কারা বসছে ডেল্টা লাইফের পর্ষদে
নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ জটিলতার অবসান ঘটিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জীবন বিমা কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নতুন পর্ষদ ঘটিত হতে যাচ্ছে। একই সাথে প্রত্যাহার করা হচ্ছে প্রশাসক। তবে নতুন পর্ষদকে অনেক শর্ত দিয়ে দিচ্ছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ)। সব ঠিক থাকলে আগামী ৪ আগস্ট নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নিবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে,বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সমাঝোতা হয়। তার অংশ হিসেবে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন ও প্রশাসক প্রত্যাহার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে আইডিআরএ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও ডেল্টা লাইফের সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও নতুন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনসহ কোম্পানি পরিচালনায় ১০টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ড করে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। পরে গত দেড় বছরে ৩ দফায় প্রশাসক পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে আছেন আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য কুদ্দুস খান।
নতুন পরিচালনা পর্ষদের থাকছেন যারা:
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার,ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. জুনায়েদ শফিক। পরিচালক হিসেবে থাকবেন কোম্পানিটির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আদিবা রহমান, সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সুরাইয়া রহমান ও জেয়াদ রহমান। এছাড়া সাকিব আজিজ চৌধুরী, চাকলাদার রেজানুল আলম এবং সাকিব আজাদ নতুন পর্ষদে যুক্ত হবেন।
ডেল্টা লাইফ পরিচালনায় ১০ সিদ্ধান্ত:
কোম্পানিটি পরিচালনায় নেয়া সিদ্ধান্তগুলো হলো- গত ২৪ জুলাই বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কোম্পানির নতুন পরিচালনা পর্ষদ বিদ্যমান সকল আইন পরিপালনপূর্বক সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে; কোম্পানির আর্থিক বিবরণী সম্পর্কিত তথ্যাদি উদঘাটনে নতুন করে অডিট ফার্মের মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পাদন করা যাবে।
ইতোপূর্বে নিরীক্ষণকৃত নিয়মাবলী শুনানি সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করা হবে; এক বছরে ব্যবসায়িক কৌশলপত্র প্রদান করা হবে এবং তার অগ্রগতি প্রতি ১ মাস অন্তর অন্তর কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করা হবে; অতিদ্রুত বীমা আইন ও অন্যান্য আরোপিত বিধি-নিষেধ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করে একজন দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য মুখ নিবাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ করা হবে।
পূর্বে যদি কোন অনিয়ম চিহ্নিত হয়ে থাকে তার কোন পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে মতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে; কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পূর্বের জরিমানা আইন অনুযায়ী বিবেচিত হবে; পরিচালনা পর্ষদে আগামী ৩০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত পর্যবেক্ষক হিসেবে মন্ত্রণালয়ের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি (যুগ্নসচিবের নিম্নে নয়) অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
চলমান মামলাসমূহ আগামী ৩১ আগস্ট ২০২২ তারিখের মধ্যে প্রত্যাহার করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে কর্তৃপক্ষের মামলাসমূহ নিষ্পত্তির বিষয়ে সহায়তা করা হবে এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রতি মাসে কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করা হবে। পারস্পরিক সমঝোতায় গঠিত নতুন পরিচালনা পর্ষদ আগামী বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করবে।
উল্লেখ্য, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে প্রশাসক নিয়োগের পর দফায় দফায় নিরীক্ষক নিয়োগ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। একইসাথে একেক সময়ে একেক ধরণের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও তোলা হয়। ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে দেয়া এক চিঠিতে আইডিআরএ জানায়, কোম্পানিটির ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এই আর্থিক অনিয়মের হিসাবের অসঙ্গতি নিয়ে দেশের অনেক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করে। এরপরই আরেকটি চিঠিতে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয় বিমা কোম্পানিটিতে ২৬শ’ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ তোলে ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষ এবং ঘুষ চাওয়ার ফোনালাপ গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। পরবর্তীতে আর্থিক অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতিসহ নানান অভিযোগ মাথায় নিয়ে গত ১৪ জুন পদত্যাগ করেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন।