টেনিস ছেড়ে ক্রিকেটেই সফল হ্যান্ডসকম্ব
শেয়ারবাজার ডেস্ক: সিম্ভাবনার অনেক অঙ্কই মেলানো যায় না পিটার হ্যান্ডসকম্বের জীবনের ইনিংসে। মা-বাবা ব্রিটিশ, সেই সূত্রে নিজে বহন করেন ব্রিটিশ পাসপোর্ট। ইংল্যান্ডে কাউন্টিও খেলেছেন লম্বা সময়। কিন্তু হ্যান্ডসকম্ব ক্রিকেটটা খেলছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। ইংল্যান্ডের বাইরে জন্মানো অনেকেই মা-বাবা সূত্রে ব্রিটিশ জাতীয়তা নিয়ে ইংল্যান্ড দলে খেলেছেন; এমনকি অধিনায়কও হয়েছেন! হ্যান্ডসকম্ব কিনা বেছে নিলেন ক্রিকেটে ইংরেজদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষকেই। এখানেই শেষ নয়। ছোটবেলায় হ্যান্ডসকম্ব ছিলেন টেনিস খেলোয়াড়, জুনিয়র টেনিস টুর্নামেন্টগুলোতে বাছাই হিসেবেই খেলেছেন। তাঁর সমসাময়িক ছিলেন বার্নার্ড টমিচ। তবে শেষ পর্যন্ত ফোরহ্যান্ড, ব্যাকহ্যান্ডের জগৎ ছেড়ে কভার ড্রাইভ, স্কয়ার কাটের জগত্টাই বেছে নিয়েছিলেন পিটার হ্যান্ডসকম্ব। এখনো টেনিসের প্রতি ভালোবাসাটা থাকলেও জানালেন, ক্রিকেটার হয়ে কোনো আক্ষেপ নেই তাঁর।
গত নভেম্বরে টেস্ট অভিষেক।
জীবনের প্রথম টেস্টেই হ্যান্ডসকম্ব দেখেছেন ফ্লাডলাইট আর গোলাপি বল, একে তো অভিষেক টেস্টের উত্তেজনা, তার ওপর আবার এই অনভ্যস্ততা! ফলটা খুব খারাপ হতেই পারত। হয়নি, বরং হাফসেঞ্চুরি করে দেখিয়েছেন নিজের সামর্থ্য। পরের টেস্টে ব্রিসবেনে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি, মেলবোর্নে পরের টেস্টে প্রথম ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি আর দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি। তবে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসটা খেলেছেন রাঁচিতে, ভারতের বিপক্ষে। ২০০ বল খেলে ৭২ রানে অপরাজিত থেকে দলের হার এড়িয়ে ড্র করেন টেস্টটা। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার ঘূর্ণিবলের বিপক্ষে অমন জেদি লড়াকু ইনিংসটাই হ্যান্ডসকম্বকে চেনায় নতুন করে। মাত্র আট টেস্ট খেলেই দলের নিয়মিত মুখ বনে গেছেন হ্যান্ডসকম্ব, তবে ক্রিকেটে ব্যস্ত হলেও কমেনি টেনিসের প্রতি ভালোবাসা, ‘আমি খানিকটা টেনিস খেলতাম, তবে বার্নার্ড টমিচের মতো অত ভালো নয়। ছোটবেলায় টেনিস খেলাটা ছিল ভারি মজার। আসলে টেনিস ছেড়ে ক্রিকেটার হওয়ার সিদ্ধান্তটা আপনাতেই হয়ে যায় যখন দেখি টেনিসে খুব বেশি ম্যাচ জিততে পারছি না। এর চেয়ে আমার পক্ষে ব্যাট হাতে কিছু রান করাটাই সহজ। তবে এখনো সময় পেলে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন দেখি। ’ সুইস কিংবদন্তি রজার ফেদেরারই হ্যান্ডসকম্বের প্রিয় টেনিস তারকা আর প্রিয় ক্রিকেটার ছিলেন ডেমিয়েন মার্টিন। শেষ পর্যন্ত মার্টিনের পদরেখাই অনুসরণ করলেন হ্যান্ডসকম্ব, অল্পদিনেই অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারে আস্থাশীল হয়ে উঠেছেন বছর ছাব্বিশের এই তরুণ।
প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে এসেছেন হ্যান্ডসকম্ব, টেস্টে মাঠে নামার আগে ভেস্তে গেছে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচটাও। উইকেট, কন্ডিশন সব কিছু নিয়েই অন্যদের মতো অন্ধকারে হ্যান্ডসকম্ব, তবে মনে করছেন দেশে যথেষ্ট প্রস্তুতি সেরেই এসেছেন তাঁরা, ‘প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা হোক কিংবা না হোক, আমরা যে অপ্রস্তুত হয়ে মাঠে নামব এমনটা একদমই নয়। ডারউইনে আমাদের প্রস্তুতি ম্যাচ ভালো হয়েছে। বিসিবি অনেক চেষ্টা করছে মাঠ ঠিক করার। তা ছাড়া আবহাওয়াও একটা ব্যাপার। যাই হোক, সবাই তৈরি হয়েই মাঠে নামবে। ’
বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে; কোনো ক্রিকেটই খেলা হয়নি হ্যান্ডসকম্বের। তিনি একা নন, অনেকেরই উপমহাদেশে প্রথম সফর বা এখানে খেলার অভিজ্ঞতা কম। এই ব্যাপারটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন, ‘অন্য অনেকের মতো আমাদের উপমহাদেশে খেলার খুব বেশি অভিজ্ঞতা নেই। রেনশ আর আমি ভারতে দুটি টেস্ট খেলেছিলাম, সেই অভিজ্ঞতাটা কাজে দেবে। খুব বেশি না খেলার একটা ভালো দিক হচ্ছে, তাতে করে বলের বাঁক নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তাও হয় না। বল কতটা ঘুরবে এসব নিয়ে না ভেবে একটু বেশি স্বাধীনতা নিয়েও খেলা যায়। ’ প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ সম্পর্কেও স্বচ্ছ ধারণা নিয়েই প্রথমবার ঢাকায় পা রেখেছেন হ্যান্ডসকম্ব, ‘আমরা সবাই জানি যে নিজেদের কন্ডিশনে গোটা বাংলাদেশ দলই খুব শক্তিশালী। গত সপ্তাহে দলীয় বৈঠকে গোটা বাংলাদেশ দল নিয়েই আলোচনা হয়েছে, আমরা চেষ্টা করছি তাদের দুর্বলতা খুঁজে বের করার। দেখা যাক কত দূর কী হয়। ’
ছোটবেলার একটা টেনিস টুর্নামেন্টের বর্ণনা দিতে গিয়ে হ্যান্ডসকম্ব বলেছিলেন, ‘টমিচ ছিল আমার দুই বছরের ছোট। আসরে সে-ই ছিল ফেভারিট। আমি শেষ ষোলোর বেশি উঠতে পারিনি। ’ ব্যাট না ধরে র্যাকেট আঁকড়ে থাকলেও হয়তো বেশি দূর যাওয়া হতো না হ্যান্ডসকম্বের। তবে ক্রিকেটে অল্পদিনেই বিরল একটা রেকর্ডের মালিক বনে গেছেন। ক্রিকেটের এত বছরের ইতিহাসে এমনটা হ্যান্ডসকম্বই প্রথম ব্যাটসম্যান, যাঁকে ক্যারিয়ারের প্রথম সাত টেস্টে ৫০ রানের নিচে কখনো আউট করা যায়নি!
শেয়ারবাজারনিউজ/মু