আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৫ জানুয়ারী ২০১৭, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত মুনাফা বৃদ্ধি: খতিয়ে দেখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ramitance_bbশেয়ারবাজার রিপোর্ট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরে আর্থিক প্রতিবেদনে বেশকিছু ব্যাংক কৃত্রিম উপায়ে অতিরিক্ত মুনাফা দেখিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খেলাপি ঋণের উচ্চ বোঝা, অলস টাকার পাহাড় ও ভয়াবহ আর্থিক কেলেংকারির মধ্যেও কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেশি দেখিয়েছে। যে কারণে এগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে খতিয়ে দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। খুব শিগগিরই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১০ থেকে ১২টি দল মাঠে নেমে মুনাফার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, অতিরিক্ত মুনাফা দেখালে কয়েকটি ক্ষেত্রে সরাসরি প্রভাব পড়ে। প্রথমত বেশি মুনাফা করলে পুঁজিবাজারের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শেয়ারের দর চাঙ্গা হয়। এতে প্রতারিত হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আমানতকারীরাও ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আমানত রাখতে প্রলুব্ধ হন। এর সরাসরি সুবিধাভোগী হন ব্যাংক পরিচালকরা। অতীতে প্রকৃত খেলাপি ঋণ গোপন করাসহ নানা কারসাজির আশ্রয় নিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন,  প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যত বেশি থাকে ওই ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত মুনাফা তত কমে যায়। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা মেনে চললে কোন ব্যাংকের বেশি মুনাফা হবার কথা নয়।

সূত্র মতে, বর্তমানে ব্যাংক খাতে অবলোপনসহ মোট খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকা আদায় অনিশ্চিত। এছাড়া বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে স্থবিরতা রয়েছে। ফলে ব্যাংকের কাছে অলস পড়ে আছে প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। উচ্চ সুদের কারণে কেউ বিনিয়োগে আসছেন না।

ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে কমায়নি। এখনও সুদের হার ১২ থেকে ১৬ শতাংশ। এর বাইরে রয়েছে উচ্চ সার্ভিস চার্জ। ছিল বিভিন্ন আর্থিক কেলেংকারি। তবুও ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৩৫টির পরিচালন মুনাফার প্রাথমিক চিত্র পাওয়া গেছে। ২০১৬ সালে ৩৫টি ব্যাংক প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা মুনাফা দেখিয়েছে, যা ২০১৫ সালে ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য আয় আসে এলসি কমিশন থেকে। পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপন করে ব্যাংকগুলো উল্লেখযোগ্য মুনাফা করে। কিন্তু বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটের পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। আমানতকারীদের প্রাপ্য লভ্যাংশ, খেলাপি ঋণের প্রভিশন ও সরকারের প্রাপ্য কর যখন পরিশোধ করা হবে তখন উল্লিখিত অনেক ব্যাংক লাভের পরিবর্তে লোকসানে পড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এটাকে মুনাফা না বলে ব্যাংকের আয়-ব্যয়ের আংশিক চিত্র বলা যায়। উচ্চ সুদের কারণে বিনিয়োগ হচ্ছে না। আমানতের সুদ ২ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে একদিকে গ্রাহককে ঠকানো হচ্ছে, অন্যদিকে ঋণের সুদ এখনও ১০ থেকে ১৬ শতাংশে আটকে আছে। তার মতে, ব্যাংকগুলো সাময়িক গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে পরিচালন মুনাফা বেশি দেখিয়ে থাকতে পারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, কিছু বিতর্কিত ব্যাংকের মুনাফা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। কারণ ব্যাংকিং ব্যবসা ভালো ছিল না। অসৎ ঋণ গ্রহীতার কারণে ভালো ঋণ গ্রহীতারা ছিল ব্যাংকের কাছে জিম্মি। শেয়ারবাজারে শেয়ারের মূল্য বাড়াতে কৃত্রিম উপায়ে মুনাফা বাড়িয়ে দেখানো অস্বাভাবিক কিছু নয়। খেলাপি ঋণের প্রভিশন, লভ্যাংশ ও সরকারকে কর দেওয়ার পর যে অর্থ থাকবে, তাই নিট মুনাফা। পরিচালন মুনাফা দেখে গ্রাহকরা প্রতারিত হতে পারেন বলে মনে করেন তারা।

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, কিছু ব্যাংকের অস্বাভাবিক মুনাফা বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। ইতিমধ্যে এগুলোর তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সত্য উদঘাটনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাঠে নামবে বলে জানান তিনি।

শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.