আজ: শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ইং, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

৩০ অগাস্ট ২০২২, মঙ্গলবার |

kidarkar

বিশ্বের অর্ধেক স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনা স্বাস্থ্যসম্মত নয়: জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বের অর্ধেক স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনায় মৌলিক পরিচ্ছন্নতা পরিষেবার অভাব রয়েছে। অর্থাৎ এসব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে (হাসপাতাল, ক্লিনিক ও অন্যান্য স্থান) স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী যেমন- হ্যান্ড স্যানিটাইজার, বিশুদ্ধ পানি ও সাবানের তীব্র অভাব রয়েছে। আর এর ফলে বিশ্বের প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন। মঙ্গলবার জাতিসংঘের স্বাস্থ্য ও শিশুবিষয়ক দুটি সংস্থার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলছে, যেসব স্থাপনায় রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং রোগীরা যে টয়লেট ব্যবহার করেন, সেসব স্থানে পানি এবং সাবান বা অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজারও নেই।

জাতিসংঘের এই দুই সংস্থার যৌথ পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় ৩৮৫ কোটি মানুষ এসব স্থাপনা ব্যবহার করেন এবং তারা নিজেদের সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে ফেলছেন। এমনকি তাদের মধ্যে প্রায় ৬৮ কোটি ৮০ লাখ মানুষ যেসব স্থাপনায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন, সেখানে জীবাণুনাশক সামগ্রী বা হাইজিন পরিষেবা একেবারেই ছিল না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিভাগের পরিচালক ডা. মারিয়া নাইরা বলেন, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা এবং সেগুলোর চর্চা নিয়ে কোনও আপোষ নয়। মহামারি পরবর্তী পুনরুদ্ধার, সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং প্রস্তুতির জন্য এসব অপরিহার্য।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনার স্বাস্থ্যবিধিতে নিরাপদ পানি, পরিষ্কার টয়লেট এবং স্বাস্থ্যসেবার বর্জ্য নিরাপদে অপসারণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব মৌলিক ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে সুরক্ষা বৃদ্ধি করতে হবে।

বিশ্বের ৪০টি দেশের স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধির ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। যাকে ‌‘আশঙ্কাজনক চিত্র’ বলছে ডব্লিউএইচও ও ইউনিসেফ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৬৮ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনায় রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়। এছাড়া ৬৫ শতাংশ স্থাপনায় টয়লেটে পানি এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে মাত্র ৫১ শতাংশ স্থাপনায় স্বাস্থ্যবিধি পালন এবং টয়লেটে পানি ও সাবান— উভয়ই রয়েছে। আর এসব স্থাপনা মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি সেবার মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হয়েছে। তবে বিশ্বের প্রায় ৯ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনায় স্বাস্থ্যবিধির কোনও বালাই নেই।

ইউনিসেফের কর্মকর্তা কেলি অ্যান নেইলর বলেছেন, যদি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের স্বাস্থ্যবিধি পরিষেবা না থাকে, তাহলে রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। তিনি বলেন, ‘নিরাপদ পানি, মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটেশন পরিষেবা ছাড়া হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো গর্ভবতী মা, নবজাতক এবং শিশুদের জন্য একটি সম্ভাব্য মরণ ফাঁদ।’

ইউনিসেফের এই কর্মকর্তা বলেছেন, প্রত্যেক বছর বিশ্বজুুড়ে প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজার নবজাতকের প্রাণ যায় কেবল সংক্রমণের কারণে। কিন্তু এই শিশুদের মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনার বেহাল দশায় সবার চেয়ে পিছিয়ে আছে আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চল। এই অঞ্চলের মাত্র ৩৭ শতাংশ টয়লেটে সাবান এবং পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আর স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ৫৩ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনায় সুরক্ষিত পানির উৎসের পরিষেবা আছে।

বিশ্বজুড়ে শহরাঞ্চলের প্রায় তিন শতাংশ এবং গ্রামীণ এলাকার ১১ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনায় পানির কোনও ব্যবস্থাই নেই। এছাড়া অনেক স্থাপনায় পরিবেশগত মৌলিক পরিচ্ছন্নতা, পৃথক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে।

স্টকহোমে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াটার উইকের’ বার্ষিক সম্মেলনে যৌথ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। চলমান এই সম্মেলন আগামী বৃহস্পতিবার শেষ হবে।

সূত্র: এএফপি।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.