আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবার |

kidarkar

পুলিশ-সাংবাদিক-বিত্তবানরাও মাদক সাপ্লাই করেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রিতিবেদক : সাংবাদিক, পুলিশ ও বিত্তবানরাও মাদক সাপ্লাই (সরবরাহ) করেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, যারা করেন তাদের সবাইকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসি। কেউ বাদ যায় না।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মাদকাসক্তি নিরাময়ে বেসরকারি খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনি জেলখানায় গিয়ে দেখুন, মাদকের মামলায় পুলিশের সদস্য যেমন আছেন, র্যাবের সদস্যও আছেন, তেমনি অন্য ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। পুলিশ বলে তার জন্য আইন আলাদা হবে, বিষয়টি এমন নয়।

ডোপ টেস্টের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পুলিশে যারা মাদক নেয়, তাদের ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। ডোপ টেস্টে পজিটিভ হলে তাকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। এই জায়গাটাতে আমরা খুব কঠিন অবস্থানে চলে আসছি।

মন্ত্রী আরও বলেন, চাকরির শুরুতে যারা সিলেক্টেড হবে, তাদের ডোপ টেস্ট করার প্রচলন পুরোপুরি নিতে যাচ্ছি। পুলিশ-বিজিবি সব জায়গায় ডোপ টেস্টের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত হচ্ছে কি না, সেখানেও মনে হলে আমরা ডোপ টেস্ট করবো।

তিনি বলেন, চিকিৎসকরা নাকি সবচেয়ে বেশি মাদক গ্রহণ করে। তবে বিষয়টি আমার জানা নেই। মাদক নেয় চিকিৎসক, সাংবাদিক, ইঞ্জিনিয়ার, আমরাও নিয়ে থাকি। চিকিৎসকরা মাদক নেবে না এমনতো কথা নেই। তারা তো আলাদা জাতি না। দু/একজন পথভ্রষ্ট হতে পারে।

মাদকের চাহিদা হ্রাসে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে যে স্বপ্ন দেখছি, এই যে আমাদের উন্নয়ন, তার সব বরবাদ হয়ে যাবে যদি মাদকের ভয়াবহতা থেকে আমাদের ভব্যিষৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে না পারি।

তিনি বলেন, আমাদের সন্তানেরা অত্যন্ত মেধাবী। সেই প্রজন্মকে যেদি মাদকাসক্তি থেকে রক্ষা করতে না পারি, তাহলে আমাদের স্বপ্ন অবাস্তবই থেকে যাবে। মাদকের চাহিদা কমাতে হলে মিডিয়ার অনেকখানি গুরুত্ব রয়েছে।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমরা মাদকের চাহিদা হ্রাসে শুধু ক্রোড়পত্র দেই না, আমরা ছোট ছোট টিভিসি বানাচ্ছি। প্রত্যেকটি জেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জনবল ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করছি। ল্যাবও হয়েছে।

সবক্ষেত্রেই অসাধু লোক আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘হেরোইন উদ্ধারের পর নাকি পরীক্ষায় পাউডার হয়ে যায়। হুমম অস্বীকার করছি না। কারণ শুধু পোর্টে কিংবা পুলিশে নয়, সব জায়গাতেই খারাপ, অসাধু মানুষ আছে। সীমান্তেও যেমন চোখ বন্ধ করে অনেকে আসছে, তেমনি পুলিশেরও অসাধু কেউ ইয়াবা উদ্ধারের পর তা ল্যাবে পাউডার বানিয়ে দিচ্ছে, এটাও সত্য। আমরা শক্তিশালী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন করেছি।’

‘সারাদেশে জেলখানার ক্যাপাসিটি আছে ৪১ হাজার প্লাস। কিছুদিনের মধ্যে এটা আরও বাড়বে। কিন্তু সবসময় থাকেই (আসামি) ৮০ থেকে লাখের বেশি। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই মাদক কারবারি। বিচারের সময় সাক্ষী পাওয়া যায় না। আর আমাদের লম্বা জট লেগেছে মামলার। সেখানে এই মাদক মামলা হারিয়ে যায়। মাদক মামলার জন্য আমরা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল চেয়েছিলাম, যদিও আমরা সেটা এখনো পাইনি। যদি শাস্তিটা দৃশ্যমান হতো তাহলে ডিমান্ড হ্রাস ও সাপ্লাই কমে যেতো।’

মন্ত্রী বলেন, মাদকের সাপ্লাই কমাতে বিজিবি, কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা ও জনবল বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বর্ডারে আমরা এখন অনেক কিছু করছি। টেকনাফে দেখেন, নাফ নদীর যে বর্ডার তা দুর্গম। সেখানে বিওপি থেকে বিওপি যেতে সময় লাগে। আমরা সেন্সর লাগাচ্ছি সমস্ত বর্ডারে। হেলিকপ্টার টহলের ব্যবস্থা করছি, যাতে মাদকের সাপ্লাই বন্ধ করা সম্ভব হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে ৬০ থেকে ৭০ লাখ মাদকাসক্ত। এজন্য ভালো হাসপাতাল নেই। আমাদের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে অভিজ্ঞ ডাক্তার নেই, সাইকিয়ার্টিস্ট (মনোরোগ বিশেষজ্ঞ) নেই। তেজগাঁও সরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে উচ্চ ও মধ্যবিত্তের কেউ যায় না।

বেসরকারি খাতে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র চালুর জন্য সরকারিভাবে সহায়তা করার আশ্বাসও দেন মন্ত্রী।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.