আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৩ অগাস্ট ২০২২, বুধবার |

kidarkar

স্বস্তি এবার মূল্যস্ফীতিতেও

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। এ সময় মূল্যস্ফীতি ০.০৮ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ, যা জুন মাসে ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশে, যা আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

বুধবার (৩ আগস্ট) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের নিজ দপ্তরে জুলাই মাসের মূল্যস্ফীতির রিপোর্ট প্রকাশ করার সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাজারে চালের দাম বাড়েনি; কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমেছে। ভোজ্য তেলের দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা কমেছে। ডালের দাম বাড়েনি। এসব কারণে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুনে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জুলাইয়ে তা ০.০৮ শতাংশ পয়েন্ট কমে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এর অর্থ হলো গত বছরের জুলাই মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, এ বছর জুলাই মাসে তা কিনতে ১০৭ টাকা ৪৮ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। জুনে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে তাদের লেগেছে ১০৭ টাকা ৫৬ পয়সা। এর মধ্যে আবার খাদ্যের মূল্যস্ফীতি তুলনামূলক বেশি কমেছে। জুনে এই মূল্যস্ফীতি হয় ৮ শতাংশ ৩৭ শতাংশ। সেটি জুলাইয়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ।

আমদানি ব্যয় হ্রাস, রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পর এবার অর্থনীতিতে আরও একটি স্বস্তির খবর এসেছে। সেটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ওলোটপালট হয়ে যাওয়া অর্থনীতিতে আমদানি ব্যয় হ্রাস, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় বাড়ার খবরের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী হওয়ার খবর দেশের মানুষকে স্বস্তি দেবে বলে মনে করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছেন। রপ্তানি আয় বাড়ছে। রিজার্ভও বেড়েছে। যেটা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের ছিল, সেই আমদানি কমতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে বলে মনে হচ্ছে। অর্থনীতিতেও স্বস্তি ফিরে আসবে।

আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। সেই সঙ্গে শিগগিরই দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলতায় ফিরবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বুধবার অর্থনীতিবিষয়ক ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। কমে আসবে ডলারের দাম। বৈশ্বিক সংকটে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতায় রাখতে এই লক্ষ্যে অত্যাবশ্যকীয় নয়, এমন পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ করণীয় সবকিছুই করছে সরকার।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ মূল্যস্ফীতিকেও আমরা খুব শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।

অর্থনীতিকে আগের ধারায় নিয়ে যেতে পারব। আগে যেভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা দেশ ও অর্থনীতিবিদরা প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, বাংলাদেশ দ্রুতই সেই আগের অবস্থানে ফিরে যাবে। ইউরোপজুড়ে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি বিরাজ করছে। জানুয়ারিতে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.১ শতাংশ, এপ্রিলে তা হয়েছে ৭.৪ শতাংশ। জুলাইতে এটি ৮.৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সেসব দেশে খাদ্যসহ কাঁচামালের দাম বেড়েছে, আর আমরা তো ওদের থেকেই কিনি। এখন যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে তা পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে।
বিবিএসের প্রতিদেনে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে, যা জুন মাসে ছিল ৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। গ্রামে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, যা জুন মাসে ছিল ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে সেখানে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশে, যা জুন মাসে ছিল ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।

শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশে, যা জুন মাসে ছিল ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশে, যা জুন মাসে ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে শহরেও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এটি দাড়িয়েছে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশে, যা জুন মাসে ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.