আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৪ অগাস্ট ২০২২, বুধবার |

kidarkar

চরম সংকটে চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংক

এ জেড ভূঁইয়া আনাস: কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেয়া এবং সেবায় নতুনত্ব আনার শর্তে ২০১২ ও ১৩ সালে ৯ ব্যাংককে অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি অনুমোদনের তিন বছরের মাথায় দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা ছিল এ ব্যাংকগুলোর। কিন্তু এসব শর্তের কোনোটাই পুরণ করতে পারেনি। এক কথায়, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে বাজারে আসা চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংক রয়েছে চরম সংকটে।

আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে চতুর্থ প্রজন্মের এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বোঝা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৮১০ কোটি টাকা। তবে পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সাল শেষে এক হাজার ১৫০ কোটি ছিল তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ। সুতরাং পাঁচ বছরের ব্যবধানে খেলাপি বৃদ্ধি পেয়েছে পাঁচ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। হিসাব বলছে আলোচ্য সময়ে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার ৮৩ শতাংশ। পক্ষান্তরে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ঋণ বিতরণ। অর্থাৎ চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোতে বিতরণের তুলনায় খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার অনেক বেশি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক নির্দেশনার পরও শৃঙ্খলার মধ্যে আসেনি তারা। অনিয়ম-দুর্নীতি ও পরিবারতন্ত্র জেঁকে বসেছে এই ব্যাংগুলোর ঘাড়ে। ফলে হুমকিতে পড়েছে এসব ব্যাংক, ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে আর্থিক খাত। রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব ব্যাংককে লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণেই নিয়ম মানার কোনো তোয়াক্কা করছে না তারা। এসব সমস্যা সমাধানে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালাউদ্দিন আহমেদ শেয়ারবাজার নিউজকে বলেন, চতুর্থ প্রজন্মের এই ব্যাংকগুলোকে যে শর্তে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল তার কোনটিই মানা হয়নি। মূলত রাজনৈতিক কারণে এসব ব্যাংকগুলোর উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকও হস্তক্ষেপ করতে পারছে না। যে কারণে এ ব্যাংকগুলো দিন দিন সংকটে পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, এসব ব্যাংকের সংকট কাটাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এদের উপর নজরদারি জোরদার করতে হবে। এছাড়া এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ব্যাংকগুলোকে বর্তমানে যে ব্যাংক ভালো অবস্থানে রয়েছে তাদের সাথে মার্জ করে দেওয়া যেতে পারে। অথবা ভালো ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট যদি থাকে ওই ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটগুলোকে এসব ব্যাংকের সাথে মার্জ করে দিয়ে একটি ভালো ব্যাংক গঠন করা যেতে পারে।

এদিকে নতুন ব্যাংকগুলো কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণেও পিছিয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পদ্মা ব্যাংকের। ব্যাংক অনুমোদনের সময় কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ প্রধান শর্ত থাকলেও গত অর্থবছরে এখাতো কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। কারণ কাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেও ব্যাংটির কৃষি ও পল্লী ঋণের কোনো তথ্য নেই। তাছাড়া পদ্মা ব্যাংকের ওয়েবসাইটেও কৃষি ঋণ সংক্রান্ত কোনো পন্যের বিবরণ নেই। সুতরাং কৃষি ঋণ বিতরণে অনাগ্রহী। এছাড়া গত অর্থবছরে ইউনিয়ন ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ১৯ শতাংশ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগার তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৬৮ শতাংশ। কারণ গত জুন শেষে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিন হাজার ৯৫০ কোটি টাকা খিলাপি হয়ে পড়েছে। কিন্তু পাঁচ বছর আগেও ব্যাংকটির ঋণ বিতরণের পরিমাণে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। কারণ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে পদ্মা বা সাবেক ফার্মারস ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ১৩০ কোটি। এর মধ্যে খেলাপি ছিল ৭২৩ কোটি টাকা। সুতরাং সে সময় খেলাপি ঋণের হার ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ।

ইউনিয়ন ব্যাংকের বর্তমান খেলাপির পরিমাণ ৭১২ কোটি যা মোট ঋণের প্রায় চার শতাংশ। তবে পাঁচ বছর আগে ব্যাংকের খেলাপির হার ছিল শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে মেঘনা ব্যাংকের ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল মাত্র ৯৩ কোটি, যা বিতরণকৃত ঋণের প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ। হালাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে মেঘনা ব্যাংকের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ২৪১ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের প্রায় ৬ শতাংশ।

এবছরের জুন শেষে চার হাজার ৭৯০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে মিডল্যান্ড ব্যাংক। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১৬২ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী খেলাপি ঋণ বিতরণকৃত মোট ঋণের প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ। বর্তমানে মধুমতি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার তিন দশমিক ৪৩ শতাংশ। কারণ চলতি বছরের জুন শেষে পাঁচ হাজার ২৫৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে মধুমতি ব্যাংক। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১৮০ কোটি টাকা। যদিও পাঁচ বছর আগে ব্যাংকের খেলাপির হার ছিল একেবারেই নগণ্য। কারণ ১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকের বিতরণ ছিল দুই হাজার ৭৯০ কোটি। যেখানে খেলাপি ছিল মাত্র ৯ কোটি টাকা।

বর্তমানে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের বিতরণের পরিমাণ সাত হাজার ৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৪১৮ কোটি যা বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ছয় ভাগ। পাঁচ বছর আগে ব্যাংকের ঋণ ছিল চার হাজার ৩০৬ কোটি। যার মধ্যে খেলাপি ছিল মাত্র ৩১ কোটি টাকা। বর্তমানে এনআরবি ব্যাংকের মোট খেলাপির পরিমাণ ২১৫ কোটি। যা বিতরণকৃত ঋণের চার দশমিক ৫২ ভাগ। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পিলাপি ঋণ ৩৩০ কোটি এবং এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার প্রায় পাঁচ শতাংশ। অঙ্কে যার পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকা।

তথ্য মতে, ব্যাংক অনুমোদনের প্রথম তিন বছরের মধ্যেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা ছিল এই নয় ব্যাংকের। কিন্তু ১০ বছর অতিক্রম করলেও এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পেরেছে মাত্র তিনটি ব্যাংক। সেগুলো হলো সাউথ বাংলা এন্ড এগ্রিকালচার, এনআরবি কমার্শিয়াল এবং ইউনিয়ন ব্যাংক। বাকিরা এখনও তালিকাভুক্ত হতে পারেনি।

৪ উত্তর “চরম সংকটে চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংক”

  • মোঃসালাহ্উদ্দিন says:

    বাংলাদেশে এতগুলো বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কি খুবই প্রয়োজন ছিল না সাধারণ জনগনের কষ্টের টাকা নয় ছয় করার জন্যই এতগুলো ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া হয়েছে ?

  • খো হাবিবুর রহমান says:

    এসব সবই সরকারের অদক্ষতা। কারণ সরকারী করা নজরদারি হলে জবাব দিহিতা থাকলে,ব্যাংকের কেন্দ্রীয় জমা টাকার বাইরে কি করে ব্যাংক গুলো মানুষকে সীমাহীন ঋন দেয়। মনে হয় যৌথ যোগসাজশে এসব টাকার লোপাট হয়েছে।

  • Anonymous says:

    এ গুলো ব্যাংক নহে, টাকা পাচারের কারখানা,দেশের মেহনতি মানুষের টাকা সরকারের সহায়তায় সুইস ব্যাংকে পাচার করা হয়েছে। এর জন্য দ্বায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং সরকারের মন্ত্রীরা । ওদের বিচার হবে একদিন এই বঙ্গঁবন্ধুর সোনার বাংলাতে।

  • Anonymous says:

    ARO KICHU BANK ER PERMISION DEWA HOK, JATE KORE DESHER BAROTA BAJATE SUBUDHA HOY.

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.