আজ: শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, শনিবার |

kidarkar

চাল রপ্তানিতে শুল্কের সঙ্গে শঙ্কাও বাড়ালো ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিভিন্ন ধরনের চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পাশাপাশি শতভাগ ভাঙা চাল বা খুদ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত।

রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে এই বিধিনিষেধ কার্যকর করার মধ্য দিয়ে নিজেদের বাজারে চালের যোগান বৃদ্ধি এবং দাম স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বিশ্বের শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক দেশটি।

পৃথিবীর ১৫০টির বেশি দেশে চাল রপ্তানি করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত। কিন্তু এবারের বর্ষা মওসুমে গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হওয়ায় ভারতের ফসলের উৎপাদনেও প্রভাব পড়েছে।

ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে এমনিতেই খাদ্যশষ্যের আন্তর্জাতিক বাজার চড়ে আছে। তার ওপর চাল উৎপাদনকারী বিভিন্ন দেশে খরা, তাপদাহ আর বন্যার কারণে এ মৌসুমে ফসল মার খাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ভারত যেভাবে ‘অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর’ চেষ্টা করছে, তাতে আন্তর্জাতিক বাজারে চাপ তৈরি হবে।

রয়টার্স জানিয়েছে , শুল্ক বাড়ায় ভারত থেকে চাল কেনা কমবে; ক্রেতারা এশিয়ার অন্যতম চাল উৎপাদনকারী দেশ থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের দিকে ঝুঁকবে, যারা চালের চালান ও দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।

ভারত সরকার ২০ শতাংশ রপ্তানি শুল্কের তালিকা থেকে সিদ্ধ ও বাসমতি চাল বাদ রেখেছে। শুক্রবার থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে।

সেই সঙ্গে সম্পূর্ণ ভাঙা চাল বা খুদ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দিল্লি। আফ্রিকার কিছু গরীব দেশ মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণে ওই খুদ আমদানি করে। তবে মূলত হাঁস-মুরগি বা মাছের খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এই ভাঙা চাল।

সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশ পাকিস্তান চালসহ কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

অন্যদিকে অগাস্টের শেষ দিকে রেকর্ড তাপপ্রবাহ বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল আমদানিকারক দেশ চীনে ধান উৎপাদনে প্রভাব ফেলেছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, এ বছর পাকিস্তানে ৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, বন্যার কারণে তা প্রায় ১০ শতাংশ কম হতে পারে। খরার কারণে চীনেও চালের উৎপাদন মার খাবে, তবে পরিমাণ এখনও স্পষ্ট নয়।

বিশ্লেষকদের বরাতে রয়টার্স এর আগে বলেছিল, ভারত যদি সরবরাহ বাড়ায়, তাহলে হয়ত পাকিস্তান ও চীনের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব, তাতে এশিয়ার বাজারে চালের দামেও স্থিতিশীলতা আসতে পারে। কিন্তু ভারতের শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সেই আশার জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে।

অল ইন্ডিয়া রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বিভি কৃষ্ণ রাও বলেছেন, এই শুল্ক সাদা ও বাদামি চালেও প্রভাব ফেলবে, যেগুলো ভারতের মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশ।

বিশ্বে মোট চাল রপ্তানির ৪০ শতাংশের বেশি যোগান দেয় ভারত। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও মিয়ানমার।

এবারের মওসুমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তর প্রদেশে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ধানের উৎপাদনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশটি ইতোমধ্যে গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে, চিনি রপ্তানি সীমিত করেছে।

ভারতের চাল রপ্তানির বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান সত্যায়াম বালাজির নির্বাহী পরিচালক হিমাংশু আগারওয়াল বলেন, “শুল্কের কারণে ভারতের রপ্তানি সামনের মাসগুলোতে ২৫ শতাংশ কমে যাবে।”

রপ্তানিকারকরা চাল রপ্তানিতে সরকারি সহায়তা চান জানিয়ে আগারওয়াল বলেন, “ক্রেতারা আগের মূল্যের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি দেবে না। আর বিক্রেতারাও কর পরিশোধ করার সামর্থ্য রাখে না। সরকারের উচিত ইতোমধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো থেকে কর বাদ দেওয়া।”

ভারত ২০২১ সালে রেকর্ড ২১ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন চাল রপ্তানি করেছে, যা যৌথভাবে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি।

মুম্বাইভিত্তিক এক ডিলার রয়টার্সকে বলেছেন, ভারত নাইজেরিয়া, বেনিন ও ক্যামেরুনের মতো আফ্রিকার দেশগুলোতে সবচেয়ে সস্তা চাল সরবরাহকারী হয়েছে এবং গম ভুট্টার দামে স্থিতিশীলতা রেখেছে।

“চাল বাদে সব খাদ্যশস্যের দাম বাড়ছিল। কিন্তু এখন চালও সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। ভাঙা চালে নিষেধাজ্ঞা চীনের পোল্ট্রি ফিডে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।”

চীন ভাঙা চালের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ২০২১ সালে ১ দশমিক ১ মিলিয়ন টন ভাঙা চাল আমদানি করেছিল দেশটি। সেনেগাল ও জিবুতির মতো আফ্রিকার দেশগুলো জনগণের খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় এসব চাল কিনে থাকে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.