আজ: শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ইং, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২২ জুন ২০২২, বুধবার |

kidarkar

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু করেছি : প্রধানমন্ত্রী

শেয়ারবাজার ডেস্ক:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব ষড়যন্ত্র-প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে লাখো শুকরিয়া। আমি বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই- তারা আমার পাশে ছিলেন। তাদের সহযোগিতার জন্যই আজ পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

বুধবার (২২ জুন) বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণচুক্তি সই করা হয়। এরপর শুরু হয় ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্রের পেছনে কে বা কারা ছিল তা আমি বহুবার বলেছি। ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থের জন্য দেশের মানুষের কেউ ক্ষতি করতে পারে এটা সত্যিই কল্পনার বাইরে ছিল।

‘এই ষড়যন্ত্রকারীরা ছাড়াও বিশ্বব্যাংকের অভ্যন্তরের একটি গ্রুপ ছিল যারা অন্যায্যভাবে কিছু কিছু বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিল’- বলেন তিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, প্রাক-যোগ্য ঠিকাদার নির্বাচনের এক পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক, কারিগরি কমিটিকে একটি প্রাক-যোগ্য ঠিকাদারকে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত থাকার কারণে বাদ দিতে বলে এবং একটি প্রাক-যোগ্যতায় অযোগ্য ঠিকাদারকে যোগ্য করতে বলে। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি কমিটি প্রাক-যোগ্য কোয়ালিফায়েড দরদাতাকে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্তির কারণে বাদ দেয়। কিন্তু প্রাক-যোগ্যতা যাচাই-বাছাইয়ে অযোগ্য দরদাতাকে অভিজ্ঞতার জাল সার্টিফিকেট দেওয়ায় যোগ্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংক এ প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য করার লক্ষ্যে তার অনুকূলে পরোক্ষ চাপ দিতে থাকে। এরপরই তারা পদ্মা সেতুর কার্যক্রমে বাধা দিতে থাকে। এক পর্যায়ে বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল চেয়ারম্যান লুইস মোরেনো ওকাম্পোকে ঢাকায় পাঠায়। ওকাম্পো ঢাকায় এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া এবং যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করার কথা বলেন।

‘আমরা দুদককে তদন্ত করার নির্দেশ দিই। দুদক কোনো দুর্নীতি পায় না। পরে কানাডার আদালতেও প্রমাণ হয় পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি’- বলেন তিনি।

‘২০১২ সালের ৯ জুলাই মন্ত্রিপরিষদের এক বৈঠকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিই। আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পদ্মা সেতুর জন্য অর্থ না নেওয়ার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর দেশের এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদরা কীভাবে মনগড়া সমালোচনায় মেতে উঠেছিল, আপনারা দেখেছেন।’

তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণকাজের গুণগত মানে কোনো আপস করা হয়নি। এ সেই নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে। পুরো নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে। পদ্মা সেতুর পাইল বা মাটির গভীরে বসানো ভিত্তি এখন পর্যন্ত বিশ্বে গভীরতম। সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত এ সেতুর পাইল বসানো হয়েছে। ভূমিকম্প প্রতিরোধ বিবেচনায় ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে ভূমি অধিগ্রহণের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। ভূমিহীনসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সহায়তা, ভিটা উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য কর্মমুখী ও আয়বর্ধনমূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য পুনর্বাসিত এলাকাকে ‘পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছি।

তিনি বলেন, বহুমুখী এ সেতুর উপরের ডেক দিয়ে যানবাহন এবং নিচের ডেক দিয়ে চলাচল করবে ট্রেন। সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। এতে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে, অন্যদিকে অর্থনীতি হবে বেগবান। আশা করা হচ্ছে, এ সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক দুই-তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে এবং প্রতি বছর দশমিক আট-চার শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসন হবে।

তিনি আরও জানান, পদ্মা সেতু ঘিরে গড়ে উঠবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটে পার্ক। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং দেশের শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। এ সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগের একটা বড় লিংক। তাই আঞ্চলিক বাণিজ্যে এ সেতুর ভূমিকা অপরিসীম। তাছাড়া পদ্মার দু’পাড়ে পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে।

শেখ হাসিনা বলেন, হাজার হাজার মানুষের শ্রমে এই স্বপ্নের সেতু নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, জাপান, ডেনমার্ক, ইতালি, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, নেপাল ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলী এ সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

শেয়ারবাজার নিউজ/খা.হা.

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.