আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৯ অগাস্ট ২০১৭, শনিবার |

kidarkar

মানসম্পন্ন আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করা প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারের সর্বোচ্চ মূল্য দেয়া উচিত: আইসিএবি সভাপতি

icabশেয়ারবাজার রিপোর্ট: আইসিএবির সভাপতি আদিব হোসেন খান বলেন, মানসম্পন্ন আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করা প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ সুবিধা, শেয়ারের সর্বোচ্চ মূল্য এবং কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই কর পরিশোধের সুবিধা দেয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আইসিএবি মিলনায়তনে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) কর্তৃক আয়োজিত ‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং ওভারসাইট: গ্লোবাল প্র্যাকটিস অ্যান্ড বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে আদিব হোসেন এমন কথা বলেন। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রঞ্জন কুমার মিত্র। ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সি কিউ কে মোস্তাক আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।

আদিব হোসেন খান বলেন, আর্থিক প্রতিবেদনের মানোন্নয়নের জন্য যেকোনো পদক্ষেপকে আইসিএবি স্বাগত জানাবে। মানসম্পন্ন আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসিরও দায়িত্ব রয়েছে। নির্ভুল ও স্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন নিশ্চিত করতে এফআরসি একটি কার্যকর সংস্থা হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি।

সেমিনারে আর্থিক প্রতিবেদন তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক অনুশীলন এবং বাংলাদেশের একটি পর্যালোচনামূলক চিত্র তুলে ধরে ড. রঞ্জন কুমার মিত্র বলেন, ঐতিহ্যগতভাবেই হিসাববিদ্যা একটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত পেশা। এক্ষেত্রে পেশাদার হিসাববিদদের নিজস্ব সংস্থাই তাদের সদস্যদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণ থেকে শুরু করে পেশাগত নৈতিকতা ও কমপ্লায়েন্সের বিষয়গুলো দেখে থাকে। মূলত বিশ্বব্যাপী কিছু আলোচিত স্ক্যান্ডালের কারণে হিসাববিদদের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার পরই এমন স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এখনো বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই হিসাববিদদের স্বতন্ত্র তত্ত্বাবধানকারী সংস্থা গড়ে ওঠেনি। ১৯৫টি দেশের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম অব ইনডিপেনডেন্ট অডিট রেগুলেটরসের (আইএফআইএআর) সদস্য দেশ মাত্র ৫৫টি।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশেই এফআরসি রয়েছে উল্লেখ করে প্রবন্ধে বলা হয়, ২০০৩ সালে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং নিয়ে বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অন অবজারভেন্স অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড কোডসে (আরওএসসি) এফআরসি গঠনের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে উঠে আসে। এ প্রতিবেদনে জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর (পিআইই) আর্থিক প্রতিবেদন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখার জন্য একটি স্বাধীন তত্ত্বাবধানকারী সংস্থা গঠনের সুপারিশ করা হয়। বাংলাদেশে ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর তা বাস্তবায়নে গত বছর ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) নামে একটি সংস্থা গঠন করা হয়েছে। তবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের এফআরসিতে পেশাদার হিসাববিদের আধিক্য দেখা গেলেও বাংলাদেশে এর ব্যতিক্রম। মোট ১২ সদস্যের কাউন্সিলে মাত্র দুজন পেশাদার হিসাববিদ ও ছয়জনই সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় এর কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

আর্থিক খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি আরো বলেন, আইসিএবি ও বিএসইসি ছাড়া অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা— যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক, আরজেএসসি, আইডিআরএ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের সক্ষমতা শক্তিশালী করার কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে এফআরসি গঠন করেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব হবে না। তবে বাংলাদেশের এফআরসির একটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে, এতে শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে, যা বিশ্বের অন্য কোথাও নেই। সম আয়তনের অর্থনীতির দেশগুলো কিংবা প্রতিবেশীদের এফআরসির তুলনায় যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশি সাদৃশ্য রয়েছে।

এফআরসিতে পেশাদার হিসাববিদ কম থাকার প্রসঙ্গ তুলে চেয়ারম্যান সি কিউ কে মোস্তাক আহমেদ বলেন, কাউন্সিলের মূল সদস্যের বাইরে এর মধ্যে অনেক পেশাদার হিসাববিদ যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। ফলে এখানে সরকারি কর্মকর্তাদের আধিক্য কাউন্সিলের মূল কাজে সমস্যা হবে না।

এফআরসি গঠনের উদ্দেশ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থ রক্ষা ও সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করে এফআরসি গঠন করা হয়েছে। এটি নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে, তবে এর কার্যক্রম নতুন কিছু নয়। অন্যায় করলে যেকোনো পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আসতে হবে। তবে এফআরসি কোনো বিচারিক সংস্থা না হওয়ায় নিরীক্ষা ও বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনায় ঝুঁকির বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।

আইসিএবির সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে এফআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আইসিএবি প্রণীত বিভিন্ন অ্যাকাউন্টিং ও অডিটিং স্ট্যান্ডার্ডস এবং এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন ম্যানুয়াল আমরা দেখেছি। জনস্বার্থ রক্ষা ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার জন্য গঠনমূলক কর্মপরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে এফআরসি ও আইসিএবি একসঙ্গে কাজ করবে।

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.