ব্যর্থ বুক বিল্ডিং পদ্ধতি: ৮ বছরে এসেছে মাত্র ৬ কোম্পানি
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে ফিক্সড প্রাইস এবং বুক বিল্ডিং এই দুই পদ্ধতি চালু রয়েছে। ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে কোনো বিতর্ক না থাকলেও শুরু থেকেই নানা সমালোচনায় জড়িয়ে পড়ে বিশ্ব স্বীকৃত বুক বিল্ডিং পদ্ধতি। আর এই বিতর্কের মূল কারণ হয় মাত্রাতিরিক্ত প্রিমিয়াম। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে অতিরিক্ত প্রিমিয়ামের মাধ্যমে বাজারে তালিকাভুক্তির শুরুতেই কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ে। সামগ্রিক বাজার ধসে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরপতনে ক্ষতির মুখে পড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি সংশোধন করা হয়।
এই পদ্ধতি সংশোধনের পরও কোম্পানি এবং বিনিয়োগকারীদের তেমনটা সাড়া মেলেনি। পরবর্তীতে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিকে আরো কার্যকর করার জন্য পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধন করা হয়। যেখানে বলা হয় প্রিমিয়াম নিতে হলে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসতে হবে। যদিও এ আইন প্রণয়ন করার পর বেশকিছু কোম্পানি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের কালক্ষেপণ আর বিডিং বিতর্কের কারণে পুনরায় আস্থা হারায় বুক বিল্ডিং পদ্ধতি।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১০ সালে বাজার ধসের পর থেকে ২০১৭ সাল এই ৮ বছরে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে ৭০টিরও বেশি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। আর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে এসেছে মাত্র ৬টি কোম্পানি। ২০১২ থেকে ২০১৪ এই তিন বছর ছিলো বুক বিল্ডিংয়ের অন্ধকার সময়। এই তিন বছরে এই পদ্ধতিতে কোনো কোম্পানি বাজারে আসেনি। বরং যেগুলো আসতে চাইছিলো তাদেরকেও নানা ভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
২০১০ সালে মাত্র একটি কোম্পানি আরএকে সিরামিকস (বাংলাদেশ) লিমিটেড বুক বিল্ডিংয়ে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি ঐ সময়ে বাজারে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ১০ হাজার শেয়ার প্রতিটি ৪৮ টাকা দরে (প্রিমিয়াম ৩৮) ছেড়ে ১৬৫ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করে। কোম্পানিটিকে বাজারে আনতে লিড ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে আইডিএলসি ফাইন্যান্স এবং জয়েন্ট ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে ব্রাক ইপিএল ইনভেষ্টমেন্ট কাজ করে।
২০১১ সালে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে দুটি কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এগুলো হলো: মবিল যমুনা বাংলাদেশ এবং এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরী লিমিটেড। মবিল যমুনা বাজারে ৪ কোটি শেয়ার প্রতিটি ১৫২.৪০ টাকা দরে (প্রিমিয়াম ১৪২.৪০) ছেড়ে ৬০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলন করে। কোম্পানিটিকে বাজারে আনতে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেষ্টমেন্ট লিমিটেড কাজ করে। এছাড়া এমআই সিমেন্ট বাজারে ৩ কোটি শেয়ার প্রতিটি ১১১.৬০ টাকা দরে (প্রিমিয়াম ১০১.৬০) ছেড়ে ৩৩৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা উত্তোলন করে। কোম্পানিটিকে বাজারে আনতে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে অ্যালায়েন্স ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড কাজ করে।
এরপর ২০১২,২০১৩ এবং ২০১৪ সালে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইন সংশোধন নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হওয়ায় তিনবছরে কোনো কোম্পানি এই পদ্ধতিতে বাজারে আসতে পারেনি।
২০১৫ সালে সংশোধিত বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ইউনাইটেড পাওয়ার অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড নামে মাত্র একটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি বাজারে ৩ কোটি ৩০ লাখ শেয়ার প্রতিটি ৭২ টাকা দরে (প্রিমিয়াম ৬২) ছেড়ে ২৩৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলন করে। কোম্পানিটিকে বাজারে আনতে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে লঙ্কাবাংলা ইনভেষ্টমেন্ট লিমিটেড কাজ করে।
২০১৬ সালেও দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড নামে মাত্র একটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি বাজারে ৫ কোটি শেয়ার প্রতিটি ৮৫.২০ টাকা দরে (প্রিমিয়াম ৭৫.২০) ছেড়ে ৪২৬ কোটি টাকা উত্তোলন করে। কোম্পানিটিকে বাজারে আনতে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড কাজ করে।
২০১৭ সালে অর্থাৎ চলতি বছরে আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড নামে মাত্র একটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি বাজারে ১ কোটি ৫০ লাখ ৪১ হাজার ২০৯টি শেয়ার প্রতিটি ৩৯ টাকা দরে (প্রিমিয়াম ২৯) ছেড়ে ৫৮ কোটি টাকা উত্তোলন করে। কোম্পানিটিকে বাজারে আনতে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে লঙ্কাবাংলা ইনভেষ্টমেন্ট লিমিটেড কাজ করে।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা