সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে এক লাখ আট হাজার কোটি টাকার
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্রসহ জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে এক লাখ আট হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋন নিয়েছে সরকার। এর বিপরিতে মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধ করেছে ৮৮ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। এতে অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারেরন নিট ঋণ দাড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যা বাজেট ঘাটতি মেটাতে এ খাতের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৬২ শতাংশ। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদহার কমানো হয়েছে। আবার ঘোষণার বাইরে সঞ্চয়পত্র থাকলে জেল-জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এ কারণে অনেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমিয়েছেন।
তথ্যমতে, একক মাস হিসেবে চলতি বছরের জুন মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে আট হাজার ৯৬২ কোটি। ফলে জুন মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়ায় এক হাজার ৭৪৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকার নিট ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। সেই হিসাবে ১২ মাসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঋণ এসেছে ৬২ দশমিক ২৩ শতাংশ।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেবে সরকার। গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান। তবে নতুন অর্থবছরে ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে গ্রাহকের আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা এ খাতের বিক্রি আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজেট উপস্থাপনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সংস্কার প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত মুনাফার ওপর নির্ভরশীল স্বল্প-আয়ের মানুষের স্বার্থ সমুন্নত রেখে ১৫ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সীমাভেদে ১ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফার হার কমানো হয়। এতে করে সঞ্চয়পত্র বাবদ সরকারের সুদ ব্যয় কমলেও ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের ক্ষেত্রে মুনাফার হার একই থাকবে।’
২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ৪২ হাজার কোটি টাকা নিট ঋণ নিয়েছিল সরকার, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতের নিট ঋণ ছিল ৪৯ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকার ঋণ নিয়েছিল ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
সম্প্রতি সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহক যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।