আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, রবিবার |

kidarkar

তিন মাসে ওরিয়ন ইনফিউশনের দাম বেড়েছে ৪২১ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ার দাম বাড়ছেই। গত কয়েক মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে, যা এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীদের অনেকের কাছে হয়ে উঠেছে রূপকথার ‘আলাদিনের চেরাগ’।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাত্র ১৭ কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে তিনগুণ। আর তিন মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৪২১ শতাংশের বেশি।

প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এ মূল্যবৃদ্ধিকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এজন্য ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে একাধিকবার বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু সেই সতর্কবার্তায়ও বিশেষ কাজ হচ্ছে না। বরং পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে কোম্পানিটির শেয়ার দাম।

কারসাজির মাধ্যমে কোনো বিশেষ চক্র কোম্পানিটির শেয়ার দাম এভাবে বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার দাম যেভাবে বেড়েছে, তা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। এর পেছনে কারসাজি চক্র জড়িত থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) খতিয়ে দেখা উচিত।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৪ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ১২৯ টাকা ১০ পয়সা। সেখান থেকে টানা বেড়ে ৮ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৪১৯ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসের কম সময়ে বা মাত্র ১৭ কার্যদিবসে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৮৯ টাকা ৯০ পয়সা বা ২২৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

সবশেষ ১৭ কার্যদিবসই নয়, কোম্পানিটির শেয়ার দাম তিন মাস ধরেই বাড়ছে। এর মধ্যে গত ২০ জুন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৮০ টাকা ৪০ পয়সা। অর্থাৎ তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৩৮ টাকা ৬০ পয়সা বা ৪২১ দশমিক ১৪ শতাংশ।

অন্যভাবে বললে এক মাসের কম সময়ের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে তিনগুণের বেশি এবং তিন মাসের মধ্যে পাঁচগুণের বেশি। এ হিসাবে ২০ জুন যে বিনিয়োগকারীর কাছে ওরিয়ন ইনফিউশনের ১০ লাখ টাকার শেয়ার ছিল, তিনি যদি ওই শেয়ার ধরে রাখেন তাহলে এর দাম এখন ৫২ লাখ ১১ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১০ লাখ টাকা তিন মাস খাটিয়েই লাভ পাওয়া যাচ্ছে ৪২ লাখ ১১ হাজার টাকা।

তিন মাসের পরিবর্তে যদি কোনো বিনিয়োগকারী এক মাসও ওই শেয়ার ধরে রাখেন তাতেও লাভের পরিমাণ নেহায়েত কম নয়। কোনো বিনিয়োগকারী ১৪ আগস্ট ওরিয়ন ইনফিউশনের ১০ লাখ টাকার শেয়ার কিনলে এবং তা রাখলে সেই শেয়ারের দাম এখন বেড়ে হয়েছে ৩২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১০ লাখ টাকা এক মাসেরও কম খাটিয়ে লাভ পাওয়া যাচ্ছে ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দামের এই লাগামহীন উত্থানে যেন ‘আলাদিনের চেরাগ’ দেখছেন বিনিয়োগকারীরা।

কোম্পানিটির শেয়ারের এই দাম বাড়ার প্রবণতা দেখে গত ৪ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ডিএসই তিনবার বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বার্তা দিয়েছে। কিন্তু এতেও দাম কমার পরিবর্তে মূল্যবৃদ্ধির পালে আরও জোর হাওয়া লেগেছে। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দাম এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি।

ডিএসইর ওই সতর্কবার্তা প্রকাশের আগে কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের জবাবে প্রতিবারই ওরিয়ন ইনফিউশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম এবং লেনদেন বেড়েছে এর পেছনে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংযোজনশীল তথ্য নেই।

১৯৯৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। শেয়ার সংখ্যা ২ কোটি ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭৬০টি। এর মধ্যে ৪০ দশমিক ৬১ শতাংশ শেয়ারই উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। সে হিসেবে বাজারে কোম্পানিটির এক কোটির বেশি শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসের আর্থিক তথ্য প্রকাশ করেছে। আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯ মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ১ টাকা ৪৩ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল ১ টাকা ১২ পয়সা।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর আগে ২০২০ সালে ১০ শতাংশ, ২০১৯ সালে ১৪ শতাংশ এবং ২০১৮, ২০১৭ ও ২০১৬ সালে ১৪ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। অর্থাৎ গত কয়েক বছরের মধ্যে কোম্পানিটি সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের এমন মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলছেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার দাম যেভাবে বেড়েছে তা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। এর পেছনে কারসাজি থাকতে পারে।

যোগাযোগ করা হলে বিএসইসি কমিশনার অধ্যাপক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ওরিয়ন ইনফিউশনের বিষয়টি আমরা নজরে রেখেছি। শেয়ার দাম বাড়ার তথ্য খতিয়ে দেখছি। অস্বাভাবিক কিছু পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.