আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার |

kidarkar

দুই-তৃতীয়াংশ প্রক্রিয়াজাত খাবারে লবণের মাত্রা বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে বেশি লবণ পাওয়া গেছে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ পরিচালিত ‌‌‘অ্যাসেসমেন্ট অব সল্ট কন্টেন্ট অ্যান্ড লেবেল কমপ্লায়েন্স অব কমনলি কনজিউমড প্রোসেসড প্যাকেজড ফুডস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রিজলভ টু সেভ লাইভসের সহায়তায় গবেষণাটি করা হয়েছে।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের হাইপারটেনশন কন্ট্রোল প্রোগ্রামের গবেষণা সমন্বয়ক ডা. আহমেদ খাইরুল আবরার।

মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবারে সর্বোচ্চ ৭৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণকে নিরাপদ মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে দেখা গেছে, বাজারে বহুল প্রচলিত ৬১ শতাংশ বিস্কুট, চিপস, চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, ঝালমুড়ি, আচার, চাটনি ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে বেশি লবণ পাওয়া গেছে। আর ৩৪ শতাংশ খাবারে নিরাপদ মাত্রার দ্বিগুণ অর্থাৎ ১ দশমিক ৫ গ্রামের বেশি লবণ পাওয়া গেছে।

ডা. খাইরুল আবরার বলেন, আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ ও ঝালমুড়ির কোনটিতেই নির্ধারিত মাত্রার লবণ পাওয়া যায়নি, বরং এগুলোতে দ্বিগুণের বেশি লবণ রয়েছে। একইভাবে চাটনির ৮৩ শতাংশ, চিপসের ৬৩ শতাংশ এবং ডাল বুট ভাজার ৬০ শতাংশে দ্বিগুণ লবণ রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, মূলত বাংলাদেশে সরকারিভাবে প্রক্রিয়াজাত খাবারে লবণের সর্বোচ্চ কোনো সীমা নির্ধারণ করা নেই। ফলে কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যে ইচ্ছেমতো লবণ দেন। যদিও প্যাকেটজাত খাদ্য লেবেলিং প্রবিধানমালা-২০১৭ অনুসারে, প্রক্রিয়াজাত খাবারে বিদ্যমান লবণের পরিমাণ প্যাকেটে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু গবেষণায় প্রায় অর্ধেক (৪৪%) খাবারের প্যাকেটে লেখা পরিমাণের চেয়ে বেশি লবণ পাওয়া গেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষই এ জাতীয় খাবার খেয়ে থাকে। গড়ে একজন ব্যক্তি সপ্তাহে ১৫ বার অর্থাৎ দিনে ২ বারের বেশি এসব খাবার গ্রহণ করেন। আর অতি মাত্রায় লবণ গ্রহণের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। আর এসব রোগ প্রতিরোধ করতে হলে প্রক্রিয়াজাত খাবারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে লবণের পরিমাণ নির্ধারণ করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের প্যাকেটে পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য যথাযথভাবে উল্লেখ করতে হবে, যাতে একজন ভোক্তা সহজেই বুঝতে পারেন খাবারটি স্বাস্থ্যকর নাকি অস্বাস্থ্যকর।

গবেষণা মতে, উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও খাবারের প্যাকেটের সম্মুখভাগে লেবেলিং (ফ্রন্ট অব প্যাক লেবেলিং) প্রচলন করা হলে ভোক্তারা সহজে খাবারের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে তা কেনার বিষয়ে সিদ্ধাতে নিতে পারবেন। এর ফলে প্যাকেটে থাকা স্পষ্ট ও পাঠযোগ্য আকারের লেখা এবং চিহ্ন দেখে একজন ভোক্তা সহজেই বুঝতে পারবেন খাবারটি স্বাস্থ্যসম্মত হবে কি না।

অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, কাল বিশ্ব হার্ট দিবস। সেটাকে সামনে রেখে আমরা এই গবেষণা উপস্থাপন করেছি। আমাদের লাইফ স্টাইলে প্রচুর পরিমাণ প্রসেস ফুড রয়েছে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লবণ। লবণের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। একারণে পলিসি মেকারদের মধ্যে বিষয়টি তুলে ধরার চিন্তা নিয়েই আমরা আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথোরিটি সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আলিম, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের কান্ট্রি লিড মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সাইন্সের অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কো-অর্ডিনেটর মো. একরামুল্লাহসহ আরও অনেকে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.