আজ: রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০১ অগাস্ট ২০২২, সোমবার |

kidarkar

ডেল্টা লাইফের প্রশাসক প্রত্যাহার, আসছে নতুন পর্ষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জীবন বিমা কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে প্রত্যাহার হচ্ছে প্রশাসক। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে কোম্পানিটি পরিচালনারও নির্দেশ দিয়েছে।

সম্প্রতি ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক জেয়াদ রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি তার নিয়মিত কার্যক্রম চালাতে ব্যর্থ হয়েছে, পলিসিহোল্ডারদের বোনাস দিতে পারেনি যা তারা প্রাপ্য ছিল এবং শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদান করেনি কারণ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসকদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই কারণেই পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানির পলিসি হোল্ডারদের স্বার্থে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়।
জানা যায়, ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ড করে আইডিআরএ। কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে গত দেড় বছরে ৩ দফায় প্রশাসক পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে প্রশাসক হিসাবে দায়িত্বে আছেন আইডিআরএ-এর সাবেক সদস্য কুদ্দুস খান।
সূত্রমতে, ২৪ জুলাই আইডিআরএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সমাঝোতার মধ্য দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে আইডিআরএ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ডেল্টা লাইফের সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং নতুন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনসহ কোম্পানি পরিচালনায় ১০টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ সময় চলমান মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। নতুন পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার, ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. জুনায়েদ শফিক, পরিচালক সুরাইয়া রহমান, পরিচালক আদিবা রহমান (কোম্পানিটির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা), পরিচালক জেয়াদ রহমান, পরিচালক সাকিব আজিজ চৌধুরী, পরিচালক চাকলাদার রেজানুল আলম এবং পরিচালক সাকিব আজাদ।
উল্লেখ্য, ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সে প্রশাসক নিয়োগের পর দফায় দফায় নিরীক্ষক নিয়োগ করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে একেক সময় একেক ধরনের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও তোলা হয়। ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে দেওয়া এক চিঠিতে আইডিআরএ জানায়, কোম্পানিটির ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে আইডিআরএ-এর চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা ঘুস চাওয়ার অভিযোগ তোলে ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষ। ঘুস চাওয়ার ফোনালাপ গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। পরবর্তী সময়ে আর্থিক অনিয়ম, ঘুস-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ মাথায় নিয়ে ১৪ জুন পদত্যাগ করেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন। এরপর নতুন চেয়ারম্যান হন মোহাম্মদ জয়নুল বারী।
জানা যায়, ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগের পর গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ করে আইডিআরএ। এর আগে দুটি অডিট ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে মেসার্স হাওলাদার ইউনুস তাদের রিপোর্টে ২২টি এবং মেসার্স ফেমস অ্যান্ড চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ২৫টি অনিয়ম চিহ্নিত করে।
আর প্রশাসক নিয়োগের পর কোম্পানিটিতে ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য বিস্তারিত অডিট পরিচালনার লক্ষ্যে আজিজ হালিম চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস নামের দুটি অডিট ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত আজিজ হালিম চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস সুনির্দিষ্ট পাঁচটি বিষয়ের ওপর বিস্তারিত অডিট রিপোর্ট এবং একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ২৯টি আর্থিক অনিয়ম, বোর্ড গঠনে অনিয়ম, এজিএম সংক্রান্ত অনিয়ম এবং সেন্ট্রাল ডেটাবেজ থেকে ডেটা ডিলিটসহ একটি আংশিক রিপোর্ট প্রদান করেছে।
অডিট ফার্ম দুটির রিপোর্টে উঠে এসেছে এতে অভিনব পন্থায় অর্থ আত্মসাতের ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ভুয়া পলিসি নম্বর তৈরি করে কোম্পানির এমডি এবং পরিচালকরা কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় কোম্পানি থেকে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এমনকি এক পলিসির বিপরীতে একাধিকবার টাকা বের করারও তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়াও কোম্পানির তহবিল যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে বিদেশভ্রমণ, ডেল্টা লাইফের টাকায় গাড়ি কিনে একজন পরিচালক অন্য কোম্পানির কাজে ডেল্টা লাইফের টাকা ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে মঞ্জুরুর রহমান এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ৬৩৮ কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে। অডিট রিপোর্টে আরও জানা যায়, সাসপেন্ডকৃত ম্যানেজমেন্টের সময়ে ডেল্টা লাইফে ৩৫ কোটি টাকা ভ্যাট, ৩৩০ কোটি টাকা ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে।
এছাড়াও ভ্যাট কর্তৃপক্ষ এবং ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ডেল্টা লাইফে টাকা বকেয়া সংক্রান্ত চিঠিও দিয়েছে। অডিট রিপোর্টে আরও উঠে এসেছে যে, কোম্পানি থেকে ট্যাক্স ও ভ্যাটের খরচ বাবদ প্রচুর পরিমাণ টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে; কিন্তু ট্যাক্স ও ভ্যাট পরিশোধ করা হয়নি। আর এসব অভিযোগের মধ্যে নতুন পর্ষদ গঠিত হচ্ছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.