আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার |

kidarkar

ডলারে দরবৈষম্য: ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রপ্তানিকারকরা

এ জেড ভূঁইয়া আনাস: আন্তব্যাংক লেনদেনে বিক্রয়মূল্য ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা আর ক্রয়মূল্য ১০১ টাকা ৬৭ পয়সা নির্ধারণের কারণে ডলারের বাজারে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। এতে রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকরকরা। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের দর পুনর্নির্ধারণ করা না হলে রপ্তানি কমে যাবে, বেড়ে যাবে আন্ডার ইনভয়েসিং (পণ্যের মূল্য কম ধরা হবে) বেড়ে যাবে। তবে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) বলেছে, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বাজার স্থিতিশীলতার জন্য।

জানা যায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদা এক বৈঠকে, ব্যাংকগুলোর বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা দরে রেমিট্যান্স আর রপ্তানি বিল ভাঙ্গতে সর্বোচ্চ ৯৯ টাকায় ডলার ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই দু’য়ের গড় দর হিসাব করে একটি ব্যাংকের ডলার কেনার যে খরচ দাঁড়াবে এলসি নিষ্পত্তিতে আমদানিকারক থেকে তার চেয়ে সর্বোচ্চ এক টাকা বেশি নিতে পারবেও জানানো হয়। পরে ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করে। যদিও এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নয় বলে জানানো হয়।

যেখানে আন্তব্যাংক লেনদেনে ডলারের বিক্রয়মূল্য দেয়া আছে ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা আর ক্রয়মূল্য দেয়া হয়েছে ১০১ টাকা ৬৭ পয়সা। এই সিদ্ধান্তটি দেশের রপ্তানিকারকদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, একই মুদ্রার দাম একেক জায়গায় একেক রকম। এত ভিন্নতা। এত পার্থক্য কেন? এটা বিশ্বের কোথাও নেই। তিনি বলেন, রেমিট্যান্স হয়ে এলে সে ডলারের দাম ১০৮ টাকা। একই ডলার রপ্তানির মাধ্যমে এলে তার দাম মাত্র ৯৯ টাকা। এখানে যে বৈষম্য তা খুবই অস্বাভাবিক। কেন এই মূল্য নির্ধারণ তা বোধগম্য নয়। কোনো যুক্তিতে মেলাতে পারছি না। এতে রপ্তানিকারকরা নিরুৎসাহিত হবেন। রপ্তানি কমে যাবে। আন্ডার ইনভয়েসিং (পণ্যের মূল্য কম ধরা হবে) বেড়ে যাবে। সরকার হারাবে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব। এছাড়া আমদানিকারকরা চাপে আছেন।

এর জন্য এ মুহূর্তে কিছু করারও নেই। এটা বাস্তব প্রেক্ষাপট। দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, রেমিট্যান্স ক্রয়ে ১০৮ টাকা এবং রপ্তানি আয়ে দেওয়া হবে ৯৯ টাকা। এ দর কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হলো। এখানে চরম বৈষম্য করা হয়েছে। এটা অন্যায়। এতে ১৭ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে।

তাছাড়া ডলারের দাম নির্ধারণে বাফেদা-এবিবি কারা? দাম নির্ধারণ করবে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা যদি ডলারের দাম নির্ধারণ করতে পারে তাহলে আমরা বিজিএমইএ-বিকেএমইএও ডলারের দাম নির্ধারণ করব। তাদের নির্ধারিত দর মানি না। নতুন দর নির্ধারণ করতে হবে। আর তা যেন হয় বৈষম্যহীন। তিনি বলেন, ডলার ক্রয় এবং বিক্রিতে এক টাকার পার্থক্য থাকতে পারে। এর বেশি নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক আগে এক টাকার পার্থক্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল। আবার সে দরই কার্যকর করা হোক। আর ডলারের দাম নির্ধারণের পূর্ণ ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে থাকুক। তা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম বলেছেন, ডলারের এই দাম চিরস্থায়ী নয়। সময়ে সময়ে বদলাবে। ঘোষিত দামে পাঁচ কার্যদিবস চলবে। তারপর আবার সংশোধন করা হবে। আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। এর আগে আরও বেশি দামে ডলার কিনেছেন তারা। এখন ১০৪ টাকা ৫০ পয়সার উপরে যাবে না। আর রপ্তানিকারকরাও লোকসানে পড়বেন না। কারণ তারা রপ্তানি খাতে প্রণোদনা পেয়ে থাকেন। ৫, ১০, ২০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা পান। সে ক্ষেত্রে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ডলারের দাম প্রায় সমান।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.