উত্তরা ফাইন্যান্সের বিশেষ নিরীক্ষার সময় বৃদ্ধি
নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজার তালিকাভূক্ত কোম্পানি উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বরাবর পাঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় আগামী ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান কোম্পানিটির অডিট পরিচালনা করছে রহমান রহমান হক, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে কোম্পানিটিতে বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া শত শত কোটি টাকার ঋণ বের করে নিয়েছেন। আবার ব্যবস্থাপনা পরিচালকও (এমডি) গাড়ি-বাড়ি কিনতে অনুমোদন ছাড়া ঋণ নিয়েছেন। এর আলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সত্য উম্মোচনের জন্য বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
উত্তরা ফাইন্যান্সের ২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, মার্চেন্ট ব্যাংকিং ও পুঁজিবাজারের মার্জিন ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৯৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এর মধ্যে ৩৫০ কোটি টাকা জমা হয়েছে উত্তরা ফাইন্যান্সের বিভিন্ন পরিচালকের ব্যাংক হিসাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের আবেদন, প্রস্তাব বা অনুমোদন ছাড়া পরিচালকদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরাসরি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমানতকারীসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পরিচালকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ১ হাজার ২০১ কোটি টাকা। তবে আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে ৩১১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা উত্তরা ফাইন্যান্স পরিদর্শনে দেখেছেন, প্রতিষ্ঠানটির এমডি এস এম শামসুল আরেফিন কোনো অনুমোদন ছাড়াই ব্যবস্থাপনা ব্যয় শিরোনামে ২৪ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন। এর মধ্যে এমডির পক্ষে সাউথ ব্রিজ হাউজিংকে ৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা, বে ডেভেলপমেন্টকে ১ কোটি টাকা, ব্যক্তিগত গাড়ি কিনতে ডিএইচএসকে ৫০ লাখ টাকা ও উত্তরা মোটরসকে ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে উত্তরা মোটরস ও উত্তরা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৩৩৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, যার কোনো অনুমোদন নেই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মুজিবুর রহমান ব্লু চিপস সিকিউরিটিজের কর্ণধার। এই প্রতিষ্ঠানের ২৩৬ কোটি টাকা আমানত জমা করা হয়েছে। তবে এর বিপরীতে কোনো বৈধ নথিপত্র সংরক্ষণ নেই। ফলে আদৌ এই টাকা জমা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত নয়। যদি কোনো ব্যাংক এই আমানতের বিপরীতে ঋণ দেয়, তার পুরো দায় উত্তরা ফাইন্যান্সের ওপর বর্তাবে।
এদিকে গত ২৩ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ থেকে উত্তরা ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে অপসারণ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেওয়া অপসারণের চিঠিতে বলা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এর ২০ (৩) ধারার আওতায় উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে বিশেষ নিরীক্ষা সম্পাদনের জন্য নিযুক্ত সিএ ফার্ম রহমান রহমান হকের (কেপিএমজি) করা বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থেকে প্রতিষ্ঠান ও আমানতকারীদের ক্ষতি করায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শামসুল আরেফিনকে ২৩ জুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর পদ হতে অপসারণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত উত্তরা ফাইন্যান্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৩১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের মালিকানা ৪২.৪৪ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ৩২.৬৭ শতাংশ। বিদেশী বিনিয়োগ ৭.৮২ শতাংশ বাকি ১৭.০৭ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।