বীমা মেলায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকার দাবি পরিশোধের উদ্যোগ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: আগামী ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বিতীয়বারের মতো দুইব্যাপী বীমা মেলা। বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উদ্যোগে এ মেলা আয়োজন করা হয়েছে। আর এবারের মেলায় গ্রাহকদের ১৮ কোটি ৩৬ লাখ ১৫ হাজার টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করবে বীমা কোম্পানিগুলো।
আজ সোমবার আইডিআরএ কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী।
আগামী ২২ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় সিলেটের কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে মেলার উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। মেলা আয়োজনে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম এবং বীমা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
সংবাদ সম্মেলনে মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী জানান, এবারের বীমা মেলায় অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই বিভিন্ন বীমা গ্রাহকের ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৯ টাকার দাবি পরিশোধ করা হবে। পরে বিভিন্ন বীমা কোম্পানির স্টল থেকে আরও ১৩ কোটি ৭৯ লাখ ২৮ হাজার ১৬৭ টাকা পরিশোধ করা হবে। এছাড়াও ৬০ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৫০ টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করবে জীবন বীমা কপোর্রেশন।
মেলার উদ্বোধনের আগে ২২ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় সিলেট কোর্ট এলাকা থেকে কবি নজরুল অডিটোরিয়াম পর্যন্ত একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এবারের মেলায় সরকারী বীমা প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা কর্পোরেশন এবং সাধারন বীমা কর্পোরেশন অংশগ্রহণ করছে। এর পাশাপাশি ৩০টি বেসরকারী বীমা কোম্পানি (১৬টি লাইফ এবং ১৪টি নন-লাইফ) মেলায় অংশগ্রহণ করেছে।
সিলেটে মেলা আয়োজন প্রসঙ্গে আইডিআরএর সদস্য গোকুল চাঁদ বলেন, যেসব অঞ্চলে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর শাখা বেশি থাকে সেসব এলাকায় শিল্পায়ন বেশি হয়। সিলেটে শিল্পায়ন এখনো সেভাবে হয়নি। বেশিরভাগ সাধারণ বীমা কোম্পানির শাখা সিলেটে নেই। সে কারণেই এবার সিলেটে মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।
বীমা মেলায় নতুন বীমা কোম্পানিগুলোর স্টল কেন থাকছে না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে নতুন বীমা কোম্পানিগুলো তাদের শাখাগুলো ঢাকার বাইরে কার্যকম তেমনভাবে এখনো গড়ে তুলতে পারেনি। তাই তারা মেলায় এবার স্টক নিতে চাচ্ছে না। তবে আগামীতে তারা স্টল নিবে বলে আশা প্রকাশ করেছে।
আইডিআরের জনবলের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে গকুল চাঁদ দাস বলেন, দেশের জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান খুবই কম। মাত্র ০.৭ শতাংশ। অথচ ভারতে এই হার ৪ শতাংশ। তাই এ খাতের উন্নয়নে এগিয়ে আসা দরকার।
দেশে মোট ৭৫টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে জীবন বীমা ৩০টি এবং সাধারণ বীমা ৪৫টি। এ খাতে জড়িত রয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। তবে এ খাতে গ্রাহকদের বীমা দাবি পূরণ না করাসহ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে গকুল চাঁদ দাস সাংবাদিকদের বলেন, গ্রাহকদের অভিযোগ আমলে নেয়া হচ্ছে। তবে অভিযোগের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেকাংশে কমিয়ে আসছে। অনেক অভিযোগের সমাধান করা হয়েছে।
এছাড়া বীমা মেলার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে বীমার প্রসার ও প্রচার করা। মেলায় যে সকল বীমার স্টল থাকবে সেগুলো থেকে বীমা বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ বা সমস্যার সমাধান সর্ম্পকে পরামর্শ প্রদান করা হবে। তাছাড়া মেলায় বীমা কোম্পানিগুলো বিভিন্ন বীমা পণ্য সম্পর্কে তথ্যসহ গ্রাহকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও তথ্য প্রদান করবে। এতে গ্রাহকরা বীমা সম্পর্কে অনেকটাই আগ্রহ হবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আইডিআরএ চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, আমি এখানে যোগ দেয়ার পর ৬টি বেসরকারী বীমা কোম্পানি মোট ৯৯ কোটি ০৩ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯৫ টাকা বীমা দাবি পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে ৩টি জীবন বীমা ও ৩টি সাধারণ বীমা কোম্পানি রয়েছে।
জীবন বীমা কোম্পানির মধ্যে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০ হাজার ৭০৪ জন গ্রাহকের ৪০ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার ১৬৩ টাকা, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২৫৬ জন গ্রাহকের ৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫ হাজার ৫২০ টাকা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৪১৪ জন গ্রাহকের ১০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বীমা দাবি পরিশোধ করেছে।
অপরদিকে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ৬ জন গ্রাহকের ১৭ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ২০৪ টাকা এবং শস্য বীমার দাবি বাবদ ১ হাজার কৃষককে ৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স ১৪ জন গ্রাহকের ৯৭ লাখ ৬৬ হাজার ৭৯৩ টাকা ও ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ১ জন গ্রাহকের ২৩ কোটি ৯৮ লাখ ১ হাজার ১৫ টাকা বীমা দাবি পরিশোধ করেছে।
শেয়ারবাজারনিউজ/এম.আর