অর্থনৈতিক অস্থিরতায় লোকসানে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট
- শাহ আলম নূর : বিশ্ববাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, পণ্য পরিবহনে জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়া ও টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ধুঁকছে শেয়ারবাজারের কোম্পানিগুলোও। এ তিন কারণে শেয়ারবাজারের কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমতে শুরু করেছে। আবার কোনো কোনো কোম্পানি লোকসানও গুনছে। তালিকাভুক্ত তেমনি একটি কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট।
কোম্পানিটি অর্থনীতির বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চাপে পড়ে চলতি বছরের প্রথমার্ধে বড় ধরনের লোকসান গুনেছে। গত বছর তথা ২০২১ সালের প্রথমার্ধে (জানু-জুন ’২২) কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল প্রায় ৬৭ কোটি টাকা। সেখানে এ বছরের প্রথমার্ধ শেষে কোম্পানিটি ২০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা লোকসান করেছে।
গত সপ্তাহে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট তাদের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও কোম্পানির ওয়েবসাইটে এ প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেই প্রতিবেদন থেকেই অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কোম্পানিটির বড় ধরনের লোকসানে পড়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে কোম্পানিটির বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯৩০ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৯৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে কোম্পানিটির বিক্রি ৩০ কোটি টাকা কম ছিল।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানির পণ্য তৈরিতে খরচ আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭৮ কোটি টাকা। আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৮২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছর ৯৬০ কোটি টাকার পণ্য তৈরির পেছনে কোম্পানিটির যে খরচ ছিল, এ বছর তার চেয়ে কম টাকার পণ্য বিক্রি করেও খরচ বেশি করতে হয়েছে।
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি এ বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানির রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ বড় খরচ করতে হয়। যার কারণেও মুনাফা কমেছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। সিমেন্ট খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে সিমেন্টের কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া যেভাবে বেড়েছে, সেই তুলনায় সিমেন্টের দাম বাড়েনি। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। এসব সংকটের কারণে সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর মুনাফায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শুধু সিমেন্ট খাত নয়, উৎপাদন খাতের কোম্পানিগুলোর অবস্থাও প্রায় একই রকম। বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশের মুনাফায়ও বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। আগের বছরের চেয়ে সিঙ্গারের মুনাফা অর্ধেকের বেশি কমে গেছে।
এদিকে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট লোকসান করায় শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএসও ঋণাত্মক হয়ে গেছে। গত জুনে সমাপ্ত অর্ধবার্ষিক হিসাব অনুযায়ী, কোম্পানিটির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৬৩ পয়সা ঋণাত্মক। অথচ গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১১ টাকা ৭৯ পয়সা। মুনাফা থেকে লোকসানে চলে যাওয়ায় ডিএসইতে গত চার দিনে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের শেয়ারের দাম ১৪ টাকা কমে নেমে এসেছে ১৮৮ টাকায়।
/এসএ