ কুদ্দুস খান শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে বলেন, পরিশোধিত মূলধনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বীমা পলিসি বিক্রি অর্থাৎ গ্রাহকের আর্থিক ঝুঁকি গ্রহণে কোম্পানিগুলোকে সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালার আওতায় আনার পরিকল্পনা চলছে। এর জন্য আমরা প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরির কাজ করছি।
শতাংশ নির্ধারণের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)-সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে এ নীতিমালা তৈরি হবে।
এই সম্পর্কে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি মালিকদের সংগঠন বিআইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, এই বিষয়ে আমি এখনো কিছু জানি না।
উল্লেখ্য, এর আগে পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে আইডিআরএ থেকে কোম্পানিগুলোকে অনেকবার বলা হয়েছে। কারণ, বীমা আইন ২০১০ অনুযায়ী বীমা কোম্পানির নিবন্ধন পেতে নন-লাইফের ক্ষেত্রে ন্যুনতম পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা এবং লাইফ বীমার ক্ষেত্রে ন্যুনতম পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা হতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত লাইফ ও নন-লাইফ মিলিয়ে ২২টি কোম্পানি এবং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে না পারা আরোও ৯টি বীমা কোম্পানি পরিশোধিত মূলধনের ন্যুনতম লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। বর্তমানে লাইফ বীমা খাতে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সর সবচেয়ে বেশি পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। তাদের পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ১২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অপরদিকে নন-লাইফ বীমা খাতে গ্রীণডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের সবচেয়ে বেশি পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। তাদের মূলধনের পরিমাণ ৭৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এদিকে বীমা সংশ্লিষ্টদের মতে, বীমায় সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালা এতোদিন ছিলনা। কিন্তু বর্তমানে বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৭৭টি। এর মধ্যে হাতেগোনা কিছু কোম্পানি ভাল করছে। অন্যরা এ ব্যবসায় কোন রকমে টিকে আছে। তাই সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালায় ঢালাওভাবে সব কোম্পানিকে একই মাপকাঠিতে আনা ঠিক হবে না। এক্ষেত্রে আইডিআরএ ক্যাটাগরি নির্ধারণ করতে পারে। এছাড়া সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালার সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হলে বীমা খাতে চলমান কমিশন বাণিজ্য যে করেই হোক বন্ধ করতে হবে।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড. সোহরাব উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, পলিসিহোল্ডারের স্বার্থে সলভেন্সি মার্জিন একটি ভালো হাতিয়ার। ব্যবসা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর পরিমাণ বাড়বে। এর দরকার রয়েছে বলেই ১৯৯৯ সালে ভারত তা তুলে দিলেও ২০০৮-এ আবার চালু করেছে।
পাকিস্তানও ২০০০ সালে তুলে দিয়ে ২০০৬ সালে পুনরায় চালু করেছে।
শেয়ারবাজারনিউজ/তু/রু/শা/ও