আজ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৪ অগাস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

কোম্পানির পরিচালকদের বিরুদ্ধে এফআরসি চেয়ারম্যানের হুশিয়ারি

icmabশেয়ারবাজার রিপোর্ট: কারসাজি করে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির জন্য কোন কোম্পানির পরিচালক অনৈতিক চাপ প্রয়োগ কিংবা সংশ্লিষ্ট হিসাব কর্মকর্তাকে কোন প্রকার হুমকি দেয়ার অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট পরিচালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান সি কিউ কে মোস্তাক আহমেদ।

গতকাল (২৩ আগস্ট) দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) আয়োজিত ‘আর্থিক প্রতিবেদন আইন: পেশাদার হিসাব রক্ষকদের ভূমিকা এবং দায়িত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফআরসি’র চেয়ারম্যান এমন হুশিয়ারি দেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নিয়ম মেনে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির জন্য আইসিএমএবি’র মেম্বারদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইসিএমএবি’র প্রেসিডেন্ট জামাল আহমেদ চৌধুরী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সেলিম, আইডিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান, বিএসইসি’র কমিশনার স্বপন কুমার বালা প্রমূখ।

সেমিনারে নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. নিখিল চন্দ্র শিল।

সেমিনারে প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন মেম্বার বলেন, আইসিএমএবি’র অধিকাংশ মেম্বার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। অনেক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ আর্থক প্রতিবেদনে কারসাজি করার জন্য অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেন এমনকি চাকরিচ্যুত করার হুমকিও দেন। এমন অবস্থায় আইন মেনে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে একজন প্রধান অর্থ কর্মকর্তার সুরক্ষা কোথায়?

এর প্রেক্ষিতে এফআরসি’র চেয়ারম্যান বলেন, এফআরসি’র আইনে করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আওতায় এফআরসি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারে। তিনি আইসিএমএবি’র মেম্বারদের উদ্দেশ্যে বলেন, তালিকাভুক্ত কিংবা তালিকা বহির্ভুত কোম্পানির পরিচালকরা এমন অনৈতিক কাজ করলে আপনারা এফআরসি’র কাছে অভিযোগ জানাবেন। এফআরসি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। কয়েকটি পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে এমন অনৈতিক কার্যকলাপ অনেকাংশেই কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আপনারা আইন মেনে কাজ করবেন। আপনাদের সুরক্ষা এফআরসি দিবে।

এ প্রসঙ্গে বিএসইসি’র সাবেক কমিশনার ও আইডিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বলেন, পরিচালকদের এমন অনৈতিক কার্যকলাপের সাধারণত কোন তথ্য প্রমাণ থাকেনা। তাই এমন অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ করা খুবই কঠিন। আর এসব অবৈধ কাজ রাতারাতি বন্ধও হবে না। তাই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। আর এসব অবৈধ কার্যক্রম বন্ধের জন্য আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে এফআরসি’র চেয়ারম্যান বলেন, এফআরসি’র কাজ প্রথমে চোর ধরা নয়। আমাদের প্রধান কাজ আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির মানদন্ড নির্ধারণ করা। সংসদে অ্যাক্ট পাশ হয়েছে। এখন আমাদের প্রধান কাজ এফআরসি’র কার্যক্রম শুরুর জন্য অ্যাক্টের অধীনে আইন প্রণয়ন করা। যাতে এফআরসি’র জনবল নিয়োগ এবং তারা কিভাবে কাজ করবে তা নির্ধারণ হয়। আর এ কাজ আমরা আপনাদের নিয়েই করবো।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে অনেক নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে। তাদের কাজও আইন দ্বারা নির্দিষ্ট রয়েছে। এফআরসি এমন একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাছাড়া এফআরসি’র আইনে জেল জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে আমাদের অন্য আইনেও জেল জরিমানার বিধান রয়েছে। তাই সেটা কোন সমস্যা হবেনা। তাছাড়া আপনাদের অনৈতিক কাজের জন্য সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায় আপনাদেরকেই নিতে হবে। এর জন্য শাস্তিও পেতে হবে।

এফআরসি’র প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকায় আমাদের মতো সঞ্চয় পত্র নেই। সেখানে ব্যাংকের সুদহার প্রায় শূণ্যই বলা চলে। সেখানকার বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন। তাই সেখানে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন অনেক শক্ত। আমরাও এফআরসি গঠনের মাধ্যমে শুরু করেছি। আমাদের দেখতে হবে শেয়ারবাজারে কারা বিনিয়োগ করছেন। আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি বেকার এবং কোন কিছু করতে না পারা মানুষেরাই শেয়ারবাজারে বেশি আসছেন। শিক্ষিত এবং মধ্যবিত্তের অংশগ্রহণ এখানে অনেক কম। এফআরসি’র কারণে আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা তৈরি হবে। এতে সাধারণ মানুষ শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থা পাবেন। এছাড়া আমাদের দেশে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। তবে বিভিন্ন অস্বচ্ছতার কারণে তাদের অনেকেই ফেরত চলে যায়। এসব ক্ষেত্রে এফআরসি স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা দিতে পারবে।

আইসিএমএবি’র প্রেসিডেন্ট জামাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, সারা বিশ্বে সবচেয়ে দামি প্রশ্ন হচ্ছে নিরীক্ষকের নিরীক্ষা করবে কে? নিরীক্ষককেই নীতির চর্চা করতে হবে। স্বচ্ছতা ও সুশাসনই একটি কোম্পানিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আইসিএমএবি কিংবা আইসিএবি’র সনদ প্রাপ্ত হতে হবে।

আরিফ খান বলেন, আর্থি প্রতিবেদনে নিরীক্ষকের পাশাপাশি কোম্পানির সিইও, সিএফও, চেয়ারম্যান পরিচালকদের স্বাক্ষর করতে হবে। কারণ অন্যায়ের দায় সবাইকেই নিতে হবে। আমেরিকায় এ বিষয়ে আইন রয়েছে।

সেমিনার নিবন্ধে নিখিল চন্দ্র শিল আর্থিক প্রতিবেদন আইনের বিভিন্ন দিক এবং পরিপালনের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.