আজ: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, বুধবার |

kidarkar

বন্ড ইস্যুর অনুমতি: ২৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে আইসিবি

শেয়ারবাজার ডেস্ক: আন্তর্জাতিক বাজারে বন্ড ছেড়ে ৩০ কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহ করার অনুমতি পেয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। বাংলাদেশী মুদ্রায় সংগৃহীত তহবিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা (প্রতি ডলার সমান ৮৫ টাকা ৩৫ পয়সা ধরে)। তবে এক্ষেত্রে সংস্থাটিকে বেশকিছু শর্ত মানতে হবে, যার অন্যতম হলো সংগৃহীত অর্থের অর্ধেক নতুন করে বিনিয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক দিয়ে ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ পাবে আইসিবি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উচ্চসুদে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেছিল আইসিবি। এ আমানতের সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে পরিচালন ব্যয় বেড়ে যায় সংস্থাটির। এ অবস্থায় বিদেশে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে কম সুদে তহবিল সংগ্রহ করে এসব ঋণ পরিশোধের জন্য উদ্যোগ নেয় আইসিবি কর্তৃপক্ষ। এ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আইসিবিকে তহবিল সংগ্রহের জন্য সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. নাহিদ হোসেন স্বাক্ষরিত অনুমোদনপত্রে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পাঁচ বছর মেয়াদি এ তহবিল সংগ্রহের অনুমতি দেয়া হয়।

তবে এক্ষেত্রে বেশকিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, এ বন্ডে কোনো অবস্থায়ই বা কোনো সময়েই সরকার কোনো ধরনের গ্যারান্টি দেবে না। পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ডের কুপন রেট অর্থাৎ কুপনসহ আনুষঙ্গিক সব ব্যয় যেমন—লিড অ্যারেঞ্জার ফি, ক্রেডিট রেটিং ফি, আন্ডার রাইটিং ফি, ট্রাস্টি ফি, ডকুমেন্টেশন ব্যয়, লিগ্যাল ফি, রোড শো বাবদ ব্যয়, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার-সংক্রান্ত ঝুঁকি নিরসন ব্যয় এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্যান্য সব ব্যয় অনধিক ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ হতে হবে। সংগৃহীত তহবিলের অন্তত ৫০ শতাংশ অর্থ নতুনভাবে বিনিয়োগ করতে হবে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার-সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন বলেন, তারা ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বন্ড ইস্যুর জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় ৩০০ মিলিয়নের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এখন বন্ড ছাড়ার পরবর্তী বিষয়গুলো নিয়ে তারা কাজ করছেন। কবে নাগাদ বন্ড ইস্যু করা হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবে অনুমোদন পাওয়া গেছে, এখন লিড অ্যারেঞ্জার নিয়োগসহ বেশকিছু কাজ বাকি রয়েছে। সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে যত দ্রুত সম্ভব বন্ড ইস্যুর উদ্যোগ নেয়া হবে।

বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিল কোন খাতে ব্যয় করা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল হোসেন বলেন, এক সময় তাদের প্রায় ৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার উচ্চসুদের আমানত ছিল। বর্তমানে সেটা কমিয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। সংগৃহীত তহবিলের কিছু অর্থ দিয়ে উচ্চসুদের আমানত ফেরত দেয়া হবে। আর কিছু অর্থ নতুন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আইসিবি আন্তর্জাতিক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সিঙ্গাপুর স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ বিষয়ে অনুমোদনও দিয়েছে।

বিদেশী বন্ড ছাড়ার বিষয়ে গত মার্চে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মতামত চেয়ে চিঠি দেয় আইসিবি। ১০ বছর মেয়াদি বন্ড ইস্যুর প্রস্তাব দেয়া হয় ওই চিঠিতে। যার কুপন রেট প্রস্তাব করা হয় বার্ষিক ৩ শতাংশ। প্রথম দুই বছর হবে গ্রেস পিরিয়ড। তৃতীয় বছর থেকে বার্ষিক আটটি সমান কিস্তিতে এ ঋণের আসল টাকা পরিশোধ করবে আইসিবি। সুদ পরিশোধ করা হবে ষান্মাসিক ভিত্তিতে।

চিঠিতে আইসিবি জানায়, দেশের অভ্যন্তর থেকে স্বল্প সুদে তহবিল সংগ্রহের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া আগে সংগৃহীত মেয়াদি আমানত পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল জোগানোর জন্য বিদেশ থেকে স্বল্প সুদে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে তারা।

চিঠির জবাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আইসিবিকে জানায়, বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহের বিষয়টি একটি নীতিগত বিষয়। সুতরাং প্রস্তাবিত বন্ডের আইনগত ও আর্থিক দিক, সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং অন্যান্য যৌক্তিকতাসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিশেষজ্ঞের মতামত এবং অবশ্যই আইসিবির পর্ষদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ-সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠাতে বলা হয় সংস্থাটিকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইসিবি বিদেশী বন্ড ছাড়ার বিষয়ে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতামত নিয়ে পুনরায় গত অক্টোবরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বন্ড ইস্যুর অনুমোদন চেয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দেয়।

এর আগে গত বছর বিদেশী বন্ড ইস্যু করে ১ হাজার মিলিয়ন ডলার সংগ্রহের প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়েছিল আইসিবি। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহের প্রস্তাবে সায় দেয় আইসিবির পরিচালনা পর্ষদ। তবে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতামতের ভিত্তিতে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের জন্য আবেদন করে সংস্থাটি। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ ৩০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের অনুমোদন দেয়া হলো।

সূত্র: বণিক বার্তা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.