ট্রান্সফর্মার দিয়ে সিগারেট জ্বালান তিনি!
বনগাঁর প্রশান্ত বিশ্বাসের এমন উদ্ভট আচরণের আরও একশো উদাহরণ রয়েছে পরিবার ও পড়শিদের কাছে। কলকাতায় এয়ার ইন্ডিয়ার সদর দপ্তরে হুমকি-ফোন করার অভিযোগে ৩৯ বছরের ওই যুবককে রবিবার রাতে বনগাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার কলকাতার আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
প্রশান্তের ‘পাগলামি’র ঠেলায় মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছেন তাঁর স্ত্রী। নিম্নবিত্ত পরিবার। বাবা মারা গেছেন আগেই। অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করে সংসার চালান প্রশান্তের মা অনুরাধাদেবী। এ দিন তিনি বলেন, “ছেলের মানসিক রোগের অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে। ভালই হয়েছে, এখন পুলিশই ওর চিকিৎসা করাক।” একই দাবি বাড়ির অন্যদের। পড়শিদেরও।
সত্যিই কি জেলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হবে প্রশান্তের?
আইজি (কারা) অধীর শর্মা জানাচ্ছেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী যে-বন্দিই জেলে আসেন, তাঁর প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। “এ ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় যে, প্রশান্তের মানসিক অসুস্থতা রয়েছে এবং সেই চিকিৎসা জেল হাসপাতালে হবে না, তা হলে বড় সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হবে,” আশ্বাস দিয়েছেন আইজি।
প্রশান্তের পেশা হিসেবে পড়শিরা জানান, তিনি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সারানোর টুকিটাকি কাজ করা ‘ইলেকট্রিশিয়ান’। তাঁর শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতি সম্পর্কে পড়শিরাই জানাচ্ছেন, বছর দশেক আগে ওই যুবকের এক বার জ্বর হয়েছিল। তার পর থেকেই বনগাঁর কলমবাগানের বাসিন্দা প্রশান্তের মাথার ব্যামো। তবে সব সময় নয়। যখন সুস্থ থাকেন, তখন দিব্যি খোশমেজাজ। ছোটখাটো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম মেরামতির কাজ দিব্যি করেন। আবার মাঝেমধ্যে যখন মাথাটা বিগড়ে যায়, দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে এমন এমন কাণ্ড করে বসেন, যার ব্যাখ্যা পান না কেউই।
ঠিক যেমন দু’দিন আগে তিনি মোবাইল ফোন থেকে কলকাতায় এয়ার ইন্ডিয়ার সদর দফতরে ফোন করে বলেন, “আপনাদের বিমান ছিনতাই করব। এমএইচ-৩৭০ (যে-মালয়েশীয় বিমান মাঝ-আকাশ থেকে রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে গিয়েছে)-এর মতো।” পুলিশ জানায়, যেখানে তিনি ফোন করেছিলেন, সেটি এয়ার ইন্ডিয়ার দফতর কি না, সেই বিষয়েও নিশ্চিত ছিলেন না প্রশান্ত। বিমান ছিনতাইয়ের হুমকির জেরে তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স। তাদের অফিসারেরাই বনগাঁ থেকে ধরে আনেন প্রশান্তকে। কিন্তু রবিবার রাত থেকে জেরা করে তাঁদের মনে হয়, প্রশান্ত মানসিক ভারসাম্যহীন। ধৃত ব্যক্তি জঙ্গি নন, এই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে তাঁকে তুলে দেওয়া হয় বৌবাজার থানার পুলিশের হাতে।
কিন্তু মানসিক ভাবে অসুস্থ প্রশান্ত জামিন পেলেন না কেন?
পুলিশ অফিসারদের বক্তব্য, হতে পারে প্রশান্ত মানসিক ভাবে অসুস্থ। কিন্তু তাঁর ওই ফোনের পরে যে-হুলস্থুল কাণ্ড হয়েছে, যে-আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তার নিরিখেই তাঁর জন্য সরাসরি জামিন চাওয়া সম্ভব নয়। “তা ছাড়া ধৃতকে ভাল করে পরীক্ষা করানো দরকার। একমাত্র সেই পরীক্ষার পরেই জানা সম্ভব, প্রশান্ত সত্যিই মানসিক রোগী, নাকি অভিনয় করছেন,” বললেন এক অফিসার।
যাঁকে ঘিরে এত তৎপরতা, তিনি কী বলছেন? এমনটা করলেন কেন?
“ভুল হয়ে গিয়েছে,” মাথা নিচু করে জবাব দিলেন প্রশান্ত।
এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “মনে হচ্ছে, একেবারে পাগল হয়ে যাননি। মাঝেমধ্যে অ্যাটাক হয়।”
যার অর্থ, নিয়মিত চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন প্রশান্ত। এবিপি