বাজারে কি শুধুই সৌদির খেজুর?
এ জেড ভূঁইয়া আনাস: রমজানে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুর। রোজার মাসে সব শ্রেণির মানুষের চাহিদায় থাকে এটি। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে সৌদি আরব থেকে আসা বিভিন্ন প্রজাতির খেজুরের। একারণে বিক্রেতারা অন্যদেশ থেকে আমদানি করা খেজুরও সৌদি আরবের নাম করে বিক্রয় করছেন। এতে সৌদির আসল খেজুর নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। আমদানিকারকরা বলছেন, খেজুর বেশি আমদানি হয় আরব আমিরাত থেকে। সৌদি থেকে খুব কম পরিমাণেই খেজুর আমদানি করা হয়।
রাজধানীর হাতিরপুল এলাকায় বসবাস করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শরিফুল ইসলাম। ইফতারের প্রধান অনুষঙ্গ খেজুর কিনতে তিনি হাতিরপুলের অস্থায়ী দোকানগুলোতে এসেছেন। চারিদিকে বাহারি নামের, বিভিন্ন রকমের এবং নানান সাইজের খেজুর। বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলেই বলছেন, সৌদির খেজুর। সৌদি আরব থেকে এ পণ্য এসেছে। ওখানে ছাড়া দুনিয়ার আর কোথাও এ খেজুর পাওয়া যায় না বলে কিনতে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। এসব কথায় গলছেন না শরিফুল। কারণ তিনি জানেন, দেশে যে খেজুর আমদানি করা হয় তা বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আসে।
তবুও বিক্রেতারা সৌদির খেজুর কেন বলছেন? জানতে চাইলে শরিফুল বলেন, ধর্মপ্রাণ মানুষদের সৌদি সম্পর্কে বিশেষ একটা আগ্রহের জায়গা আছে। তাই তারা এসব বলে বিক্রি করার চেষ্টা করে। কী দেখে কিনছেন খেজুর জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা সময় দেশে খুব অল্প খেজুর পাওয়া যেত। এত দামি এবং বাহারি খেজুর ছোট বেলায় দেখিনি। এখন বিভিন্ন পুষ্টিবিদদদের ডায়েট চার্ট অনুযায়ী খেজুরের নানান উপকারিতা জেনে এটি খাওয়ার ব্যাপারে আকৃষ্ট হয়েছি। একটা সময়ে রোজা ছাড়া খেজুর খাওয়া হতো না। এখন সারা বছরই খেজুর খাওয়া হয়।’
বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সৌদির খেজুর বলে বেশি বিক্রি করা যায়। সাধারণ মানুষ বেশি কেনে। তবে, আমাদের কাছে সবই সৌদি আরবের। এর বাইরে কিছু নাই।
পাইকারি ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশে বেশিরভাগ খেজুর খুচরা বিক্রেতারা না জেনেই সৌদির বলে বিক্রি করেন। আসলে আমাদের দেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে খেজুর আমদানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আরব আমিরাত। এছাড়া সৌদি, মিশর, আলজেরিয়া, মরোক্কো, তুরস্ক থেকে আমদানি করে থাকে। পাশাপাশি পাকিস্তান এবং ভারত থেকেও খেজুর আমদানি করা হয়।’
আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী সোলায়মান মোল্লা বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারের সব ইলিশ পদ্মার, সব লিচু দিনাজপুরের, সব আম রাজশাহীর, সব কলা নরসিংদীর আর সব খেজুর সৌদি আরবের। অবস্থা এমন, খুচরা ব্যবসায়ীরা আমাদের জিজ্ঞেস করে সৌদির খেজুর কোনটা? আমরাও কথা না বাড়িয়ে বলি সব সৌদির।’
রাজধানীর সবচেয়ে বড় ফল পাইকারি বাজার বাদামতলিতে গিয়ে দেখা যায় হরেক রকমের খেজুর। পা ফালানোর জায়গা নেই কোথাও। সব জায়গায় মানুষ আর মানুষ। ব্যবসায়ী যারা আসছেন তারা প্রায় সবাই খেজুর নিতেই আসছেন।
ফল আমদানিকারক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘খুচরা বাজারে কে কি নামে বিক্রি করে তা আমাদের জানার বাইরে। আমরা পাইকারি বিক্রি করি, খুচরা না। আর কেউ যদি সৌদির বলে বিক্রি করতে পারে বেশি তাতে ক্ষতি কি? খেজুর তো আর খারাপ না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আমদানিকারক বলেন, ‘দেশের বাজারে যেসব খেজুর পাওয়া যায় তার ১০ পার্সেন্টও সৌদির না। বেশিরভাগ খেজুর আসে আরব আমিরাত এবং মিশর থেকে। পাকিস্তান, ইরান এবং আলজেরিয়া থেকেও আসে খেজুর। আসলে দেশে সৌদির নাম শুনলে কিছু মানুষ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। তাই খুচরা বিক্রেতারা সৌদি আরবের নাম বলে বিক্রি করেন।’
বাদামতলিতে দেখা যায় হরেক রকমের খেজুরের সমাহার। নামও অনেক, সাইজেও আলাদা এসব খেজুর। এসব খেজুরের মধ্যে রয়েছে আম্বার, কালমি, মরিয়ম, শুককারি, ছড়া, বাটি, ছক্কা, কাউন দাবাস, সুগাই, গাওয়া, তিনপল, মেডজুল, জিহাদি, সায়ের, মাসরুক, আদম, ম্যাকজুয়েল, মাবরুম ইত্যাদি।
বাদামতলীর বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে ১ কেজির এক কার্টন নাগাল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকায়, যা কয়েকদিন আগে ছিল ১ হাজার ৩৫০ টাকার মধ্যে। আবার ১০ কেজির এক কার্টন খালাস খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকায়, যা কিছুদিন আগে ছিল ১ হাজার ১৫০ টাকা। পাঁচ কেজির কিমি খেজুরের কার্টন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। আবার কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। দাবাস ১০ কেজির কার্টন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। আর পাঁচ কেজির কার্টন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়। অর্থাৎ সব ধরনের খেজুরের দাম বেড়েছে। ১ কেজির জিহাদি খেজুর ১ হাজার ৩০ থেকে ৫০ টাকা, সায়েব ১ হাজার ৫০, মাসরুর ১ হাজার ৯০০ টাকা, কালমি ১ হাজার ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, আজওয়া ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।