আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২০ অগাস্ট ২০২২, শনিবার |

kidarkar

কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক, নিয়ন্ত্রণে ডলার বাজার

এ জেড ভূঁইয়া আনাস: বাজারে মার্কিন ডলারের সংকট। এটিকে পুঁজি করে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে বেশ কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি। অনেকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার মজুত করে হাতিয়ে নিয়েছে বড় অংকের মুনাফা। এতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়েছে ডলার। অভিযোগ উঠেছে, মানি এক্সচেঞ্জগুলোর পাশাপাশি কোনো কোনো ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ৭৭০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে। পরে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে স্বস্তি ফিরেছে ডলারে দামে। প্রতি ডলারে দাম কমেছে ১০ টাকা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের আগস্টে আন্তব্যাংক বাজারে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। গতকাল দাম ওঠে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায়। ফলে নয় মাসের কম সময়ে আন্তব্যাংকেই ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ২ টাকা ৭০ পয়সা। এর মধ্যে ১ টাকা ৩০ পয়সাই বেড়েছে গত ২০ দিনের ব্যবধানে। বাংলাদেশ ব্যাংক ১৬ মে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান আবারও ৮০ পয়সা কমিয়ে দেয়। অর্থাৎ প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা আর ৯ মে ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডলারের বিনিময়মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করা হয়েছিল। ২৩ মার্চ ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়। ২৭ এপ্রিল বাড়ানো হয় ২৫ পয়সা। ডলারের দর সমন্বয় করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে খোলাবাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রির্জাভ ভেঙে বাজারে ডলার ছাড়ে। কিন্তু এতেও কোন কাজে আসেনি। কারণ কিছু মানি এক্সচেঞ্জ ও ব্যাংক ডলার মজুদ করে বেশি দরে ডলার বিক্রি শুরু করে। পরে কঠোর অবস্থানে যায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ২৮ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘খোলাবাজারে এক ডলারের বিপরীতে দিতে হচ্ছে ১১২ থেকে ১১৪ টাকা এমন খবর পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০টি দল মানি চেঞ্জার হাউজগুলোতে তদারকি চালায়। ডলার সংরক্ষণ এবং লেনদেনের তথ্যও সংগ্রহ করা হয়৷ বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত ডলারের জোগান দেওয়া হচ্ছে। তারপরও ব্যাংক আর খোলাবাজারে ডলারের ব্যবধান অস্বাভাবিক। এখানে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে কি না সেটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

পরে গত ২ আগস্ট সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স স্থগিত করার পাশাপা‌শি ৪২টি‌কে কারণ দর্শাতে বলা হ‌য়। লাইসেন্স না থাকায় আরও ৯ মানি এক্সচেঞ্জকে সিলগালা করে দেওয়া হয়। এছাড়া ডলার কারসাজি ও হুন্ডি থামাতে ব্যাংক এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলোর উপরও নজরদারি বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এরপর গত ৮ আগস্ট ডলারের কারসাজির প্রমাণ পাওয়ায় ৬ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবুও গত ১৪ আগস্ট দেশের ইতিহাসে সব রেকর্ড ভেঙ্গে ১২২ টাকা দরে ডলার বিক্রি হয়। পরে কারসাজির নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর অবস্থানে যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ট্রেজারি-প্রধানদের অপসারণের নির্দেশনার পর এবার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির ‘প্রমাণ পাওয়ায়’ ১৭ আগস্ট ছয়টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরও অন্তত ৬ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে দেশে ডলারের সংকট কাটাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানিতে দেওয়া হয়েছে নানা শর্ত। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে দেওয়া হয়েছে নীতিগত ছাড়। এছাড়া ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ডলার কারসাজির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ধরতে চালাচ্ছে অভিযান। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে বাজারে আরও স্থিতিশীলতা আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুধবার (১৭ আগস্ট) মানি এক্সচেঞ্জগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ দেড় টাকা মুনাফার সীমা ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা বৈঠক করে। সেখানে বলা হয় ব্যাংকগুলো ডলার কেনা-বেচায় কত টাকা মুনাফা করবে তা তারা নিজেরাই ঠিক করবে। তবে বেচাকেনার মধ্যে পার্থক্য যেন এক টাকার বেশি না হয়। এসব পদক্ষেপের কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখাপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মানি এক্সচেঞ্জগুলোকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গড় রেট থেকে এক টাকা বেশি দামে ডলার ক্রয় করে সর্বোচ্চ দেড় টাকা মুনাফা করতে বলা হয়েছে। এর আগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ মুনাফার সীমা এক টাকা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ম না মানলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডলারের সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.