আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

ডলার কারসাজি: ছয় ব্যাংকের এমডিকে শর্ত সাপেক্ষে অব্যাহতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) ডলারে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার অভিযোগ থেকে শর্ত সাপেক্ষে অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি অভিযুক্ত প্রাইম, ব্র্যাক, দি সিটি, ডাচ্-বাংলা, সাউথইস্ট ও বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সরিয়ে দেওয়া ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের স্বপদে ফেরার সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আর ওই ছয়টি ব্যাংক গত মে-জুন মাসে ডলার কেনাবেচায় যে বাড়তি মুনাফা করেছিল, তার অর্ধেক ব্যাংকগুলোর ব্যালেণ্স শিটে আয় খাতে নিতে দেখানোর নির্দেশ দিয়েছে। আর বাকি অর্ধেক অর্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে ব্যয় করতে বলা হয়েছে। যদিও অভিযোগ ধরা পড়ার সময ওই বাড়তি মুনাফার পুরোটাই আলাদা রাখতে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে, ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হয়নি বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে, নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে অপসারিত ট্রেজারি প্রধানরা আবারো পুরোনো দায়িত্বে ফিরতে পারবেন। এতে কোনো বাঁধা নেই।’

শর্তগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জুন এবং জুলাই মাসে ডলার বিক্রি করে যে আয় করেছিলো ব্যাংকগুলো তার ৫০ ভাগ সিএসআর (কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি) ফান্ডে জমা করতে বলা হয়েছে। বাকি ৫০ ভাগ তারা ব্যাংকের আয় খাতে দেখাতে পারবে। এছাড়া ব্যাংকের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে এ ধরণের কোনো কাজ করা হবে না বলে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা নিশ্চয়তা দেওয়ায় অভিযোগটি নিষ্পত্তি দেখানো হয়েছে।’

সম্প্রতি ডলার সংকট তৈরি হওয়ার পরে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগের সত্যতা পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংকগুলো ডলারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অস্বাভাবিক মুনাফা করে বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের সরিয়ে দেওয়াসহ ব্যাংকগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। এছাড়া আরও ৭টি সহ মোট ১৩টি ব্যাংককে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়।

প্রথম ধাপে ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের সরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো, ‘ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।’

এসব ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি প্রধানদের সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। এছাড়াও জুন এবং জুলাই মাসে ডলার বিক্রি করে করা আয়ে শতভাগ আলাদা করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে, সে জায়গা থেকে এক মাস পেরোতেই সরে এলো বাংলাদেশ ব্যাংক।

ডলার বিক্রিতে আগ্রাসী ছিলো না এমন একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা যারা বাংলাদেশ ব্যাংকের রুলস মেনে কাজ করি তারা এসব সিদ্ধান্তে দ্বিধান্বিত হই। আমরাও তো পারতাম আগ্রাসী ডলার বিক্রি করতে। কিন্তু করিনি নিয়ম মেনে। যেসব ব্যাংক ৭৭০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে সেসব ব্যাংক ৩৫০ শতাংশ টাকা জমা দেবে। বাকি টাকা আয়ের খাতায় যোগ করবে। বছর শেষে দেখা যাবে সেসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো। আমরাও যদি একই কাজ করতাম তবে আমাদের অবস্থাও ভালো থাকতো শেষে। এসব সিদ্ধান্তে যারা নিয়ম মেনে কাজ করে সে ব্যাংকগুলো হতাশ হবে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক হলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কাকে কখন কিভাবে শাস্তি দিতে হবে, কিংবা ক্ষমা করতে হবে তা ঊর্ধ্বতনরা বিবেচনা করেন। তবে, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মালিক তো প্রভাবশালীরা। এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে নিশ্চয়ই সাহসিকতার প্রয়োজন। প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকগুলোও সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।’

শাস্তি পাওয়া এক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমাদের ট্রেজারি হেড খুবই অভিজ্ঞ ব্যাংকার। ব্যাংকের এমন দুঃসময়ে তাকে সরিয়ে দিতে হয়েছে নির্দেশনা মেনে। আমাদের অপারেশনে এ সময়টুকু ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তবে, এখন যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত এসেছে আমরা আবার তাকে পুনর্বহাল করবো।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.