এক বছরে বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়েছে ৪.৭৮ লক্ষ
শাহ আলম নূর: মন্দা পু্ঁজি বাজারের প্রভাব পড়েছে বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নের ক্ষেত্রে। নবায়ন না করায় এক বছরে বন্ধ হয়েছে ৪.৭৮ লক্ষ বিও অ্যাকাউন্ট। নবায়ন না করার কারনে ২০২১-২২ সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে মোট ৪.৭৮ লক্ষ বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। অনেকেই বিও অ্যাকাউন্ট নবীয়ন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছ না। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ হচ্ছে।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) তথ্যানুসারে, দেশে সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২০৫৮০৭১ টি। ২০২০-২১ অর্থবছরে সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ২৫৩৬৪৩১ টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিও অ্যাকাউন্ট কমেছে ১৮ শতাংশ। বর্তমানে পু্ঁজিবাজার বেশ মন্দা সময় পার করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা নবায়ন ফি পরিশোধ না করার কারণে বিও অ্যাকাউন্ট উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে ডিলাররা মনে করছেন।
বিশ্লেষক এবং স্টক ডিলাররা সাম্প্রতিক স্টক মার্কেটের মন্দার জন্য দেশের দুর্বল সামষ্টিক অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগকে দায়ী করেছেন। মন্দা পুঁজিবাজারে অনেক বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগের অর্থ হারিয়েছেন। এতে অনেক বিনিয়োগকারি ফি পরিশোধ করে তাদের অ্যাকাউন্ট নবায়ন করতে উৎসাহ দেখাননি।যা বিও অ্যাকাউন্ট হ্রাস পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা পালন করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা ।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, বাণিজ্য ঘাটতির রেকর্ড বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নসহ বিভিন্ন কারনে বিনিয়োগকারীরা প্রায় চার মাস ধরে মন্দার সময় পার করছে। প্রতি বছর জুন মাস বার্ষিক বিও অ্যাকাউন্ট পুনর্নবীকরণ ফি ক্লিয়ার করার মাস। এবছর খেলাপি বিও অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের সংখ্যা এ বছর সর্বোচ্চ ছিল।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, “অনেক নতুনরা অল্প পুঁজি নিয়ে বিও অ্যাকাউন্ট খোলেন কিন্তু পরে যখন দেশের দুর্বল সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থান এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কারনে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাজার থেকে বেড় হয়ে যান।”
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেকেন্ডারি মার্কেট ভালো লাগছে না । কারণ আমার বিনিয়োগের অধিকাংশ আমি হারিয়েছি। এমন পরিস্থিতিতে আমার বিও নবায়ন ফি প্রদান করা হয়নি।
ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিংয়ের (আইপিও) জন্য আবেদন করতে বিনিয়োগকারীরা সাধারণত নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলে। সেকেন্ডারি মার্কেটে অল্প সংখ্যক বিও অ্যাকাউন্ট হোল্ডার জড়িত।
জুন মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সাধারণ এবং প্রবাসি বিনিয়োগকারীদের জন্য আইপিও আবেদনের জন্য ন্যূনতম বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইপিওতে অংশগ্রহণের যোগ্য হতে হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে কমপক্ষে ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। প্রবাসি বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি এক লাখ টাকা। নতুন এসিদ্ধান্ত বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ঠরা মনে করছেন।
এর আগে ২০২০সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রত্যেক আবেদনকারী যাতে তাদের সাবস্ক্রিপশন মূল্যের অনুপাতে শেয়ার পায় তা নিশ্চিত করার জন্য আইপিও লটারি সিস্টেমের পরিবর্তে প্রো-রাটা ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আইপিও শেয়ার বরাদ্দের নিয়ম তৈরি করে বিএসইসি।
প্রো-রাটা ভিত্তিতে মানে একজন আবেদনকারীকে শেয়ারের জন্য আবেদনকৃত শেয়ারের শতাংশ অনুযায়ী শেয়ার বরাদ্দ করা হবে। আইপিও শেয়ার কিনতে ইচ্ছুক বিলিয়োগকারিকে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগকারী হতে হবে। এবং সিকিউরিটিজ রেগুলেটর অনুসারে একজন বিনিয়োগকারীর অবশ্যই তার বিও অ্যাকাউন্টে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার থাকতে হবে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার।
পূর্বে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আইপিও শেয়ারের জন্য আবেদন করার সময় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জমা করতে হতো। তারপর কে শেয়ার পাবে তা নির্ধারণের জন্য একটি লটারি অনুষ্ঠিত হতো। যারা শেয়ার পেতে ব্যর্থ হতো তারা তাদের টাকা ফেরত দেয়া হতো।
বিদ্যমান নিয়ম অনুসারে, একজন ব্যক্তি তার জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং ফোন নম্বর ব্যবহার করে শুধুমাত্র একটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার লেনদেনের জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারীর মাধ্যমে সিডিবিএল এর সাথে একটি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক৷
বিএসইসি ২০১৬ সালে প্রতিটি বিও অ্যাকাউন্টের জন্য ৫০০ টাকা থেকে পুনর্নবীকরণ ফি কমিয়ে ৪৫০ টাকা করেছে।
শেয়ারবাজার নিউজ/খা.হা.