১৮ মাসের সর্বনিম্ন রেমিটেন্স নভেম্বরে
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের রেমিটেন্স আয়ে ধ্বস নেমেছে। টানা ছয় মাস ধরে শুধুই কমছে প্রবাসী আয়। সদ্যবিদায়ী মাস নভেম্বরে যে পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে, তা গত দেড় বছরের সর্বনিম্ন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, নভেম্বরের রেমিটেন্সের এ পরিমাণ গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে দেশে সর্বনিম্ন ১৫০ কোটি ডলার রেমিটেন্স আসে।
বুধবার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ (১.৫৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের এ অংক গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ২৫ শতাংশ বা ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকা কম। গত বছরের নভেম্বরে রেমিটেন্স এসেছিল ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশে রেমিটেন্স আসে ৮৬০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৩ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা)। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২২৮ কোটি ৫২ লাখ বা প্রায় ২১ শতাংশ কম। তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) প্রথম পাঁচ মাসে আসে এক হাজার ৮৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা)।
বরাবরের মতোই বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। নভেম্বরে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৩৮ কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া ডাচ বাংলা ব্যাংকে এসেছে ১৮ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৬ কোটি ৯৮ ডলার।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারির বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর অবৈধ চ্যানেলগুলোতে (হুন্ডি) অর্থ লেনদেন আবার বেড়েছে। এছাড়া মহামারিতে যে হারে প্রবাসীরা চাকরি হারিয়েছে সে হারে নতুন করে চাকরি পায়নি। এসব কারণে প্রবাসী আয় কমছে।
এদিকে রেমিটেন্সের পাশাপাশি রফতানি আয়ও কম হয়েছে নভেম্বরে। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে। যে কারণে ডলারের দাম বেড়ে আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে বুধবার ৮৫ টাকা ৭৫ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ছয় মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে রেমিটেন্স কমছে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে দেশে ১৬৪ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। আগস্টে রেমিটেন্স আসে ১৮১ কোটি ডলার, জুলাইয়ে আসে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের জুনে এসেছিল ১৯৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ এ বছর জুলাই থেকে শুরু করে প্রতি মাসেই রেমিটেন্স আগের মাসের চেয়ে কম এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, নভেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৩০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১২০ কোটি ৬৫ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে।