ব্যাটারির ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে কনফিডেন্স সিমেন্ট
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: ব্যাটারির ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কনফিডেন্স সিমেন্ট লিমিটেড। কনফিডেন্স গ্রুপের এ প্রতিষ্ঠানটি ব্যাটারি কোম্পানির ৪৯ শতাংশ শেয়ারে বিনিয়োগ করবে। রোববার বিকেলে অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পর্ষদ সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ‘কনফিডেন্স ব্যাটারিস লি:’ এর ৪৯ শতাংশ শেয়ার অর্থাৎ ২৪ হাজার ৫০০টি শেয়ারে (প্রতিটি অভিহিত মূল্য ১০টাকা করে) ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করবে।
কনফিডেন্স গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান ‘কনফিডেন্স ইলেক্ট্রিক লি:’ ব্যাটারির ব্যবসা করে। ‘ডিমিট্রিস’ নামে তাদের তৈরি ব্যাটারি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দেশে ড্রাইসেল ও লিড অ্যাসিড এই দুই ধরনের ব্যাটারি তৈরি হয়। পেন্সিল ব্যাটারি হিসেবে বহুল পরিচিত পণ্যটিই ড্রাইসেল ব্যাটারি। তবে ড্রাইসেল ও লিড এসিড ব্যাটারি দুটি আলাদা শিল্প। জানা গেছে, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত দুই ধরনের লিড অ্যাসিড ব্যাটারি তৈরি করে থাকে অটোমটিভ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিপ সাইকেল। এ ছাড়া মোবাইল ফোন টাওয়ারের জন্য ব্যবহৃত ভালভ রেগুলেটেড লিড অ্যাসিড (ভিআরএলএ) ব্যাটারির বড় বাজার আছে। এই ব্যাটারি তৈরিতে কয়েকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সমতা থাকলেও এখনো বাজারের বড় অংশ দখল করে আছে আমদানিকৃত ব্যাটারি। কারণ মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো বিদেশি ব্যাটারিই সংগ্রহ করে থাকে।
বাংলাদেশ অ্যাকিউমুলেটর অ্যান্ড ব্যাটারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএবিএমএ) তথ্যানুযায়ী, দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে বছরে ১৮ লাখের বেশি ব্যাটারি প্রস্তুত হয়। এর মধ্যে গাড়ি ও মোটরসাইকেলে ব্যবহৃত অটোমেটিভ ব্যাটারি ৫ লাখ ৯০ হাজার, আইপিএস ও ইউপিএসের ব্যাটারি ৪ লাখ ৩৭ হাজার, জেনারেটর ও ভারী যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাটারি ১ লাখ এবং সোলার প্যানেলের ব্যাটারি ৭ লাখ। এ ছাড়া দেশীয় প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতকৃত অটোমেটিভ ব্যাটারি বিশ্বের ৫৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ পিস ব্যাটারি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, যার প্রায় পুরোটাই করছে রহিমআফরোজ। প্রতি বছর ব্যাটারির চাহিদা বাড়ছে অটোমেটিভে ১০ শতাংশ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিপ সাইকেলে ১৫ শতাংশ হারে।
বিএবিএমএর হিসাব অনুযায়ী, ছোট-বড় মিলিয়ে দেশে প্রায় ২০টি ব্যাটারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রহিমআফরোজ। গ্লোবাট, লুকাস ও স্পার্ক ব্র্যান্ড নামে ব্যাটারি বাজারজাত করে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া হ্যামকো, নাভানা ব্যাটারি, র্যাংগস, পান্না গ্রুপ, রিমসো ব্যাটারি অ্যান্ড কোম্পানি বর্তমানে লিড এসিড ব্যাটারির বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এর আগে কনফিডেন্স সিমেন্ট ও কনফিডেন্স স্টীল লিমিটেড যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎ ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। যেখানে কনফিডেন্স সিমেন্টের মালিকানা ৫১ শতাংশ। আর কনফিডেন্স স্টীলের মালিকানায় ৪৯ শতাংশ।
রংপুরের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হবে ১১৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার। এখান থেকে সরকার প্রতি ইউনিট ৮ টাকা ২০ পয়সা দরে বিদ্যুৎ কিনবে। আর ১১৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার বগুড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরকার বিদ্যুৎ নিবে ৮ টাকা ২৪ পয়সায়।
উল্লেখ্য কনফিডেন্স সিমেন্ট তার দুই প্রাইভেট বিদ্যুৎ কোম্পানি এনার্জিপ্যাক কনফিডেন্স পাওয়ার ভেঞ্চার লিমিটেড (১১ এম.ডব্লিউ) এবং ইসিপিভি চিটাগাং লিমিটেড (১০৮ এম.ডব্লিউ) এর সম্পূর্ণ শেয়ার এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের কাছে বিক্রি করেছে। এক্ষেত্রে প্রথম কোম্পানির ৬ লাখ ৯৫ হাজার শেয়ার ও দ্বিতীয় কোম্পানিটির ৫ লাখ শেয়ার প্রতিটি ১০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। মোট ৮০ কোটি ৭৮ লাখ ৬৪ হাজার ৯৬৫ টাকার শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে কনফিডেন্স সিমেন্টের মুনাফা এসেছে ৬ কোটি ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ৭৯২ টাকা।
প্রসঙ্গত, ২০১৬-২০১৭ হিসাব বছরের ৯ মাসে (জুলাই’১৬-মার্চ’১৭) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৭.৭১ টাকা। যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ৭.১০ টাকা।
গত তিন মাসে (জানুয়ারি’১৭-মার্চ’১৭) পর্যন্ত কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩.৬৫ টাকা। যা এর আগের বছর ছিল ৩.২৪ টাকা।
৩১ মার্চ, ২০১৭ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য (এনএভি) হয়েছে ৭৭.৯৫ টাকা এবং শেয়ার প্রতি নগদ কার্যকর প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ৪.১৮ টাকা।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ