প্লেসমেন্ট নিয়ে বিএসইসি-মার্চেন্ট ব্যাংক মতবিরোধ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ২০১২ সালে দেয়া প্লেসমেন্ট শেয়ারের নোটিফিকেশনের ব্যাপারে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। নোটিফিকেশনে বিএসইসি প্লেসমেন্ট শেয়ার বণ্টনের সীমা নির্ধারণ করে দেয় এবং বণ্টন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে।
প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়ে ২০১২ সালে ঘোষিত এ নির্দেশনায় বলা হয়, কোম্পানি মূলধন বাড়ানোর সময় যে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করবে তা অনধিক ১০০ জনের মধ্যে বন্টন করতে হবে। এমনকি এ নিয়ম হবার আগে পর্যন্ত মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্লায়েন্টদের মাধ্যমে করা ব্যাংকার্স ডিসক্রিশনারি অ্যাকাউন্টের একাধিক হিসাবকে একটি হিসাব হিসেবে গণ্য করা হলেও এ নির্দেশনার মধ্য দিয়ে তা বাতিল করা হয়। ফলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্লেসমেন্ট শেয়ার পাবার সম্ভাবনা পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অবহেলা করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংক কর্মকর্তা এ নোটিফিকেশন নিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
প্লেসমেন্ট শেয়ার বন্টণের ব্যাপারে বিএসইসি’র এ নির্দেশনা নিয়ে বিভিন্ন মহলে দেখা দিয়েছে দ্বিধা-বিভক্তি। পরস্পর বিরোধী মতামত দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বিএসইসি এমন নির্দেশনার কারণ হিসেবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বললেও এ নিয়ে মতভেদ প্রকাশ করছেন বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
এদিকে, ২০১২ সালে জারি হওয়া নির্দেশনার তিন বছর হয়ে গেলেও এ নির্দেশনার কারণ এখনও পরিষ্কার হয়নি সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে। পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থায় এমন নির্দেশনা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা করার পথ সংকুচিত করা হচ্ছে। আর এ সুযোগে বিশেষ একটি মহল ফায়দা লুটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। আর এ অভিযোগ করছেন খোদ ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোই।
ইস্যু ম্যানেজমেন্টের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ নির্দেশনার মাধ্যমে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্লেসমেন্ট শেয়ার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রত্যেকটি কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার মাত্র ১০০ জনের মধ্যে বণ্টন করায় একটি বিশেষ মহল সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে। এসব কোম্পানি বাজারে আসার পর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হচ্ছেই এর পাশাপাশি বিশেষ ওই মহলের কারসাজি করার ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে।
এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে ভিন্ন কথা। বিএসইসি মনে করছে এমন সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সহায়ক হবে।
বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র সাইফুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রাইভেট প্লেসমেন্ট নিয়ে এর আগে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাই বাজারের স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়ে কারসাজি ব্যাপক পতনে অন্যতম নিয়ামক ছিলো বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
সংশ্লিষ্ট অনেকেই আবার এ ব্যাপারে মার্চেন্ট ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্লেসমেন্ট শেয়ার বণ্টনের সীমা নির্ধারণ করে দেয়ায় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো প্রত্যাশিত কমিশন হারাচ্ছে বলেই তারা এ নির্দেশনার বিরোধিতা করছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।
সাইফুর রহমান শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে আরো বলেন, প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য না। ফাইন্যান্সিয়ালি স্টেবল বিনিয়োগকারীদের এতে আসা উচিত। কারণ প্লেসমেন্ট শেয়ার সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। কোম্পানি ক্যাশ ডিভিডেন্ড না দিলে বা পরবর্তিতে প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন না পেলে প্লেসমেন্টধারী বিনিয়োগকারী বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
অনেকেই এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হচ্ছে বলছেন এমন প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত থাকতে পারে। কিন্তু কমিশন বাজারের সার্বিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেই এমন স্বিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে এ বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই নির্দেশনা আসার আগে ইস্যু ম্যানেজারদের দায়িত্বে প্লেসমেন্ট শেয়ার বন্টনের ব্যবস্থা করা হত। বন্টণের ব্যাপারে কোনো ধরনের বাধ্য-বাধকতা না থাকায় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তাদের ক্লায়েন্টদের মধ্যে কোনো সমস্যা ছাড়াই প্লেসমেন্ট বন্টণ করতো । এমনকি অনেকগুলো অ্যাকাউন্ট নিয়ে গঠিত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ব্যাংকার্স ডিসক্রিশনারি অ্যাকাউন্টকে একটি অ্যাকাউন্ট ধরে প্লেসমেন্টে শেয়ারের জন্য আবেদন করা হত। প্লেসমেন্ট আসার পর তা সব অ্যাকাউন্টে বন্টন করে দেয়া হত। আর প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে মার্চেন্ট ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতো। এখানে মার্চেন্ট ব্যাংক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর কাছে দায়ী থাকতো।
শেয়ারবাজারনিউজ/ও/তু