আজ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০২ অগাস্ট ২০২২, মঙ্গলবার |

kidarkar

অর্থনীতিতে স্বস্তি: রেমিট্যান্সের পর রপ্তানিতেও বড় উল্লম্ফন

শাহ আলম নূর : প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মতো রপ্তানি আয়েও বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ (প্রায় ৪ বিলিয়ন) ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা, যা গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি এসেছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ দুই সূচকে এমন ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। যা অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (০২ আগস্ট) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে রপ্তানি আয়ের এই তথ্য জানা গেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্থির বিশ্ব বাণিজ্য এবং কোরবানির ঈদের ছুটির কারণে আট-দশ দিন পোশাক কারখানাসহ অন্য সব কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও অর্থনীতির প্রধান দুই সূচকে এই উল্লম্ফন দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। তারা বলছেন, বর্তমানে এই সঙ্কটের সময় রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়াটা খুবই দরকার ছিল। এর মধ্য দিয়ে রিজার্ভ বাড়বে। ডলারের বাজারে যে অস্থিরতা চলছে, সেটাও কেটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। রেমিট্যান্সের পর রপ্তানি আয় বাড়ায় অর্থনীতিতে যে চাপ দেখা দিয়েছিল, তা অনেকটা কেটে যাবে বওে আশা করছেন তারা।

ইপিবি’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের পুরো মাসে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার (প্রায় ৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আয় হয়েছিল ৩৪৭ কোটি ৩৪ লাখ (৩.৪৭ বিলিয়ন) ডলার। এসময়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৯২ কোটি (৩.৯২ বিলিয়ন) ডলার। সেই হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর লক্ষ্যের চেয়ে বেড়েছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
তবে, জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। গত জুনে ৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল। জুলাই মাসে এসেছে ৩ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে ৫২ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। আগের অর্থবছরের (২০২০-২১) চেয়ে বেশি আয় হয়েছিল ৩৪ দশমিক৩৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।
এদিকে, জুলাই মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি। এই মাসে ২১০ কোটি (২.১০ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
মূলত পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই জুলাই মাসে রপ্তানি বেড়েছে। ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের জুলাই মাসের চেয়ে ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৬নদশমিক ৪৫ শতাংশ।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাইয়ে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৫০ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। যার মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ।
ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ। লক্ষ্যে চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। জুলাইয়ে পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।
নতুন অর্থবছরে পাট খাতেও আশা জাগানিয়া শুরু হয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে অন্য সব খাত ভালো করলেও কেবল পাট খাতেই রপ্তানি কমেছিল। ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ১০ হাজার ডলার দেশে এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে পাট খাত থেকে রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩ শতাংশের মতো কম এসেছিল।
অন্যান খাতের মধ্যে জুলাইয়ে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য, ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার ডলারের হোম টেক্সটাইল, ৯ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। হিমায়িত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হজার ডলার। ওষুধ রপ্তানি থেকে এসেছে ১ কোটি ৩১ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
এছাড়া, স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার, বাইসাইকেল ১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ডলার, ক্যাপ বা টুপি থেকে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, প্লাষ্ট্রিক পণ্য থেকে ১ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং হ্যান্ডিক্যাফট রপ্তানি থেকে ২৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.