আজ: শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ইং, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৮ অক্টোবর ২০১৮, সোমবার |

kidarkar

১ মার্চ থেকে সেন্টমার্টিনে রাতযাপন নিষিদ্ধ হচ্ছে

শেয়ারবাজার ডেস্ক: আগামী ১ মার্চ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে শুধু দিনের বেলায় পর্যটকদের যেতে দেওয়া হবে। পর্যটকদের ভারে বিপন্ন হতে চলা দ্বীপটিকে রক্ষায় সেখানে রাতযাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দ্বীপের অন্যতম জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকা ছেঁড়া দ্বীপ ও গলাচিপা অংশে পর্যটকদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সেন্ট মার্টিন দ্বীপ রক্ষায় গঠিত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

৯ সেপ্টেম্বর আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের চিত্র তুলে ধরে পরিবেশ অধিদপ্তর একটি প্রতিবেদন দেয়। পরে ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিটি এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যায় এবং অবস্থান করে। এতে দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে। শুধু তা–ই নয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে নির্মাণ করা রাস্তায় দ্বীপটির ক্ষতি বাড়ছে।

আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির স্বল্পমেয়াদি সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, দ্বীপটিতে মোটরসাইকেল, গাড়ি, স্পিডবোট চলাচল করতে পারবে না। সমুদ্রসৈকতটির ভাঙন রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এতে তীরের মহামূল্যবান প্রবালের ক্ষতি হচ্ছে এবং ভাঙন বাড়ছে। ওই ব্যাগ ফেলানো বন্ধ করতে বলেছে কমিটি। রাতে হোটেলগুলো বাতি জ্বালানোর ফলে কচ্ছপের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। তাই রাতে দ্বীপে আলো জ্বালানো যাবে না। আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ ও বনসচিব আবদুল্লাহ আল মহসিন চৌধুরী বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সব স্থাপনা অবৈধ। এসব স্থাপনা সরিয়ে নিতে মালিকদের আমরা নোটিশ দিয়েছি। তাঁরা না শুনলে আমরা তা উচ্ছেদ করব। তবে যাঁরা এত দিন অবৈধভাবে এসব স্থাপনা নির্মাণ করেছেন এবং পর্যটকদের নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের আমরা কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে কিছুটা সময় দেব। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ওই দ্বীপটি শুধু জীববৈচিত্র্যের জন্য সংরক্ষণ করা হবে।’

কমিটির মধ্যমেয়াদি সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে দ্বীপে চলাচলকারী জাহাজের সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে দুটিতে নামিয়ে আনা হবে। দ্বীপে যেতে হলে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। দিনে ৫০০–এর বেশি পর্যটক সেখানে যেতে পারবে না। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর তত্ত্বাবধানে পরিবেশ রক্ষা করে ওই পর্যটন চলবে। দ্বীপে সব ধরনের নতুন স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ করে পুরোনো স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হবে। সেখানে কোনো জেনারেটর ব্যবহার করা যাবে না, আপাতত সৌরশক্তি ব্যবহার করতে হবে। দ্বীপে জমি কেনাবেচা করা যাবে না।

দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে দ্বীপটির সব হোটেল-মোটেল উচ্ছেদ করে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। দ্বীপে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে দ্বীপটির পরিবেশ বিপর্যয়ের চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ২০ হাজার পর্যটক ও স্থানীয় ব্যক্তিদের চাহিদা মেটাতে দ্বীপের ভূগর্ভে থাকা সামান্য পানিটুকুও তুলে প্রায় নিঃশেষ করে ফেলা হয়েছে। যেকোনো সময় ভূগর্ভের ফাঁকা স্থানে সমুদ্রের লোনাপানি ঢুকে পড়তে পারে। এর ফলে দেশের সবচেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী ও সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের আধার দ্বীপটি ধ্বংস হয়ে যাবে। পর্যটকদের মলমূত্র ও বর্জ্যের কারণে দ্বীপটির পানিতে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন, বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাকিবুল আমিন বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকায় পর্যটনকে নিষিদ্ধ ও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা থাইল্যান্ডের ফি ফি দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পর্যটন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে রক্ষা করতে হলে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ এই দ্বীপে ৬৮ প্রজাতির প্রবাল আছে। ১৫১ প্রজাতির শৈবাল, ১৯১ প্রজাতির মোলাস্ক বা কড়ি-জাতীয় প্রাণী, ৪০ প্রজাতির কাঁকড়া, ২৩৪ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর, ২৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ১২০ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এ ছাড়া ১৭৫ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এখানে দুই প্রজাতির বাদুড় ও পাঁচ প্রজাতির ডলফিনেরও বাস।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের (১৯৯৫) আওতায় ১৯৯৯ সালে সরকার সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। ওই আইন অনুযায়ী, দ্বীপের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। আরও চারটি আইনে ওই দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষার কথা বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রেজা খান বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ওই দ্বীপ রক্ষায় এত আইন, এত নিয়ম রয়েছে, তাহলে সেখানে এত স্থাপনা কীভাবে হলো? সরকারি সংস্থাগুলো এত দিন কী করেছে? দুর্নীতির কারণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ আজ ধ্বংসের পথে। তবে এখনো সময় আছে, এই দ্বীপের অবশিষ্ট জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে হলে সরকারের উচিত পরিবেশ অধিদপ্তরের সুপারিশগুলো যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা।’

শেয়ারবাজারনিউজ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.