দুশ্চিন্তার কবল থেকে বেড়িয়েছে ১২ কোম্পানি
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: মহাধসের পর দেশের পুঁজিবাজার নানা সংকট থেকে বেরিয়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। এর ফলে দেশের বাজার বিনিয়োগ উপযোগী হয়ে উঠেছে। যার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশিরাও বিনিয়োগে সক্রিয় হচ্ছেন। এর ফলশ্রুতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট কাটার পাশাপাশি স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দরে প্রভাব পরতে শুরু করেছে। যার কারণে এক মাসের ব্যবধানে গন্ডি থেকে বেড়িয়ে ১২ কোম্পানির শেয়ার দরে পরিবর্তন ঘটেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ সালে ফেসভ্যালুর নিচে থাকা কোম্পানির সংখা ছিলো ২৫টি এবং ৫ জানুয়ারি, ২০১৭ সালে এর পরিমাণ রয়েছে ১৩ টি। সেই হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে ফেসভ্যালু অতিক্রম করেছে ১২ কোম্পানি।
ফেসভ্যালু অতিক্রম করা কোম্পানিগুলো হলোঃ- সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল, ডেল্টা স্পিনিং, জেনারেশন নেক্সট, বিচ হ্যাচারী, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, বিআইএফসি, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ব্যাংক, শাইনপুকুর সিরামিক, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক এবং বিডি ওয়েল্ডিং লিমিটেড।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক কাঠ-খোর পুড়িয়ে বাজার একটা স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার কেনার ব্যাপারে কোনো শঙ্কা নেই। তাই প্যানিক হয়ে শেয়ার ছাড়া উচিত নয়। বছর শুরুর প্রথম সপ্তাহ শেষে তার প্রমান মিলেছে। অনেক শেয়ারের দামই চলে গেছে হাতের নাগালের বাইরে। সম্প্রতি সরকারের নেয়া বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিবাচক ভূমিকায় পুঁজিবাজার স্বাভাবিক ধারায় ফিরেছে। এরমধ্যে রয়েছে সঞ্চয়পত্র সুদের হার কমানো, ব্যাংক সুদের হার কমা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সরকারি শেয়ার অফলোডের খবর। সব মিলিয়ে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। এ ধারা বিদ্যমান থাকলেও অচিরেই বাজার তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, ২০১০ সালের ধস পরবর্তী সময়ের পর এখনই বাজার একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে পৌছেছে। যেখান থেকে পিছনে ফেরার আর কোন সুযোগ নেই। তাই বিনিয়োগ বান্ধব এই বাজারে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগের পাশাপাশি তালিকাভুক্তির পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
গত ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ তারিখে কোম্পানিগুলোর চিত্র তুলে ধরা হলোঃ- সিএনএ টেক্সটাইলের শেয়ার দর ছিলো ৮.০০ টাকা, ডেল্টা স্পিনিংয়ের ৮.৫০ টাকা, জেনারেশন নেক্সটের ৭.৮০ টাকা, সোনার গাঁ টেক্সটাইলের ৯.৩০ টাকা, বিআইএফসির ৮.৩০ টাকা, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ৭.৭০ টাকা, প্রাইম ফাইন্যন্সের ৮.১০ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ৯.৮০ টাকা, শাইনপুকুর সিরামিকের ৮.৯০ টাকা, বিচ হ্যাচারীর ৯ টাকা, মেঘনা কনডেন্স মিল্কের ৬.৩০ টাকা এবং বিডি ওয়েল্ড্রিংয়ের শেয়ার দর ছিলো ৯.৬০ টাকা।
এদিকে ৫ জানুয়ারি, ২০১৭ এম মাসের ব্যবধানে সিএনএ টেক্সটাইলের শেয়ার দর ২.৮০ টাকা বা ৩৫ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে ১০.৮০ টাকায়, ডেল্টা স্পিনিংয়ের ২.৫০ টাকা বা ২৯.৪১ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে ১১.০০ টাকা, জেনারেশন নেক্সটের ২.২০ টাকা বা ২৮ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে ১০.০০ টাকা, সোনারগাঁও টেক্সটাইলের ৩.০০ টাকা বা ৩২.২৬ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে ১২.৩০ টাকা, বিআইএফসির ২.৫০ টাকা বা ৩০.১২ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে ১০.৮০ টাকা, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ২.৫০ টাকা বা ৩২.৪৭ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে ১০.২০ টাকা, প্রাইম ফাইন্যন্সের ২.২০ টাকা বা ২৭.১৬ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে ১০.৩০ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ১.৮০ টাকা বা ১৮.৩৭ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে ১১.৬০ টাকা, শাইনপুকুর সিরামিকের ৩.৩২ টাকা বা ৩৫.৯৬ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে ১২.১০ টাকা, বিচ হ্যাচারীর ৩.০০ টাকা বা ৩৩.৩৩ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে ১২.০০ টাকা, মেঘনা কনডেন্স মিল্কের ৪.২০ টাকা বা ৬৬.৬৭ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে ১০.৫০ টাকা এবং বিডি ওয়েল্ড্রিংয়ের শেয়ার দর ৩.৪ টাকা বা ৩৫.৪২ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে ১৩.০০ টাকা।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, পূর্বেকার মন্দা বাজারে বিনিয়োগকারীরা অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। মহাধসের পর দেশের পুঁজিবাজার নানা সংকট থেকে বেরিয়ে ছন্দে ফিরে আসছে। গত কয়েক মাসের বাজারচিত্র এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে। বর্তমানে বাজার একটা স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। তাতে কিছুটা হলেও মুনাফার মুখ দেখেছেন তারা। ফলে আস্থার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদেরও আনাগোনা বাড়ছে বাজারে। তবে আইপিওর মাধ্যমে ভালো মানের কোম্পানি বাজারে আসতে না পারলে বাজারে বেশি দিন স্বাভাবিক রাখা কষ্টকর হবে বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থন করা কোম্পানিগুলো হলোঃ- প্রিমিয়ার ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, পিপলস লিজিং, মেঘনা পেট, কেপিপিএল, বেক্সিমকো সিনথেটিক, দুলামিয়া কটন, ঢাকা ডায়িং, ফ্যামিলি টেক্স বিডি, ম্যাকসন স্পিনিং, বিডি সার্ভিস, ইউনাইটেড এয়ার, এবং মেট্রো স্পিনিং মিলস লিমিটেড। বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক স্বল্প মূলধনী ও লোকসানী কোম্পানি নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে ফেসভ্যলু অতিক্রম করেছে। বাজারের চলমান উত্থান অব্যহত থাকলে এসকল কোম্পানিও ফেসভ্যালুতে চলে আসবে।
শেয়ারবাজারনিউজ/মু