জমি ফেলে না রেখে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়াতে হবে
জমি ফেলে না রেখে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
শেয়ারবাজার ডেস্ক:দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগানোর মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে। সব জমি কাজে লাগিয়ে খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। তবেই আমরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জন করতে সমর্থ হবো।’
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন ২৬ হাজার ২২৯টি পরিবারকে পুনর্বাসন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের চারটি উপজেলায় যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো জমি কেউ ফেলে রাখবেন না, একটা তরকারি গাছ বা মরিচ গাছ হলেও লাগান। কোনো জলাধার কেউ ফেলে রাখবেন না। হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু প্রতিপালন থেকে শুরু করে যার যেভাবে সম্ভব সেভাবে উৎপাদনে সম্পৃক্ত হতে হবে। যেন আমরা নিজেরাই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি এবং খাদ্যের জন্য কারও মুখাপেক্ষী হতে না হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে করোনা, অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এরমধ্যে আমেরিকা রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার ফলে আমাদের সার কিনতে সমস্যা হচ্ছে, খাদ্য কিনতে সমস্যা হচ্ছে। এসব কারণেই আজকে শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বব্যাপীই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। উন্নত দেশগুলোতেও খাদ্যের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমেরিকা বলেন, ইংল্যান্ড বলেন, সব জায়গায়ই বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হচ্ছে। পেট্রল ও ডিজেলসহ জ্বালানি সাশ্রয় করার উদ্যোগ উন্নত দেশগুলোও নিয়েছে। স্পেন, পতুর্গালসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা এখনো দেশটা ভালোভাবে চালাতে পারছি। কিন্তু আমাদের এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। সব ধরনের সতর্কতামূলক পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। সবাইকে বলবো বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে হবে, পানি এবং জ্বালানির ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। আপদকালীন সঞ্চয় সবাইকে বাড়াতে হবে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা ঘর পেয়েছেন, তাদের জন্য উন্নত স্যানিটারি ল্যাট্রিন, বিদ্যুতের ব্যবস্থাসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও অনুষ্ঠানে জানান প্রধানমন্ত্রী।
যারা নতুন ঘর পেয়েছেন, তাদের বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি মিতব্যয়ী হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যে ঘর দিয়েছি সেগুলো রক্ষা করা, উন্নত করা আপনাদেরই দায়িত্ব। এবার আমরা তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ২৬ হাজার ২২৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার যে ঠিকানা দিতে পারছি, আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আর বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই কাজের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
করোনা মহামারির মধ্যে অসহায় মানুষগুলোর জন্য ঘর নির্মাণে সম্পৃক্ত থাকায় বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং ছিন্নমূল মানুষগুলোরও ঠিকানা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা একটি মহৎ কাজ, মহৎ উদ্যোগ। কারণ একটা ঘর পাওয়ার পর একটা মানুষের জীবন পাল্টে যায়। মানুষের মুখে যে হাসিটা ফোটে, এটাই তো সব থেকে বড় পাওয়া জীবনের। এর থেকে বড় কিছু আর হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাচ্ছি আমাদের বাংলাদেশে শতভাগ ভূমিহীন-গৃহহীন পুনর্বাসন হবে। প্রত্যেকটা মানুষ তার ঠিকানা পাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা বাস্তবায়ন করাই আমার লক্ষ্য। এজন্য জীবনে বার বার মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে পড়লেও মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমতে আমি প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। বোধহয় সেজন্যই (জাতির পিতার উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা) আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। না হলে বার বার মৃত্যুকে আমি সামনে দেখেছি। কিন্তু আমি কখনো ঘাবড়ে যাইনি বা ভয়ও পাইনি।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে বাঁচার মতো একটা সুন্দর সমাজ দিতে আমরা সংগ্রাম চালিয়ে আসছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা, স্কুলগুলোকে জাতীয়করণের পাশাপাশি প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন মাধ্যমে গণমানুষের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করছি। একইসঙ্গে মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার দ্বার অবারিত করার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করতেও সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ এবং এ দুর্যোগের সঙ্গেই আমাদের বসবাস উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্ষাকাল চলমান থাকায় আবারো যে কোনো সময় বন্যা আসতে পারে, সেজন্যও সতর্ক থাকতে হবে।
বৃহত্তর সিলেট বিভাগে বন্যা মোকাবিলায় বানভাসি মানুষের জন্য সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন। কাজেই মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই আমাদের কাজ।
শেয়ারবাজার নিউজ/খা.হা.