আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১০ এপ্রিল ২০১৫, শুক্রবার |

kidarkar

এক্সপোজার জটিলতায় ঋণও পাচ্ছে না মার্চেন্ট ব্যাংক

merchant-bankশেয়ারবাজার রিপোর্টঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট সংক্রান্ত নির্দেশনার কারনে একদিকে বানিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংকে বিনিয়োগ করতে পারছে না, অন্যদিকে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো অন্য কোনো ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতেও পারছে না। গতিহীন ও অসাড় হয়ে থাকা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনাকেই মূল বাধা মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের কারনে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে মার্জিন ঋণ প্রদানকারী মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। ইক্যুইটির অধিকাংশ অংশই নেগেটিভে চলে আসায় নতুন করে বিনিয়োগের পথও বন্ধ হয়ে যায়। যে কারনে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিভিন্ন সময় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে মূলধন বাড়ানোর দাবি জানালেও তা পূরণ হয়নি। পরবর্তি সময়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বানিজ্যিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহি হলেও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এক্সপোজার লিমিট।
কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজার সংক্রান্ত ব্যাবসা করে এমন স্টক ব্রোকার বা মার্চেন্ট ব্যাংককে যদি ঋণ প্রদান করে তবে তা সংশ্লিষ্ট ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজারের এক্সপোজার হিসেবে গণ্য করা হবে। প্লেসমেন্ট শেয়ার বা বন্ড এমনকি বাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোনো প্রতিষ্ঠানেও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকে এক্সপোজার হিসেবে গণ্য করা হয়। যে কারনে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে চলতি মূলধন বাড়ানোর জন্য ঋণ হিসেবেও কোনো অর্থ পাচ্ছে না।
প্রথাগত ব্যাংকিংয়ে ঋণ গ্রহনকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাবসা ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সরাসরি বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। কিন্তু পুঁজিবাজারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া ঋণ, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করলে তা এক্সপোজারে চলে আসে। আর তাই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহি হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানে ঋণ প্রদানের কোনো বাধা নেই বলে দাবি করলেও এক্সপোজার লিমিটের নামে পরোক্ষভাবে ঋণ দেয়ার ব্যাপারে বাধা দিচ্ছে।
এসব সমস্যায় মার্চেন্ট ব্যাংকের ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে দ্বিমুখি সংকট। একদিকে এক্সপোজার লিমিট অতিক্রমের ভয়ে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দিচ্ছে না, অন্যদিকে মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউজ ঋণ নেয়া অর্থ পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করলে এর বাজার দরের ওপরও দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে। কোনো কারনে বিনিয়োগকৃত শেয়ারের দর বাড়লেও তা এক্সপোজার লিমিটে ঝুঁকির কারন হচ্ছে। এ কারনে পুঁজিবাজারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দীর্ঘ-মেয়াদি বিনিয়োগও অনেক সময় সল্প-মেয়াদি করে ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে। আর বাজারে প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন সল্পকালীন বিনিয়োগ বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হতে দিচ্ছে না।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন বিধি-নিষেধের ওপর বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকেই তাই উষ্মা প্রকাশ করছেন। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুমিকা কতটা পুঁজিবাজারবান্ধব তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যেখানে ২০১০ সালের আগে ব্যাংকের বিনিয়োগ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি ছিলো সেখানে বর্তমান সময়ে বিনিয়োগের পরিমান ৫ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা।
মার্চেন্ট ব্যাংকে ঋণ দেয়ার বাধ্য-বাধকতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে বলেন, ‘মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধ্য-বাধকতা নেই। তবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হবার কারনে বানিজ্যিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো ঋণ দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহি হয় না। এছাড়া আর কোনো সমস্যা নাই।’
অন্যদিকে বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ এসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) প্রেসিডেন্ট আসাদ খান শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে বলেন, ‘মার্চেন্ট ব্যাংককে যদি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ দেয়া হয় তবে তা ওই প্রতিষ্ঠানের এক্সপোজার হিসেবে গণ্য করা হয়। এটা বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটা প্রতিবন্ধকতা। বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ করেই সবার ওপর এ নির্দেশনা চাপিয়ে দেয়। আগে মোট দায়ের ১০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করা যেত না। নিয়ম পাল্টানোর সময় আরেকটু সময় নিয়ে কাজটি করলে মনে হয় বাজারের জন্য ভালো হত।’ এমন সব নির্দেশনা বাজার স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো একটা সমস্যাই। নিয়মগুলো আরেকটু সময় নিয়ে করলে ভালো হত। নির্দেশনার কারনে সমস্যা যেটা হচ্ছে- আমরা বাজারে দীর্ঘ-মেয়াদি বিনিয়োগ করতে পারছি না।’
এদিকে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সহ-সভাপতি ও ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্টের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আখতার হোসেন সান্নামাত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ঋণ প্রদান প্রসঙ্গে বলেন, ‘মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ঋণ প্রদানের অন্যতম মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে কস্ট প্রাইসকে ইনভেস্ট হিসেবে বিবেচনা না করা। দেখা যায়, আমাদের দীর্ঘ-মেয়াদের বিনিয়োগও অনেক সময় সল্প-মেয়াদী হয়ে যাচ্ছে বাজারের বর্তমান দরকে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করায়। এ সমস্যা সমাধান করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সাথে আলোচনা হচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্ট সকলেই এ সমস্যার সমাধান চায়।’
শেয়ারবাজার/ও/সা/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.