আজ মহাষ্টমী: প্রধান আকর্ষণ কুমারী পূজা
শেয়ারবাজার ডেস্ক: দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ স্থাপন সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সপ্তমী পূজা। শারদীয় দুর্গোৎসবে আজ বৃহস্পতিবার (২৮ আগষ্ট) মহাষ্টমী।
মহাষ্টমী পূজার মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। দুর্গোৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ দিনে আজ কুমারী পূজা ও সন্ধি পূজা পালিত হবে। রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনসহ কয়েকটি স্থানে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বেলা ১১টার দিকে রামকৃষ্ণ মঠে অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা।
আজ মহাষ্টমীর সকালে দুর্গাদেবীর মহাষ্টমী বিহীত পূজা প্রশস্তা ও ব্রতোপবাস অনুষ্ঠিত হবে। ভক্তরা মায়ের চরণে দেবেন পুষ্পাঞ্জলী। মহাষ্টমীতে কুমারী বালিকার মধ্যে শুদ্ধ নারীর রূপ চিন্তা করে তাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করবেন ভক্তরা।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির, গোপিবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠসহ দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে আজ মহাসমারোহে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে দেবী জ্ঞানে পূজার কথা উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও দেবী জ্ঞানে পূজা করার বিধান রয়েছে। কুমারী পূজার বিষয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের কথামৃতে বলা হয়েছে, সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক স্বরূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর রূপ প্রকাশ পায় বেশি।
সব নারীতে মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার প্রধান লক্ষ্য। বয়সভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। শাস্ত্র মতে, একবছর বয়সে তাকে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কালিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাতে মালিনী, আটে কুব্জিকা, নয়ে অপরাজিতা, দশে কালসন্ধর্ভা, একাদশে রুদ্রাণী, দ্বাদশে ভৈরবী, ত্রয়োদশে মহালক্ষ্মী, চতুর্দশে পীঠনায়িকা, পঞ্চদশে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোড়শ বছরে অম্বিকা বলা হয়ে থাকে।
শাস্ত্রমতে নির্বাচিত কুমারীকে পূজার দিন স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। কপালে সিঁদুরের তিলক ও পায়ে আলতা দেয়া হয়। হাতে দেয়া হয় ফুল। কুমারীকে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে পূজা করা হয়। চারদিকে তখন মুখরিত হয় শঙ্খ, ঢাকের আওয়াজ, উলুধ্বনি আর মায়ের স্তুতিতে।
১৬টি উপকরণ দিয়ে কুমারী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস—এই পাঁচ উপকরণে দেওয়া হয় ‘কুমারী’ মায়ের পূজা। অর্ঘ্য প্রদানের পর দেবীর গলায় পরানো হবে পুষ্পমাল্য। কুমারী পূজা শেষে ভক্তরা মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি দেবেন।
ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের স্থিরাত্মানন্দ মহারাজ (নিরঞ্জন মহারাজ) জানান, আজ সকাল ১১টায় কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, যে জগৎমাতাকে (দেবী দুর্গা) আমরা আরাধনা করি তিনি সব নারীর মধ্যে মাতৃরূপে আছেন। এ উপলব্ধি সবার মধ্যে জাগ্রত করার জন্যই কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
দুর্গা মাতৃভাবের প্রতীক আর কুমারী নারীর প্রতীক। কুমারীর মধ্যে মাতৃভাব প্রতিষ্ঠাই এ পূজার মূল লক্ষ্য, বলেন স্থিরাত্মানন্দ মহারাজ।
কুমারী পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, দেবী দুর্গার সামনে বসিয়ে ঠিক যেভাবে তার (দুর্গার) আরাধনা করা হয়, একইভাবে কুমারীকে সে সম্মান দেয়া হয়। শুধু মাটির প্রতিমা নয়, নারীর মধ্যেও মাতৃভাব আনা হয়।
বিশুদ্ধ স্বভাবের গুণাবলি দেখে একজন নারীকে কুমারী হিসেবে নির্বাচিত করা হয় উল্লেখ করে মহারাজ বলেন, পূজার আগ পর্যন্ত কুমারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়।
এ ছাড়াও নির্বাচিত কুমারী পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন আচার-অনুষ্ঠান করতে পারে বলে তিনি জানান।
কুমারী পূজা ছাড়া আজ মহাষ্টমীতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বেলা একটা থেকে সারা দিন ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হবে। ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদিদের মধ্যেও প্রসাদ বিতরণ করা হবে। অন্য মন্দির ও মণ্ডপগুলোতেও পূজা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করা হবে।
এবার সারা দেশে ৩০ হাজার ৭৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৩৯৫টি।
রাজধানীতে এবার পূজা হচ্ছে ২৩১টি, গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২২৯টি। এ বছর দুটি বেড়েছে।
সবচাইতে বেশি পূজা হচ্ছে চট্টগ্রামে, ১ হাজার ৭৬৭টি। এর পরে দিনাজপুরে ১ হাজার ২৪২। আর গোপালগঞ্জে হচ্ছে ১ হাজার ১৭৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা।
শেয়ারবাজারনিউজ/মু