মার্জিন আইন স্থগিতের সময় বাড়ায়নি বিএসইসি: বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: মার্জিন রুলস,১৯৯৯ এর রুলস ৩(৫) এর কার্যকারিতা স্থগিতের সময় বাড়ায়নি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মূলত এ আইনটি স্থগিত করতে বরাবরই স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে বিএসইসি বরাবর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এ বছর আইনটি স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কোনো পক্ষ থেকেই আবেদন করা হয়নি। তাই এর সময় আর বাড়ায়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আর নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন মার্জিন ঋণের বিনিয়োগকারীরা। কারণ এতোদিন যেসব পোর্টফলিওর ইক্যুইটিতে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত মাইনাস রয়েছে বা মার্জিন লোন তার ইক্যুইটির ডেবিট ব্যালেন্সের ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে তাদের ঋণ পরিশোধের চাপ ছিল না। পাশাপাশি এসব পোর্টফলিওতে লেনদেনের সুযোগ পর্যন্ত তারা পেয়েছেন। কিন্তু আইনটি স্থগিতের মেয়াদ না বাড়ানোয় এ সুযোগ আর বিনিয়োগকারীরা পাচ্ছেন না। বরং সিকিউরিটিজ হাউজগুলো ফোর্সসেল করার আরো সুযোগ পেয়েছে।
এ ব্যাপারে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: সাইফুর রহমান শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, আইনটি দীর্ঘদিন স্থগিত রাখা হয়েছে যাতে বিনিয়োগকারীরা তাদের নিষ্ক্রিয় পোর্টফলিও সচল করে বাজারে সক্রিয় হতে পারেন। কয়েক দফায় আইনটি স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। মূলত এ আইনটি স্টক এক্সচেঞ্জের আবেদনের প্রেক্ষিতে এতোদিন স্থগিত করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আইনটি স্থগিতের বিষয়ে কোনো মহল থেকে আবেদন আসেনি। যে কারণে আইন স্থগিতের মেয়াদও বাড়ানো হয়নি।
জানা যায়, মার্জিন রুলস,১৯৯৯ এর রুলস ৩ (৫) ধারায় বলা হয়েছে,যখনই ইক্যুইটি ক্লায়েন্টের মার্জিন অ্যাকাউন্ট ডেবিট ব্যালেন্সের ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসে তখন হাউজগুলো ঋণ সমন্বয়ের জন্য ক্লায়েন্টকে অবহিত করবে। যাতে কোনোভাবেই ইক্যুইটি মার্জিন ঋণের ১৫০ শতাংশের কম না হয়। হাউজ কর্তৃপক্ষের ক্লায়েন্টের প্রতি এ সংক্রান্ত চিঠির ৩ দিনের মধ্যে নগদ অর্থ কিংবা মার্জিনেবল সিকিউরিটিজ দিয়ে অতিরিক্ত ঋণ সমন্বয় করবে। যে পর্যন্ত ইক্যুইটি সন্তোষজনক অবস্থায় না আসে সে পর্যন্ত ক্লায়েন্টের লেনদেন বন্ধ থাকবে। এদিকে দীর্ঘদিনের বাজার মন্দায় বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর ঋণের পরিমাণ তার ডিপোজিটের বেশি অতিক্রম করেছে। ধরা যাক, কোনো বিনিয়োগকারীর ১ লাখ টাকা ডিপোজিটের বিপরীতে আরো ১ লাখ টাকা মার্জিন লোন সুবিধাসহ মোট ২ লাখ টাকার শেয়ারে কিনেছে। বাজার মন্দার কারণে তার বর্তমান শেয়ারের মূল্য ৫০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে তার ইক্যুইটির ডেবিট ব্যালেন্স মার্জিন লোন থেকে ১৫০ শতাংশ কমে গেছে। মার্জিন রুলসের উল্লেখিত ধারা অনুযায়ী হাউজ কর্তৃপক্ষ তাকে চিঠির মাধ্যমে অতিরিক্ত ঋণ পরিশোধের চাপ প্রয়োগ করার পাশাপাশি লেনদেন বন্ধ করে দেবে। দীর্ঘদিনের বাজার মন্দা ও এ ধরণের আইন থাকায় এতোদিন অনেক বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কিন্তু গত তিন বছর এ আইন স্থগিত থাকার ফলে বিনিয়োগকারীরা ঋণ পরিশোধের চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি লেনদেন করতে পেরেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৪ মার্চ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে মাইনাসে থাকা পোর্টফলিও পুনর্বিন্যাস এবং ১৯৯৯ সালের মার্জিন রুলসের ৩(৫) ধারা স্থগিত করার দাবি জানানো হয়। তাই একই বছরের ৯ এপ্রিল বিএসইসির ৪৭৫তম সভায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ, পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আবেদনের প্রেক্ষিতে মার্জিন রুলস,১৯৯৯ এর রুলস ৩(৫) এর কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। অর্থাৎ যেসব বিনিয়োগকারীর পোর্টফলিওর ইক্যুইটিতে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত মাইনাস রয়েছে বা মার্জিন লোন তার ইক্যুইটির ডেবিট ব্যালেন্সের ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে তাদের ঋণ পরিশোধের চাপ স্থগিত করে লেনদেনের সুযোগ করে দেয়া হয়। সর্বপ্রথমে এ সুবিধা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখ পর্যন্ত রাখা হয়। পরবর্তীতে এ সময় শেষ হলে পুঁজিবাজারের অবস্থা মন্দা থাকায় এ সুবিধার মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। শেষ পর্যন্ত গত বছরের ৩০ নভেম্বর বিএসইসির ৫৬০তম কমিশন সভায় এর মেয়াদ আরো এক বছর বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত ডেডলাইন বেঁধে দেয়া হয়। অর্থাৎ ইতিমধ্যে এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
এখন থেকে ঋণ পরিশোধের চাপের মুখে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি ১৫০ শতাংশের ডেবিট ব্যালেন্সের বিনিয়োগকারীরা লেনদেনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ হাউজের বেঁধে দেয়া সময় মতো বিনিয়োগকারীরা ঋণ পরিশোধ বা সমন্বয় না করে তাহলে তাদের পোর্টফলিওতে থাকা শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি (ফোর্সসেল) করে তাদের পাওনা বুঝে নেবেন।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা