ফল নির্ধারক হতে পারে ৩৮ হাজার নতুন ভোটার
শেয়ারবাজার ডেস্ক: কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান দু’দল ছুটে চলেছে ভোটারের দ্বারে দ্বারে। বিশেষত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুমান সুলতানা সীমা ও বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পদে জয় পেতে জনসংযোগে নেমে গেছেন আটঘাট বেঁধে। তবে সারা দেশেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা এই নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে নতুন ভোটাররা।
বিষয়টি মাথায় রেখেই এই ৩৮ হাজার নতুন ভোটারের মন জয় করতে তৎপর দুই মেয়র প্রার্থী। কুসিক নির্বাচন ঘিরে কুমিল্লার রাজনীতির মাঠ পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। চায়ের দোকান থেকে অফিস-আদালত, হাট- বাজার থেকে বাসাবাড়ি সর্বত্র এক আলোচনা মেয়রের চেয়ারটিতে কে বসবেন।
পুরনোদের পাশাপাশি তরুণ ভোটাররাও হিসাব কষছে ভোটের ময়দানের। আর মাত্র ১৫ দিন পর ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে কুসিক নির্বাচন। তরুণ প্রজন্মের ৩৮ হাজার নতুন ভোটারের ওপরও অনেকটা নির্ভর করছে। এদের মধ্যে গৃহবধূ, কলেজ শিক্ষার্থী ও যুবকরা রয়েছে।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, গত নির্বাচনে কুসিকের ভোটার ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ১৭৪ জন। এবারে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জনে। এবার ৩৮ হাজার ৩৯২ জন বাড়তি ভোটার এই প্রথমবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে। তরুণ প্রজন্মের ৩৮ হাজারের বেশি ভোটার জীবনের প্রথম ভোট দিতে কেন্দ্রমুখী হবেন এটাই স্বাভাবিক।
তরুণ প্রজন্মের এসব নতুন ভোটার খুশি মনেই ভোট দেবেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে। কিন্তু তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে টেনশনে পড়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কেননা ৩৮ হাজার নতুন ভোটারের সিদ্ধান্ত পাল্টে দিতে পারে সব হিসাব-নিকাশ। এবারের কুসিক নির্বাচনে বাড়তি ৩৮ হাজার ভোটারই হলো তরুণ প্রজন্মের। যাদের অধিকাংশই আধুনিক, রুচিশীল এবং তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত।
আওয়ামী লীগের সীমা ও বিএনপির সাক্কু দু’জনই এ নির্বাচনে দলীয় হেভিওয়েট প্রার্থী। দুই দলের নেতাকর্মীরাই মরিয়া হয়ে উঠেছেন দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে হারিয়ে সাক্কু নবগঠিত সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। এবার বিজিত ওই প্রার্থীর কন্যাই সাক্কুর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী। তার ওপর এবার দলীয় প্রতীকের নির্বাচন।
আর তাই এবারের নির্বাচনে বড় হয়ে দেখা দেবে দলীয় প্রতীকের বিষয়টি। আর তাই দল ও প্রার্থীদের কাছে নতুন ভোটারের কদর অনেক বেশি হয়ে দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নতুন ভোটারদের ভোট টানার লক্ষ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে নতুন ভোটারদের ভোট পেতে সরাসরি তাদের সঙ্গে দেখা, তাদের অভিভাবকদের অনুরোধ এবং দলের ছাত্র-যুব নেতাদের মাঠে নামিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর নির্বাচনী কর্মকৌশল নির্ধারকরা।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের মাস্টার্সের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আলেয়া বেগম বলেন, ‘এবারই প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। অন্য রকম এক অনুভূতি নিয়ে ৩০ মার্চ ভোটের দিনের অপেক্ষায় আছি। কাকে ভোট দেব, তা এখনো ঠিক করিনি। তবে অসহায় মানুষের আয়ের ব্যবস্থা করবেন, যানজট নিরসন, জলাবদ্ধতা, নিরসনে ব্যবস্থা নেবেন এমন একজনকেই মেয়র হিসেবে বেছে নেব।’
অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র কাউসার আহমেদ অমি বলেন, ‘সঠিক জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার মাধ্যমে নগরের উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার
সুযোগকে কাজে লাগাতে চাই। নগরের যানজট নিরসন ও বিনোদনকেন্দ্র গড়তে পারবেন এমন একজনকেই মেয়র হিসেবে দেখতে চাই।’ আলেখা, অমি ও মারুফ এর মতো ৩৮ হাজার নতুন ভোটারের ভাবনায়ও এখন কুমিল্লা সিটি নির্বাচন।
অনেকেই এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র না পেলেও নতুন ভোটার হিসেবে সিটির উন্নয়নে অংশীদার হতে পেরে তারা উচ্ছ্বসিত। এই বিশাল তারুণ্য প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে।
এ ধরনের নতুন ভোটারদের অনেকেই জানান, নগরীতে সিটি কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রিত আগের পৌরপার্ক (নগর শিশু উদ্যান) ছাড়া ভালো মানের কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। নেই খেলাধুলার মাঠ। নেই দম ফেলার মতো খোলা জায়গা। তরুণ-কিশোররা ঈদগাহে খেলাধুলার চর্চা করে।
প্রাচীন শহর নগরে রূপ পেয়েছে। কিন্তু নাগরিক সুবিধার ছিটেফোঁটা নেই। নতুন ও আগামী প্রজন্মের জন্য এসবের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া চলছে স্বাচ্ছন্দ্য নাগরিক জীবন গঠনে এবং পাড়া- মহল্লায় সন্ত্রাস, মাদকের ভয়াবহতা রোধে যে প্রার্থী প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হবেন তিনিই তরুণ প্রজন্মের ভোট টানতে পারবেন।
বিশিষ্টজনদের মতে, নতুন ভোটারদের বেশির ভাগই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এছাড়াও তরুণ চাকরিজীবী, নববধূও রয়েছেন। তাদের কাছে দলীয় প্রতীকের বিষয়টি যেমন গুরুত্বের তেমনি হেভিওয়েট দুই প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর আফজল কন্যা সীমা ও সাবেক মেয়র সাক্কুর ব্যক্তি ইমেজের বিষয়টিও কম গুরুত্বের নয়। তারা নতুন ভোটার।
তাই আগামীদিনে যে প্রার্থী তরুণ প্রজন্মের সুবিধার দিকগুলো নিয়ে কথা বলবেন, বাস্তবায়নের আশ্বাস দেবেন, নাগরিক সুবিধার প্রতিফলনের জায়গাটি সমৃদ্ধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন এমন প্রার্থীই নতুন ভোটারের ভোট টানতে পারবেন। এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের প্যারামিটারও বলা যায় এসব নতুন ভোটারদের। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন যাত্রা শুরুর পর এটি দ্বিতীয় ভোট। আর দলীয় প্রতীকে আগামী ৩০ মার্চ ভোট হচ্ছে যাচ্ছে।
তবে দলীয় প্রতীককে বড় করে দেখছে না অনেক নতুন ভোটার। অনেকেই বলছেন, মেয়র প্রার্থীরা কে কোন দলের তা বিবেচনায় না নিয়ে কুমিল্লা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন এমন ব্যক্তিকেই বেছে নিতে চান তাঁরা।
মনিরুল হক সাক্কু বলেন, কেন্দ্রীয় অনেক নেতৃবৃন্দ ও ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ কুমিল্লায় আসবেন। আমি চাই আমাদের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও একবার যেন কুমিল্লায় ঘুরে যান। আমি তার কাছে যাবো। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করেন। এ ছাড়া দলীয় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কুমিল্লায় আসবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। আওয়ামীলীগের আভ্যন্তরিন কোন্দল সাক্কুর জয়ের জন্য সহায়ক করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেই সাখে তিনি মনে করেন তাদের কোন্দলে তিনি সুফল পেলে তো তার কিছু করার নেই। এতে লাভই আছে।
মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আওয়ামীলীগের কেউ কেউ তাদের স্বার্থে যদি আমাকে ভোট দেয় তো আমার কি করার আছে। আওয়ামীলীগের ভোট দিয়ে আমরা পাশ করবো এটা ভাবার কোন কারণ নেই। বিএনপি এককভাবেই নিজস্ব শক্তিতে বলিয়ান।
অপরদিকে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমার পক্ষে কেন্দ্র থেকে একের পর এক টিম আসছেন। এ টিম চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন এলাকা। করছেন মতবিনিময় সভা। বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো: আবু কাওছারের নেতৃত্ব দেড়শতাধিক মাইক্রোবাসে করে নেতাকর্মীরা ঢাকা থেকে কুমিল্লায় এসেছেন। তার দলীয় কার্যালয়ে যৌথ কর্মী সভা করেছেন।
স্থানীয় নেতাকর্মীরাও ব্যাপক শো ডাউন করেছেন। শুক্রবার আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও পূণর্বাসন সম্পাদক সুজিত রায় নন্দি কুমিল্লার রেইসকোর্স ও রাজাপাড়ায় মতবিনিময় সভা করেছেন। কুমিল্লায় রবিবার এসেছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। এছাড়া সার্বক্ষনিক কাজ করে যাচ্ছেন আওয়ামীলীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম। স্থানীয় নেতাদের সাথে সমন্বয়ের কাজটি তিনি করে যাচ্ছেন নীরবে ও সরবে।
আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমা বলেছেন, আমাদের মধ্যে মননালিন্য থাকতে পারে । কিন্তু নৌকার প্রশ্নে তো সবাই এক। এ নিয়ে তো কারো কোন বিরোধ নেই। নৌকার বাইরে তো কেউ না। ১৫ মার্চের পর দেখবেন কুমিল্লা আওয়ামীলীগের সকল নেতাকর্মী একসাথে কাজ করবেন। আর সবচেয়ে বড় কথা মানুষ পরিবর্তন চায়। ৩০ তারিখের জন্য এখন অপেক্ষা।
শেয়ারবাজারনিউজ/মু