প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমালো বিশ্বব্যাংক
শেয়ারবাজার ডেস্ক: ইউরো অঞ্চল ও উদীয়মান অর্থনীতির বাজারগুলোয় যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা মার্কিন অর্থনীতির স্বরূপে ফিরে আসা বা তেলের দরপতন কোনোটির মাধ্যমেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে এ চিত্রের বিপরীত অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস বাড়িয়েছে বিশ্বব্যাংক। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি ৩ শতাংশ প্রসারিত হবে। গত বছরের ২ দশমিক ৬ শতাংশের তুলনায় তা বেশি হলেও চলতি বছরের জন্য আগের দেয়া ৩ দশমিক ৪ শতাংশ পূর্বাভাসের চেয়ে কম। ব্যাংকটির অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত ছয় মাসে তেলের দাম অর্ধেকে নেমে আসায় তেল আমদানিকারক দেশগুলো ব্যাপক লাভবান হয়েছে।
তেলের এ দরপতনে মার্কিন ভোক্তাদের হাতে আগের চেয়ে বেশি অর্থ থাকায় তারা ব্যয়ও করতে পারছে বেশি, যার সুবাদে ভোক্তা ব্যয়ের ওপর ৭০ ভাগ নির্ভরশীল মার্কিন অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত হয়েছে। এর সুবাদে বিশ্বের এক নম্বর অবস্থানে থাকা দেশটির প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ করেছে বিশ্বব্যাংক। অর্থনৈতিকভাবে ভালো অবস্থানে থাকা ভারতের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ করা হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রা রুপিকে স্থিতিশীল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ ও সরকারের নেয়া সংস্কার কর্মসূচিই দেশটির অর্থনীতিকে মজবুত করে তুলেছে। তবে তেল রফতানিকারক দেশগুলো এর বিপরীত অবস্থানে রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর মতে, বিশ্ব অর্থনীতি এখন একটিমাত্র ইঞ্জিন, যা মার্কিন অর্থনীতির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। একে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য সর্বোপরি মঙ্গলজনক বলে মনে করছেন না তিনি।
অর্থনৈতিক সংকট-পরবর্তী সময়ের তৃতীয় মন্দা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে ইউরো অঞ্চল। একক মুদ্রা জোটটি এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ ঋণ ও আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার অভাবে ধুঁকছে। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাংক চলতি বছরের জন্য ইউরো অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৭ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে ১ দশমিক ১ শতাংশ করেছে।
২০০৮ সালে অর্থনৈতিক সংকটের পর বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নেতৃত্ব দেয়া উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোও বর্তমানে ধারণার চেয়ে শ্লথ হয়ে পড়েছে। এ অর্থনীতির অনেক দেশই নানা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। দেশগুলো বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কার ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। বিশ্বব্যাংক উন্নয়নশীল সব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমিয়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
অন্যদিকে ২০০৬ সালের পর ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধির পরিকল্পনায় উদীয়মান অর্থনীতির অনেক দেশই সুদের হার বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় উদীয়মান অর্থনীতির অনেক সরকার ও কোম্পানির পরিশোধের সক্ষমতা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন পুনরুদ্ধারে আকৃষ্ট হয়ে বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রমুখী হয়ে ওঠায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর মুদ্রাবাজারে দুর্বলাবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
উদীয়মান অর্থনীতির প্রথম সারির দেশ চীন, রাশিয়া, ব্রাজিলের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমিয়েছে ব্যাংকটি। বিশ্বব্যাংক চীনের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস সাড়ে ৭ থেকে ৭ দশমিক ১ শতাংশ করেছে। ভোগ্য পণ্যের দরপতন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায় অংশীদার দেশগুলোয় শ্লথ চাহিদা ও বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান উত্কণ্ঠার কারণে ব্রাজিলের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস প্রায় ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। মন্দায় নিমজ্জিত রাশিয়ার অর্থনীতি চলতি বছর ২ দশমিক ৯ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক। অন্যতম তেল রফতানিকারক দেশ কাজাখস্তানের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৪ দশমিক ১ থেকে ১ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। রাশিয়ায় অবস্থানরত নাগরিকদের রেমিট্যান্সের ওপরও ব্যাপক নির্ভরশীল দেশটি।
বিশ্ব অর্থনীতির সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়াতে আরো সময় নিতে পারে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক। ভবিষ্যতে বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা আরো সঙ্গীন হওয়ারও সতর্কতা দিয়েছে ব্যাংকটি।