আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৪ অগাস্ট ২০২২, বুধবার |

kidarkar

পি কে হালদারের দুই সহযোগী

গ্রাহকের ৬৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন শারমিন-তানিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল) কোম্পানির প্রায় দুইশো কোটি টাকা আত্মসাতকারী পি কে হালদারের প্রতারক দুই নারী সহযোগীকে দেশত্যাগের আগে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গ্রেফতাররা হলেন- শারমিন আহমেদ (৪২) ও তানিয়া আহমেদ (৩৭)। সম্পর্কে তারা আপন বোন।

র‌্যাব জানায়, পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী পিএলএফএসএল কোম্পানির পরিচালক খবির উদ্দিন। শারমিন ও তানিয়া খবির উদ্দিনের মেয়ে। বাবার মাধ্যমেই তারা ঋণ নেন। প্রায় দেড় যুগ ধরে কানাডায় অবস্থান করে শারমিন ৩১ কোটি ও তানিয়া ৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করেন। গত ২৮ জুলাই দুই বোন কানাডা থেকে দেশে ফেরেন। আজ (বুধবার) তাদের গোপনে কানাডার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু গোপন নগরদারির ভিত্তিতে বুধবার ভোররাতে রাজধানীর ধানমন্ডি ও শ্যামলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আর্থিক খাতে আলোচিত নাম প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার। তিনি দেশের আর্থিক খাতের শীর্ষ দখলদার ও খেলাপিদের মধ্যে অন্যতম একজন। গত ১৪ মে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে তাকে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী গ্রেফতার করে। ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস্ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীকালে নানা অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির কারণে ২০১৯ সালে কোম্পানিটির সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসময় আদালত পি কে হালদারসহ প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পনোয়ানা জারি করেন।

প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ছয় হাজার ব্যক্তি/শ্রেণির আমানত রয়েছে এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আটকা পড়েছে। এ টাকার পুরোটাই পিপলস্ ঋণ হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা। এ অর্থের একটি বড় অংশ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা বিভিন্ন নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পিএলএফএসএল কোম্পানির পরিচালক খবির উদ্দিন পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী। তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। এসময়ে নিজে প্রায় ২০০ কোটি টাকা পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীকালে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এ পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

চলতি বছরের ৭ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির ঋণ খেলাপিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। নির্ধারিত দিনে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় গত ১৯ এপ্রিল আদালত তাদের গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেন। পরে র‌্যাব জানতে পারে, প্রতিষ্ঠানের দুজন ঋণখেলাপি বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এরপরই র‌্যাব তাদের গ্রেফতার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ভোরে র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর অভিযানে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে পিপলস্ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির ঋণখেলাপি শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে গ্রেফতাররা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আত্মসাতের উদ্দেশে ঋণ নেওয়ার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দেন।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানান, তারা তাদের বাবার প্রতিষ্ঠানটির সাবেক পরিচালক খবির উদ্দিনের মাধ্যমে ঋণ নিয়েছেন। প্রায় দেড় যুগ ধরে কানাডায় অবস্থান করে গ্রেফতার শারমিন ৩১ কোটি ও গ্রেফতার তানিয়া ৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তারা গত ২৮ জুলাই কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসেন এবং বুধবার গোপনে কানাডার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগের পরিকল্পনা ছিল তাদের।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.