পৃথিবী বদলে দেয়ার ৪টি সৌর গবেষণা
শেয়ারবাজার ডেস্ক: সাম্প্রতিক কালে ফসিল ফুয়েল বা প্রাকৃতিক জ্বালানী ব্যবহারে যে ভাবে পৃথিবীর উত্তাপ বাড়িয়ে গ্রহটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে হাজির হয়েছে। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুজতে মরিয়া বিজ্ঞানীরা। পরিকল্পনা হলো নতুন তাপমাত্রা না বাড়িয়ে সূর্যকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায় পৃথিবীকে।
সৌর শক্তির রয়েছে অপার সম্ভাবনা। যদিও একে ছোটখাটো প্রকল্পের আওতায় ফেলা হয়। কিন্তু সৌর শক্তির এমন অনেক পরীক্ষা আছে যা পৃথিবীকে সত্যিই বদলে দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সৌর শক্তি ব্যয়বহুল এবং অবাস্তব। কিন্তু এখনও বিজ্ঞানের কিছু ক্ষেত্রে এটি চমৎকার এবং অদ্ভুত পরিকল্পনা দিতে প্রধান বিষয়। এটি একটি চূড়ান্ত নবায়নযোগ্য উৎস। প্রযুক্তির ছোট উদ্ভাবন থেকে শুরু করে বড় বড় প্রকল্পে সবাই যুক্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও উদ্যোক্তারা যুক্ত হয়ে পৃথিবীকে সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে।
চিরকাল উড়তে পারবে বিমান: ২০১৫ সালে ‘দ্য সোলার ইম্পালস ২’ নামের বিমান পৃথিবী যাত্রার উদ্দেশ্যে উড়ার জন্য প্রস্তুত হবে। ঘণ্টায় ৮৪ মাইল বেগে বিমানটি উড়বে। কিন্তু এটি এক ফোঁটা জ্বালানিও ব্যবহার করবে না। এর ডানার বিস্তার হবে বোয়িং ৭৪৭ এর মত যা ১৫ হর্স পাওয়ার দিতে ১৭,২৪৮ টি সৌর কোষ দিয়ে আবৃত থাকবে। এই বিমানকে উড়তে দেখার অভিজ্ঞতা হবে অদ্ভুত। মাটিতে এটি ভাসবে সাবলীলভাবে আর ধীরে। এটা অনেকটাই অবাস্তব বলে মনে হবে।
এই প্রকল্পের আরও মজার ব্যাপার হল বিমানটি চালনা করবে মানুষ। পাইলটরা ভারী অপরিবাহী পদার্থ দ্বারা আবৃত ককপিট থেকে বিমান চালনা করবে। তারা সেখানে ৩০ মিনিট ‘পাওয়ার-ন্যাপস’ নিয়ে নিবে যেন বিমানটি ৬ দিন আকাশে উড়তে পারে। অবশ্যই তাদের যথেষ্ট পরিমাণ নিরাপত্তাজনিত প্রস্তুতি থাকবে যেমন, প্যারাসুট, প্রচুর পরিমাণ খাদ্য এবং এক সপ্তাহ চালানোর মত অক্সিজেন। এটা পরিষ্কার যে এই মুহূর্তে সৌর বিমান বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু পরিকল্পনাটি একদিন কার্বন নিঃসরণ ছাড়াই বিমান চালনার প্রতিজ্ঞা করছে।
সৌর পথ: জনসংখ্যার বাড়তি ঘনত্ব আরেকটি সাফল্যের গল্প তৈরি করতে পারে যা শহরের পথঘাটগুলোকে নতুন রূপ দিতে পারে। ‘স্মার্ট সোলার প্যানেল’ দ্বারা সৌর পথ নির্মাণের ধারণা একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। শুধু নির্মাণকারীরাই বলতে পারবে না যে তারা শতকরা ৭৫ ভাগ গ্রীন হাউস গ্যাস কমাতে পারে (যা নাকি অবাস্তব), কিন্তু এই কাঁচ ঘেরা পথ যানবাহন চালনার জন্য আরও নিরাপদ এবং বরফও গলাতে পারে।
অনেক বিষয়ই আছে যা এই পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে বাঁধা দেয়। কিন্তু সম্ভাবনা আর সকলের সাহায্যই আসলে অপ্রতিরোধ্য। রাস্তাই হতে পারে বৈদ্যুতিক উৎস, প্রতিটি বাড়িতে রাস্তা থেকে বিদ্যুৎ নেয়া যাবে এবং ট্র্যাফিক সংকেতের জন্য আলোরও সরবারহ করতে পারবে। ‘ইন্ডিগোগো’ এই প্রকল্পের জন্য ২.২ মিলিয়ন ডলারের কথা বলছে যা আসলে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে বাস্তবায়নের জন্য আনুমানিক ৬০ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে।
সৌর গাধা: গরীব দেশগুলোতে উপরের প্রযুক্তিগুলো হয়তো চিন্তাই করা যায় না। কিন্তু সৌর প্রযুক্তি গাধার মাধ্যমে কিছু জায়গায় পৌঁছে গেছে। তুর্কিশ কৃষকেরা তাদের ল্যাপটপ চার্জ দেয়ায় জন্য কম মূল্যের সৌর প্যানেল ব্যবহার করে এবং তা গাধার পিঠে করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যায়। এগুলো বিশেষ করে গাধার জন্য বহন করা সহজ এবং এগুলো ৭ কিলোওয়াট শক্তি উৎপাদন করতে পারে। সেখানে প্রায়ই দেখা যায় ঘাস খাওয়া অবস্থায় ঘাধার পিঠে সৌর প্যানেল। এই পদ্ধতিতে সংগৃহীত চার্জ তার মালিক ব্যাবহার করবেন ইলেকট্রনিক গেজেট চালাতে।
বাণিজ্যিক সৌর গাড়ি: এ বছরের শুরুর দিকে লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত ‘কনজিউমার ইলেক্ট্রনিক শো’ তে ফোর্ড তাদের সি-ম্যাক্স পরিবারের একটি গাড়ি প্রদর্শন করে যেটির ছাদ সৌর প্যানেলের তৈরি। বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য এই গাড়ি এখনই প্রস্তুত নয়। এই সংকর গাড়িগুলো ১৬ বর্গ ফুট কোষ দিয়ে তৈরি যা ২১ মাইল পথ পাড়ি দেবার মত বিদ্যুৎ ধারণ করতে পারে। একটি সংকর গাড়ির জন্য এই পরিমাণটি যথেষ্ট হওয়া উচিত।
একটি প্রাসঙ্গিক খবরে জানা যায় বুধবার আমেরিকায় ২৭০০ কিমি জুড়ে সৌর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা হয়েছে। ‘দ্য হাভিন-২’ নামের গাড়িটি এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে পছন্দের একটি। কিছু ইরানি শিক্ষার্থী এই গাড়িটির উন্নতি সাধন করেছে। এটা দেখতে মনে হয় যেন ভবিষ্যতের কোন প্রযুক্তি। কিন্তু আপনার জন্য এই গাড়ি চালানোর কাজটা দুর্লভই হবে।
সৌর শক্তি মৌলিকই থাকবে কিন্তু উপরের ভাবনাগুলো সত্যিই চমৎকার এবং এই সম্পদের সত্যিকার সম্ভাবনা দেখায় যা ৯ বিলিয়ন বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে। সূত্র:ইন্টারনেট।
শেয়ারবাজারনিউজ/রু