আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৮ অক্টোবর ২০১৬, মঙ্গলবার |

kidarkar

মূল্য সংবেদনশীল তথ্য গোপন করেছে ন্যাশনাল টিউবস

national tubeশেয়ারবাজার ডেস্ক: কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে এমন চিঠির জবাবে সব কোম্পানিই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) জানিয়ে দেয় যে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। তবে এবার ব্যতিক্রম ঘটলো ন্যাশনাল টিউবসের ক্ষেত্রে। কোম্পানিটি তাদের ৪ বছর থেকে বন্ধ থাকা জিআই প্লান্ট এর উৎপাদন গত ১০ অক্টোবর পুনরায় চালু করেছে।

এজন্য গত ১ অক্টোবর ঢাকার আলু বাজারে একটি দোকান পর্যন্ত ভাড়া নেয়া হয়েছে যেখান থেকে ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে পণ্য সহজেই পৌছে দেয়া যায়। ঘটনাটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হলেও দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে জানায়নি ন্যাশনাল টিউবস। এ সংক্রান্ত বিষয়ে অনলাইন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে ডিএসইর পক্ষ থেকে জানার জন্য কোম্পানির বরাবর চিঠি পাঠানো হয়।

আর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয় যে, তারা তাদের ৪ বছর থেকে বন্ধ থাকা জিআই প্লান্ট এর উৎপাদন শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালে আদমজী গ্রুপ কর্তৃক আদমজী পাইপ নামে ব্যক্তিমালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল টিউবস। তাদের মূল পণ্য ছিল আধা ইঞ্চি থেকে চার ইঞ্চি ব্যাসের জিআই ও এমএস পাইপ, যা গৃহস্থালির পানি সরবরাহ ও সেচকাজে ব্যবহার হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ করে কোম্পানিটিকে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) অধীনে আনা হয়। প্রতিষ্ঠানের নাম হয় ন্যাশনাল টিউবস। পরবর্তীতে তেল ও গ্যাস সঞ্চালনকাজে ব্যবহারের জন্য সোয়া তিন ইঞ্চি থেকে আট ইঞ্চি ব্যাসের এপিআই পাইপ উৎপাদনে যায় কোম্পানিটি।

সত্তরের দশকে প্রতিষ্ঠাকালীন জিংক ট্যাংক দিয়ে গ্যালভানাইজিং উপকরণ প্রক্রিয়াজাত করে জিআই পাইপ উৎপাদন করত প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে পুরনো ট্যাংকটি পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়ায় ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে জিআই পাইপের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে কয়েকবার দেশীয় প্রযুক্তিতে ট্যাংক সংস্কার করে উৎপাদনে যাওয়ার চেষ্টা করে ন্যাশনাল টিউবস। এর দায়িত্ব দেয়া হয় খুলনা শিপইয়ার্ডকে। এতেও সফল না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ভারত থেকে জিংক ট্যাংক আমদানির সিদ্ধান্ত হয়।

২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভারত থেকে জিংক ট্যাংক এনে ন্যাশনাল টিউবসের জিআই পাইপ প্লান্ট চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারত থেকে ট্যাংক আনা হয়। সম্প্রতি তা স্থাপনের পাশাপাশি কারখানার অন্যান্য অংশের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ন্যাশনাল টিউবস।

অনেক বছর ব্যবহারের ফলে ন্যাশনাল টিউবসের জিংক ট্যাংকটি ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে অকেজো হয়ে যায়। কয়েক দফা চেষ্টা করেও তা ব্যবহার উপযোগী করা যায়নি। স্থানীয়ভাবে নতুন জিংক ট্যাংক তৈরির চেষ্টা করেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বাজেট কম থাকা ও সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমরা আমদানিকে অগ্রাধিকার দিইনি। তবে শেষ পর্যন্ত জিংক ট্যাংক আমদানি করেই জিআই পাইপ প্লান্ট দাঁড় করানো হয়।

কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত ন্যাশনাল টিউবসের কারখানায় বর্তমানে তিনটি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৬৪ সালে জার্মান মেশিনারিজ দিয়ে ছয় হাজার টন উৎপাদন সক্ষমতার প্রথম ইউনিটটি স্থাপন করা হয়। দ্বিতীয় ইউনিটটি ১৯৮০ সালে কোরিয়ার হুন্দাই কোম্পানির মেশিনারিজ দিয়ে চালু করা হয়, যার উৎপাদন সক্ষমতা নয় হাজার টন। তৃতীয় ইউনিটটি তাইওয়ানিজ যন্ত্রপাতি দিয়ে ১৯৮২ সালে স্থাপন করা হয়। মোট ৪৫ হাজার টন উৎপাদন সক্ষমতার কারখানার বর্তমানে তিনটি ইউনিটই চালু রয়েছে। তবে ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয় ইউনিটের অধীনে থাকা জিআই পাইপ প্লান্টে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

তবে তেল ও গ্যাস সঞ্চালনকাজে ব্যবহারের জন্য সোয়া তিন ইঞ্চি থেকে আট ইঞ্চি ব্যাসের এপিআই পাইপ ও এমএস পাইপের উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। দেশে গ্যাসলাইন পাইপ উৎপাদনে ন্যাশনাল টিউবসই একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এ কারণে বর্তমানে এটিই কোম্পানির প্রধান পণ্যে পরিণত হয়েছে।

জানা যায়, জিআই পাইপ একসময় ন্যাশনাল টিউবসের মূল পণ্য ছিল। পরবর্তীতে এ খাতে বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় ন্যাশনাল টিউবস বাজার হারায়। তবে ভালো মানের পণ্য উৎপাদন করতে পারলে তা আবারো বাজারে ভালো অবস্থান করে নিতে পারবে এ আশায় পুনরায় উৎপাদন চালু করা হয়।

শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.