আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৬ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি: সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারবে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ

BSECশেয়ারবাজার রিপোর্ট: শেয়ারবাজারে লেনদেনে ক্লিয়ারিং ও সেট্‌লমেন্ট এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলাদা কোম্পানি গঠনের খসড়া বিধিমালা প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। খসড়ায় বলা হয়েছে ক্লিয়ারিং ও সেট্‌লমেন্ট কোম্পানি বা সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি শীর্ষক কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ শেয়ার সম্মিলিতভাবে ধারণ করতে পারবে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ। তবে কোন প্রতিষ্ঠানই এককভাবে ৪৯ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না।

তবে এক্সচেঞ্জগুলো এককভাবে ন্যুনতম ২৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করলে সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি নিবন্ধনের জন্য অযোগ্য হবে।

৫ এপ্রিল মঙ্গলবার বিএসইসি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি) বিধিমালা, ২০১৭ এর খসড়া প্রকাশ করেছে। আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে এর উপর মতামত দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ট্রেকহোল্ডারদের আহবান করা হয়েছে। তাদের মতামত পর্যালোচনা করে বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

সিকিউরিটিজ, বন্ড, ডেরিভেটিভস প্রডাক্টস লেনদেন সুবিধা সহ সেবাটি আরো দ্রুত ও স্বচ্ছতা আনতে আলাদা ক্লিয়ারিং এন্ড সেট্লমেন্ট কোম্পানি বা সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি গঠন করা হচ্ছে।

খসড়া বিধিমালায় সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি গঠন কাঠমোয় বলা হয়েছে, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি ডিমিউচুয়ালাইজড আকারে গঠন হবে অর্থাৎ এর মালিকানা থেকে অংশগ্রহনকারী পৃথক থাকবে।

পরিশোধিত মূলধন এবং নীট সম্পদ বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি এর ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হবে ৫০০ কোটি টাকা এবং সার্বক্ষণিক নীট সম্পদ হবে পরিশোধিত মূলধনের কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ। তবে কমিশন সময়ে সময়ে নির্ধারিত ঝুঁকি ভিত্তিক (risk based) মূলধন পর্যাপ্ততা সংরক্ষণ করতে হবে।

যেসব প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টির শেয়ারহোল্ডার হতে পারবেন তাদের শেয়ার ধারণ বিষয়ে খসড়া বিধি মালায় বলা হয়েছে, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টির মোট ইস্যুকৃত এবং পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ শেয়ার এক্সচেঞ্জসমূহ যৌথভাবে ধারণ করতে পারবে; তবে, কোন এক্সচেঞ্জ এককভাবে ৪৯ শতাংশের বেশী শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সেন্ট্রাল ডিপজিটরি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ার যৌথভাবে অথবা এককভাবে ধারণ করতে পারবে।

সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ার ব্যাংকগুলো যৌথভাবে ধারণ করতে পারবে; তবে, কোন ব্যাংক এককভাবে ২ শতাংশের বেশী শেয়ার ধারণ করতে পারবে না; ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম করা হয়েছে।

এদিকে  কৌশলগত বিনিয়োগকারী একক বা যৌথভাবে সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টির মোট ইস্যুকৃত এবং পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারবে।

বিধিমালায় কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘কৌশলগত বিনিয়োগকারী’ অর্থ বৈদেশিক কোন প্রতিষ্ঠান যা সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি অথবা এক্সচেঞ্জ অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত কার্যক্রমে নিয়োজিত এবং যার বিনিয়োগের মাধ্যমে সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টির কার্যক্রম পরিচালনায় অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা নিশ্চিত হবে।

সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টির পরিচালনা পর্ষদে শেয়ার ধারক পরিচালক, স্বতন্ত্র পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সমন্বয়ে গঠিত হবে, এবং পর্ষদের সদস্য সংখ্যা হবে ১১ জন। এর মধ্যে   ৬ জন স্বতন্ত্র পরিচালক। তবে সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টির প্রথম পরিচালনা পর্ষদের স্বতন্ত্র পরিচালক কোন প্রস্তাবনা ছাড়াই কমিশন নিয়োগ দিবে। এছাড়া শেয়ারহোল্ডার এক্সচেঞ্জগুলোর পরিচালনা পর্ষদ মনোনীত দুই জন পরিচালক; অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারদের মনোনীত বা নির্বাচিত দুই জন পরিচালক, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ পরবর্তীতে এক জন পরিচালক কৌশলগত বিনিয়োগকারীর মনোনীত বা নির্বাচিত হবেন। পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভায় স্বতন্ত্র পরিচালকগণের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হবে।

পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ প্রসঙ্গে খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, একজন পরিচালক পরপর দুই মেয়াদের বেশি নির্বাচিত হবেন না। তবে একটি মেয়াদ বাদ দিয়ে পুনরায় নির্বাচিত হতে পারবেন। স্বতন্ত্র পরিচালকের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, একজন স্বতন্ত্র পরিচালক তিন বছর মেয়াদের জন্য মনোনীত হতে পারবেন এবং সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টির বোর্ডের সুপারিশক্রমে এবং কমিশনের অনুমোদনক্রমে আরও একটি মেয়াদের জন্য নবায়ন করা যেতে পারে। তবে, তারপর একটি মেয়াদ বাদ না দিয়ে পরবর্তীতে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে মনোনয়নের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না।

তবে কোন অংশগ্রহণকারী অথবা তার কোন প্রতিনিধি সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টির পরিচালক হতে পারবে না। অংশগ্রহণকারী বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, ‘অংশগ্রহণকারী’ অর্থ ক্লিয়ারিং ও সেট্‌লমেন্ট পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করার জন্য নিবন্ধন অথবা অনুমতি প্রাপ্ত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান।

ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষেত্রে বিধিমালায় বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর হবে। তবে সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টির বোর্ডের সুপারিশক্রমে ও কমিশনের অনুমোদনক্রমে আরও একটি মেয়াদের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারবেন।

ব্যবস্থাপনা পরিচালকের যোগ্যতায় বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইও হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি কোন স্টক এক্সচেঞ্জের, স্টক এক্সচেঞ্জের কোন সদস্যের, কোন সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানির, কোন ইস্যুয়ার কোম্পানির, সিকিউরিটিজ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনভাবেই জড়িত থাকতে পারবেন না। একই সঙ্গে তিনি কোন মার্চেন্ট ব্যাংকারের শেয়ারহোল্ডার, উদ্যোক্তা, পরিচালক হিসাবে থাকতে পারবেন না।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, নিবন্ধন সনদ ও ব্যবসা চালুকরণ সনদ ব্যতিত ক্লিয়ারিং ও সেট্লমেন্ট কার্য্ক্রম পরিচালনা নিষিদ্ধ। আর এই বিধিমালা কার্যকর হওয়ার পর কমিশন থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি হিসাবে নিবন্ধন সনদ গ্রহন করতে হবে।

নিবন্ধন সনদের মেয়াদ ও নবায়ন বিষয়ে বলা হয়েছে, নিবন্ধন সনদের মেয়াদ হবে প্রদানের তারিখ থেকে পাঁচ বছর। প্রতি পাঁচ বছরে সনদ নবায়ন করা যাবে। নিবন্ধন সনদের বার্ষিক ফি প্রত্যেক হিসাব বছরের সমাপ্তির তিন মাসের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা পে-অর্ডার অথবা ব্যাংক ড্রাফ্টের মাধ্যমে কমিশন বরাবরে জমা করতে হবে।

বিধিমালায় আরো বলা হয়েছে, প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর সকল প্রকার সিকিউরিটিজ লেনদেনের সম্মিলিত অবস্থান পর্যবেক্ষণ এবং কোন ধরণের ত্রূটি-বিচ্যুতির ক্ষেত্রে সংশোধন অথবা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা (একাউন্ট ফ্রিজিং বা  সাসপেনশন) গ্রহণ করতে পারবে সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি।

বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি এবং ঝুঁকির বিপরীতে ক্ষতিপূরণের জন্য সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি ‘সেট্‌লমেন্ট গ্যারান্টি ফান্ড’ ও ‘ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ড’  গঠন করবে।

ট্রেডিং (Trading) অংশগ্রহণকারী বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, কেবল মাত্র স্টকব্রোকার বা স্টক ডিলারগণ এই শ্রেনীর অংশগ্রহণকারী হতে পারবে। তারা শুধুমাত্র নিজেদের গ্রাহকদের লেনদেনের ক্লিয়ারিং ও সেট্‌লমেন্ট করতে পারবে। প্রত্যেক ট্রেডিং অংশগ্রহণকারীর লেনদেন সীমা সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি নির্ধারণ করবে।

ক্লিয়ারিং (Clearing) অংশগ্রহণকারী: কেবল মাত্র উচ্চ নীট সম্পদ (high net worth) সম্বলিত প্রতিষ্ঠান, যার সকল প্রকার সেট্‌লমেন্ট ঝুঁকি বহন করার পর্যাপ্ত ক্ষমতা রয়েছে তারাই এই শ্রেণীর অংশগ্রহণকারী হতে পারবে। ক্লিয়ারিং অংশগ্রহণকারীগণ লেনদেনের তথ্য ও রেকর্ড রেজিষ্টারভূক্ত করবে এবং চুক্তিসমূহের ক্লিয়ারিং করবে। কোন ক্লিয়ারিং অংশগ্রহণকারী তার নিজের এবং গ্রাহকদের পাশাপাশি তার সাথে চুক্তিবদ্ধ অন্যান্য ব্যক্তির লেনদেনের ক্লিয়ারিং ও সেট্‌লমেন্ট করতে পারবে। ক্লিয়ারিং অংশগ্রহণকারীর ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হবে এক কোটি টাকা।

সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি, লেনদেনের ক্লিয়ারিং ও সেট্লমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য ও উপাত্ত অন্তত ২টি ভিন্ন স্থানে ন্যূনতম ১২ বছর সংরক্ষণ করবে।

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.