বিএসইসি’র বিরুদ্ধে আদালতে যাচ্ছে জিকিউ বলপেন
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) বিরুদ্ধে এবার আদালতে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জিকিউ বলপেন। কোম্পানির রিভিউয়ের প্রেক্ষিতে পরিচালকদের বিরুদ্ধে জরিমানার পরিমান বিএসইসি কমিয়ে নিয়ে আনলেও অসন্তুষ্ট কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তাই এর বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালকদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয় আরও এক বছর আগে। এর মধ্যে বিএসইসি টাকা তোলা তো দূরের কথা রিভিউই শেষ করতে পার হয়ে গেছে এক বছরের বেশি সময়। রিভিউয়ের বিপরীতে পরিচালকদের ওপর ধার্যকৃত জরিমানার পরিমানও কমানোর আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশণের (বিএসইসি) এনফোর্সমেন্ট বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কিন্তু এবার তাদেরকেই আদালতের মুখোমুখি হতে হবে।
জানা যায়, আর্থিক প্রতিবেদনে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন এবং আর্থিক প্রতিবেদন তৈরীর নীতিমালায় অনিয়মের কারণে জিকিউ বলপেনের চার পরিচালকের বিরুদ্ধে আড়াই লাখ টাকা করে জরিমানা ধার্য করা হয়। গত বছরের ২০ মে এ জরিমানা করা হয়। এক বছরের বেশি সময় হয়ে যাবার পর এবার জরিমানার পরিমান কমানোর আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। জরিমানা আড়াই লাখ টাকা থেকে কমিয়ে প্রত্যেকের জন্য ২ লাখ টাকা করে ধার্য করা হয়। কিন্তু এ অর্থ দিতেও নারাজ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এবার তাই উচ্চ আদালতে যাবার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
জানা যায়, কোম্পানিটি তিনটি সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করেছে। এর মধ্যে ৩১ শে ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে বোনাস শেয়ার (নন ক্যাশ লেনদেন আইটেম) ইস্যুর মাধ্যমে শেয়ার ক্যাপিটাল বৃদ্ধি করা হয়। এই শেয়ার ক্যাপিটাল বৃদ্ধির বিপরীতে ১০ কোটি টাকার ক্যাশ ইনফ্লো কোম্পানির ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট দেখানো হয়েছে। আর এই নন ক্যাশ লেনদেনে কোম্পানির ক্যাশ ইনাফ্লো হিসাবে দেখানোর মাধ্যমে কোম্পানিটি আলোচ্য সময়ের ব্যালান্স শীটে ১০ কোটি ৮০ হাজার টাকার ক্যাশ এবং ব্যাংক ব্যালান্স দেখানো হয়েছে।
এতে কোম্পানিটির মিথ্যা তথ্য প্রমানিত হয়েছে। তাই কোম্পানিটি সিকিউরিটিজ আইনে ব্যাসেল-৭ (মিথ্যা ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট), সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ আইন ১৯৮৭, ধারা ১২(২) এবং সেকশন ১৮, প্রজ্ঞাপন ১৯৬৯ ধারা লঙ্ঘন করেছে।
দ্বিতীয়ত, জি-কিউ বলপেনের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি মালাডেশ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের ৩০ শে সেপ্টেম্বর ২০১১ এবং এবং একই তারিখে ২০১২ সালের সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক যথাক্রমে ৪০ লাখ টাকা মূল্যের বোনাস শেয়ার ইস্যুর বিপরীতে ক্যাশ আউট ফ্লো এবং ক্যাশ ইনফ্লো দেখানো হয়েছে। যা সাংঘর্ষিক। আলোচ্য বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ার ক্যাপিটাল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্টের মাধ্যমে ২০১১ সালের ব্যালান্স শীটে ক্যাশ এবং ব্যাংক ব্যালান্স ৪০ লাখ টাকা কম এবং ২০১২ সালের ব্যালান্স শীটে ২৪ লাখ টাকার বেশি ক্যাশ এবং ব্যাংক ব্যালান্স দেখানো হয়েছে।
আলোচিত দুইটি লেনদেনের মাধ্যমে নেট ক্যাশ এবং ব্যাংক ব্যালান্স ১৬ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। এতে কোম্পানটি মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে ব্যাসেল-১, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ আইন ১৯৮৭, ধারা ১২(২) এবং সেকশন ১৮, প্রজ্ঞাপন ১৯৬৯ ধারা লঙ্ঘন করেছে।
তৃতীয়ত, কোম্পানিটি ৩১ শে ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ২২৫ কোটি ৭০ হাজার টাকার পু:নমূল্যায়িত সম্পদের উপর কোন অবচয় ধার্য করে নি। এছাড়া আইন অনুযায়ী, এই সম্পদের উপর সঠিক কোন আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় নি। একই সাথে কোম্পানিটি ইনকাম ট্যাক্স অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এবং ব্যাসেল-১২ অনুযায়ী, পু:নমূল্যায়িত সম্পদের উপর ট্যাক্সের বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ করে নি।
এতে কোম্পানিটি ব্যাসেল-১২, ব্যাসেল-১৬ , ব্যাসেল-১ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ আইন ১৯৮৭, ধারা ১২(২) এবং সেকশন ১৮, প্রজ্ঞাপন ১৯৬৯ ধারা লঙ্ঘন করেছে।
জরিমানার মুখে পড়া পরিচালকরা হচ্ছেন কাজী সালেমুল হক, সালমা হক, কাজী এম সারোয়ার সালমান এবং সারা হক।
কোম্পানির সাথে যোগাযোহ করা হলে কোম্পানি সচিব উজ্জল কুমার সাহা শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে জানান, ‘প্রথমে যে জরিমানা করা হয়েছিল তার বিপরীতে আমরা রিভিউ করিয়েছিলাম। এবারও যেহেতু ২ লাখ টাকা করে জরিমানার সিদ্ধান্ত থেকে গেছে, তাই এবার আমরা হাইকোর্টে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা আদালতে স্থগিতাদেশ চাইব।’
তাই সহজেই জরিমানার টাকা বিএসইসি পাচ্ছে না এটি নিশ্চিত। আর জরিমানা করে আবার নমনীয় হওয়া বা কোম্পানিগুলোর আইন না মানার এমন প্রবণতা বিএসইসি’র ভাবমূর্তি খুন্ন করছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
শেয়ারবাজানিউজ/ওহসি/আহাতু