বাজেটে পুঁজিবাজার: বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় পুঁজিবাজারকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। যেমন: ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর হার কমানো, আর্থিক খাত বহির্ভুত পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির কর্পোরেট কমানো, ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর লভ্যাংশ আয়ের সীমা বাড়ানো, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে উৎসে কর আদায় হতে অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বাজেটে মার্চেন্ট ব্যাংকারদের কর্পোরেট কর কমানোর প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী করেননি।
প্রস্তাবিত বাজেটের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি নিয়ে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা শেয়ারবাজারনিউজ ডটকম এর কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া জানান।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ এ বিষয়ে শেয়ারবাজারনিউজ ডটকম’কে বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজারকে অগ্রাধিকার রেখে অর্থমন্ত্রী বেশকিছু ইতিবাচক প্রস্তাব করেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় সরকার পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ইতিবাচক চিন্তা করছে সেটা বাজেটের মাধ্যমে জনসাধারণ জানতে পারছে। যা পুঁজিবাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরিয়ে আনবে। তাছাড়া ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ পাবলিকলি ট্রেডেড অন্য কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট কর কমানোর প্রস্তাব হয়েছে। এই বিষয়টি পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া এসব কোম্পানি থেকে ডিভিডেন্ডের পরিমাণও বাড়বে। অপরদিকে করমুক্ত লভ্যাংশ আয় সীমা বাড়ানোর প্রস্তাবে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব আসবে। সবমিলিয়ে বাজেটটি পুঁজিবাজার বান্ধব হতে যাচ্ছে।
অন্যদিকে মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্পোরেট কর কমানোর প্রস্তাব না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকের কর না কমানোর সিদ্ধান্তটি পুঁজিবাজারে কোন প্রভাব ফেলবে না। কারণ এর সাথে বিনিয়োগকারীদের কোন সম্পর্ক নেই।
এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ লিজিং ফাইন্যান্স কোম্পানিজ এসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ) এর প্রেসিডেন্ট আসাদ খান শেয়ারবাজারনিউজ ডটকম’কে বলেন, বাজেটে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর কমানোর প্রস্তাবেআমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক বিষয়। এতে আমাদের মুনাফা বাড়বে। আর এই কারণে আমরা বিনিয়োগকারীদের ভালো ডিভিডেন্ড দিতে পারবো। যা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সহায়তা করবে। কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংকের কর কমানোর প্রস্তাব না হওয়াটা বেশ দু:খজনক। কারণ মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নেগেটিভ ইক্যুইটির ভারে বর্তমানে দুরাবস্থার মধ্যে রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট আকতার হোসেন সান্নামাত শেয়ারবাজারনিউজ ডটকম’কে বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজারকে ঘিরে যে সমস্ত প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী করেছেন সেগুলোর জন্য দীর্ঘ দিন ধরে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো দাবী করে আসছিল। তবে বর্তমানে পুঁজিবাজারকে ঘিরে সরকার সক্রিয় রয়েছে। যা বাজারের স্থিতি ফেরাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক কর কমে গেলে এসব প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বাড়বে। তাই ডিভিডেন্ডের পরিমাণও বাড়বে।
তবে মার্চেন্ট ব্যাংকের কর কমানোর প্রস্তাব না হওয়াটাকে অযৌক্তিক অ্যাখ্যা দিয়ে তিনি আরো বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকের কর হার কমানোর প্রয়োজন ছিল। কারণ নেগেটিভ ইক্যুইটি এবং বাজারের নেতিবাচক পরিস্থিতির কারণে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে চরম দুর্দশার মধ্যে যেতে হচ্ছে। এর জন্য তারা বাজারের উন্নয়নে জোরাল ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাই আমি বাজেট প্রস্তাবনায় মার্চেন্ট ব্যাংকের কর হার কমানোর জন্য জোর প্রস্তাব করেছিলাম। আর এখান থেকে সরকার কতোই বা কর পাচ্ছে। আর বাজেট পাশ হতে এখনো অনেক সময় বাকি আছে। এর মধ্যে সরকারকে এই বিষয়ে পুন:বিবেচনা করার জন্য আমরা পুনরায় আহবান করবো।
শেয়ারবাজারনিউজ/তু/সা্