আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১১ অগাস্ট ২০২২, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

আর্থিক খাতের দুর্বলতাই অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রধান সমস্যা হচ্ছে আর্থিক খাতের দুর্বলতা। আর্থিক খাতে র্দীঘদিন সংস্কার না হওয়ায় আমরা আর এগুতে পারছি না।
বৃহষ্পতিবার (১১ আগস্ট) সামষ্ঠিক অর্থনীতির সংকট নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলাপচারিতার শিরোনাম ছিল ‘বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসমুহ মোকাবিলায় একটি উত্তরণকালীন নীতি সমঝোতা খসড়া।
দেবপ্রিয় ভট্টাচায় বলেন, অর্থনীতিতে বর্তমানে যে সংকট দেখা দিয়েছে তা রোগের উপসর্গ মাত্র। রোগ ভিন্ন জায়গায়। সেটি হলো সংস্কার না হওয়া।

তিনি বলেন, আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায় সরকারকে ভর্তুকি কমাতে হচ্ছে। অথচ এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গরিব মানুষকে সুরক্ষা দিতে ভর্তুকি দেওয়া বেশি প্রয়োজন ছিল।
দেবপ্রিয় বলেন, ডলারের দাম বাড়বে কি বাড়বে না, ভর্তুকি দেয়া যাবে কি যাবে না, বিষয়টি বহিঃখাতের বিষয় নয়। সরকার শুধু রোগের উপশমের পেছনে দৌড়াচ্ছে, আসল রোগ কী, তা বলছে না।
তিনি বলেন, আমাদের রাজস্ব আহরণ অনেক কম। বড় দুর্বলতা এই জায়গাতেই। জিডিপির তুলনায় কর অনুপাত যদি ১৫ শতাংশ হতো, তাহলে এই সংকটকালে বাড়তি রাজস্ব দিয়ে সরকার জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারতো। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, যা করা হচ্ছে না।
অর্থনীতিতে যে সংকট চলছে, তা নিরসনে অন্তবর্তীকালীন নীতি সমঝোতার পরামর্শ নিয়েছেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি মনে করেন, সংকটকালে একটি বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে নীতি সমঝোতা বাস্তবায়ন করতে পারলে সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।

বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব বলতে কী বোঝাতে চান- এমন প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, অর্থনীতির চলমান সংকট কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে সরকার সংসদের ভেতরে ও বাইরে আলোচনা করতে পারে। প্রথমে মন্ত্রিসভায়, তারপর সংসদে এবং স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করতে হবে। সংসদের বাইরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে পারে।
এই আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায় দুই থেকে তিন বছরের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন অর্থনৈতিক নীতি সমঝোতা প্রয়োজন বলে মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এই নীতি সমঝোতায় নীতি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে। সেগুলো হলো- সামষ্ঠিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা; উৎপাদন ও কর্মসংস্থান অব্যাহত রাখা এবং গরিব মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া। এই নীতি প্রনয়ণ ঐক্যমতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। তাহলে আগামীতে যদি রাজনৈতিক টানাপোড়েন হয়, তখনো আর্থিক খাতকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে।
বর্তমান সংকটে শ্রমজীবী মানুষকে সুরক্ষা দিতে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য পরামর্শ দিয়ে বলেন, এই মুহুর্তে একটি জাতীয় মজুরি কমিশন গঠনের সময় হয়ে গেছে। তৈরি পোশাক শ্রমিকদের এখন মহার্ঘ ভাতা দেওয়া উচিত। বেশি বিনিময় হারের সুবিধা পাচ্ছেন পোশাক মালিকেরা। তাই এর একটি অংশ পোশাক শ্রমিকদের পাওয়া উচিত। কারণ, বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, নীতিনির্ধারকেরা অপরিপক্ক ও বিচ্ছিন্নভাবে কথা বলছেন। তারা বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলছেন। কেউ বলছেন, দুই মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ঠিক হয়ে যাবে, কেউ বলছেন ২০২৪ সালের আগে ঠিক হবে না। আবার কেউ বলছেন, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেবে না, কেউ বলছেন নেবে। এসব কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, নীতি প্রনয়নের মধ্যে রাজনীতিবিদেরা নেই, আমলানির্ভর নীতি প্রনয়ন হচ্ছে।
আইএমএফের ঋণ পাওয়ার পূর্বশত হিসেবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি বাড়ানো হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কেউ যদি বলেন, আইএমএফের শর্তে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মানে, দেশ নীতি সার্বভৌমত্ব হারিয়ে ফেলেছে। কোনো সরকারের জন্য এটি সম্মানজনক নয়। তবে এই ধরনের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রাক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এই সময়ে তিনি বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপের উদাহরণ দেন। তিনি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিকে ‘অনভিপ্রেত ও অবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে করেন।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.