কমতে পারে ডলারের দাম, কঠোর অবস্থানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
এ জেড ভূঁইয়া আনাস: করোনার সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আমদানি থেকে রপ্তানি কম হওয়াসহ নানা কারণে গত কয়েক মাস থেকে দেশের বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে নিত্য পণ্য আমদানিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সংকট নিরসণে বিলাসী পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে আমদানি কিছুটা কমায় ডলারের সংকট কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত জুন মাসে ৭৩৮ কোটি ডলার মূল্যমানের পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। আগের মাস মেতে যার পরিমাণ ছিল ৮২০ কোটি ডলার। অবশ্য জুন মাসে এলসি নিষ্পত্তি প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়ে ৮৫৫ কোটি ডলারে ওঠে। জুন মাসে নিষ্পত্তি হওয়া এলসির বড় অংশ আগে খোলা। আর এলসি খোলা কমে যাওয়ার মানে নিকট ভবিষ্যতে আমদানি ব্যয় কমবে।
বিশ্লেষকরা জানান, মূলত, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে আমেরিকান ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেলেও তা ডলারের সংকট মেটাতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এজন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে। তবে ডলারের যত চাহিদা তার অর্ধেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রি করে। বাকি ডলার অন্য ব্যাংক থেকে কিনতে হয়, যাতে দামও বেশি পড়ে। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে যাওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের ওপরও চাপ তৈরি হয়েছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত এখন ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, জুলাইতে এলসি আরও কমেছে। মূল্য বিবেচনায় ২৭ তারিখ পর্যন্ত কমার হার ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে এ সময় পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১৯০ কোটি ডলার। মাস শেষে রেমিট্যান্স ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আগের মাস জুনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৪ কোটি ডলার। তারা মনে করেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।
এবিবি চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বৃহস্পতিবার ব্র্যাক ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে আস্থার অভাব এবং বাজার অস্থির করে সেখান থেকে কিছু গোষ্ঠীর মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার কারণে অস্থিতিশীল ডলারের বাজার। তবে শিগগিরই ডলারের বাজার স্থিতিশীল হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে বেশ কিছু বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে পেট্রোলিয়ামসহ কিছু পণ্যের দাম কমে আসছে। দু-এক মাসের মধ্যে এর সুফল পাওয়া যাবে। তিনি মনে করেন, ডলারের বাজারের অস্থিতিশীলতা শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আসবে। অবশ্য এর মানে এই নয় যে, ডলারের দাম আবার ৮৪ টাকায় নেমে আসবে। দর নির্ভর করবে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর।
অন্যদিকে, খোলাবাজারে হু হু করে বাড়তে থাকা ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে ডলার নিয়ে কারসাজি করলে লাইসেন্স বাতিলসহ আইনে ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে জ্বালানি তেল ও ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে সার্বিকভাবে আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের ওপর চাপ পড়েছে। আবার রপ্তানি বাড়লেও তা আমদানির মতো নয়। প্রবাসী আয়ও বাড়েনি, বরং তা কমেছে। ফলে দেশে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রাটির দাম। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে খোলাবাজারের কিছু অসাধু মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি। এই অসাধুদের নিয়ন্ত্রণ করতেই এবং কেউ যেন ডলার কিনে মজুত করতে না পারে সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০টি পরিদর্শন দল গত বুধবার (২৮ জুলাই) থেকে অভিযান পরিচালনা করছে। এতে কিছু অনিয়ম খুঁজে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, চলমান ডলার সংকটের সময় ডলার নিয়ে কেউ কারসাজি করলে তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ টিম অভিযান পরিচালনা করছে। এই অভিযান অব্যহত থাকবে। আর যেসব লাইসেন্স বিহীন প্রতিষ্ঠান ডলার ক্রয় বিক্রয় করছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্যও আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছে। এছাড়া কেউ যাতে ডলার কিনে মজুদ করতে সে জন্য খেয়াল রাখতে গোয়েন্দা বাহিনীও কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।