আজ: শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

জিনজিয়াংয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করে থাকতে পারে চীন : জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনের জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি বিস্ফোরক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ওই রিপোর্টে, চীনকে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বুধবার (৩১ আগস্ট) গভীর রাতে এই রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়।

অবশ্য প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আগেই আহ্বান জানিয়েছিল চীন। তবে সেই আহ্বান ব্যর্থ হওয়ার পর এখন বেইজিং এই রিপোর্টেকে পশ্চিমাদের সাজানো ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করেছে। বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, জিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর মুসলিম এবং অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে চীনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে মূলত সেসবই মূল্যায়ন করা হয়েছে। মূলত উইঘুর মুসলিমসহ অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি চীন বরাবরই অস্বীকার করে থাকে।

তবে তদন্তকারীরা বলছেন, তারা চীনা কর্তৃপক্ষের নির্যাতনের ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ উন্মোচন করেছেন এবং সেগুলো সম্ভবত ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’। তারা সংখ্যালঘুদের অধিকারকে দমন করার জন্য অস্পষ্ট জাতীয় নিরাপত্তা আইন ব্যবহার এবং ‘স্বেচ্ছাচারীভাবে আটকের ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠার জন্য চীনকে অভিযুক্ত করেছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে অনুমোদিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দিদের নির্যাতন এবং তাদের সাথে করা ‘অপরাধের নিদর্শনের’ মধ্যে ‘যৌন ও লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার ঘটনাও’ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, নির্বিচার বন্দিত্বের শিকার ভুক্তভোগীরা জোরপূর্বক চিকিৎসা এবং ‘পরিবার পরিকল্পনা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতির বৈষম্যমূলক প্রয়োগের’ সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

জাতিসংঘ সুপারিশ করেছে, চীনকে অবিলম্বে ‘স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত সকল ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার’ পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে বেইজিংয়ের কিছু পদক্ষেপ ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ-সহ আন্তর্জাতিক অপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে’ বলে ইঙ্গিত দিয়েছে সংস্থাটি।

যদিও জাতিসংঘ বলছে, চীনা সরকার ঠিক কত লোককে আটক করেছে তা নিশ্চিত করা যায়নি, তবে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর অনুমান, উত্তর-পূর্ব চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলের শিবিরে ১০ লাখেরও বেশি লোককে আটক করে রাখা হতে পারে।

বিবিসি বলছে, জিনজিয়াংয়ে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ উইঘুর বসবাস করেন। সংখ্যালঘু এই জাতিগোষ্ঠীর বেশিরভাগই মুসলিম। জাতিসংঘ বলেছে, উইঘুরদের অমুসলিম সদস্যরাও রিপোর্টের উল্লেখিত বিষয়গুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বেশ কয়েকটি দেশ এর আগে জিনজিয়াংয়ে চীনের পদক্ষেপকে গণহত্যা বলে আখ্যায়িত করেছিল। তবে জিনজিয়াং অঞ্চলে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে বেইজিং। দেশটির দাবি, জিনজিয়াংয়ের ক্যাম্প বা বন্দিশিবিরগুলো সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি হাতিয়ার।

রিপোর্টে বেইজিং, জাতিসংঘ এবং বৃহত্তর বিশ্বকে জিনজিয়াংয়ের পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘মানবাধিকার পরিস্থিতির জন্য সরকার, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও বিস্তৃতভাবে জরুরি মনোযোগ প্রয়োজন।’

তবে, রিপোর্টে গণহত্যার কোনো উল্লেখ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর মূল অভিযোগগুলোর মধ্যে এটি ছিল অন্যতম।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান হিসেবে চার বছর দায়িত্বপালনের পর মিশেল ব্যাচেলেটের মেয়াদের শেষ দিনে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। উইঘুরদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগটি তার মেয়াদে প্রাধান্য পেয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রায় এক বছর ধরে এই রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। যদিও এই রিপোর্ট প্রকাশ না করার জন্য যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছিল বেইজিং। তবে চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট রিপোর্টটি প্রকাশে বদ্ধপরিকর ছিলেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমি বলেছিলাম যে আমার মেয়াদকাল শেষ হওয়ার আগেই আমি এটি প্রকাশ করব এবং আমি তা করেছি।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাচেলেট স্বীকার করেন, প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করার জন্য প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলেন তিনি। অবশ্য এই রিপোর্ট প্রকাশ হতেই বিরোধিতায় নেমে পড়েছে চীন।

জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন বলেছেন, ‘তথাকথিত জিনজিয়াং ইস্যুটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে সম্পূর্ণ বানানো এবং এর উদ্দেশ্য অবশ্যই চীনের স্থিতিশীলতা নষ্ট করা এবং চীনের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা। পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে না পড়ে ব্যাচেলেটের স্বাধীন থাকা উচিত ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই রিপোর্ট কেবল জাতিসংঘ এবং একটি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতাকে ক্ষুণ্ন করে। এটি চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পুরোপুরি হস্তক্ষেপ।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.