হোসি কুনিও খুন : ইছাহাক আলীর খালাসের রায় স্থগিত
রংপুরে জাপানি নাগরিক হোসি কুনিও খুনের মামলায় জেএমবি সদস্য ইছাহাক আলীকে খালাস দেওয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহমান এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসান উল্লাহ।
গত ২২ সেপ্টেম্বর হোসি কুনিও খুনের মামলায় জেএমবি সদস্য ইছাহাক আলীকে খালাস দেওয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
এর আগে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) হোসি কুনিও খুনের দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) চার জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মৃত্যুদণ্ড থেকে ইছাহাক আলীকে খালাস দেন আদালত। বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।
রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোসি খুনের দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাঁচ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষ হয় গত ১৯ সেপ্টেম্বর।
এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোসি খুনের দায়ে জেএমবি পাঁচ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শুরু হয়।
২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকার জাপানি নাগরিক কুনিও হোসি হত্যার দায়ে জেএমবি পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
পরে মৃত্যুদণ্ডের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি) হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন— জেএমবির পীরগাছার আঞ্চলিক কমান্ডার উপজেলার পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়ার মাসুদ রানা ওরফে মামুন ওরফে মন্ত্রী, বগুড়ার গাবতলী এলাকার লিটন মিয়া ওরফে রফিক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কুড়িগ্রামের রাজারহাটের মকর রাজমাল্লী এলাকার আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লব এবং গাইবান্ধার সাঘাটার হলদিয়ার চর এলাকার সাখাওয়াত হোসেন। দণ্ডপ্রাপ্ত বিপ্লব পলাতক। হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় এর আগে খালাস পান পীরগাছার কালীগঞ্জ বাজারের আবু সাঈদ (২৮)।
চার্জশিটভুক্ত আট আসামির মধ্যে অন্য দু’জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাদের মামলার অভিযোগ থেকে বাদ দিয়ে রায় ঘোষিত হয়। তাদের মধ্যে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের গজপুরি এলাকার নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান ২০১৬ সালে অভিযোগ গঠনের আগে ১ আগস্ট রাজশাহীতে এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাটের চর বিদ্যানন্দ এলাকার সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল ওরফে চঞ্চল ওরফে সবুজ ওরফে রবি অভিযোগ গঠনের পরে ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
জেএমবির ওই আট জঙ্গির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট রংপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী।
পরে মামলাটি রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকারের আদালতে স্থানান্তরিত হলে ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
মামলায় বাদীপক্ষের ৫৫ জন সাক্ষী এবং আসামিপক্ষের একজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।
২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর সকালে জাপানি নাগরিক হোসি কুনিওকে কাউনিয়া উপজেলার আলুটারি এলাকায় গুলি করে হত্যা করেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির জঙ্গিরা।