আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

মৃত্যু দুঃখজনক, কিন্তু বিশৃঙ্খলা অগ্রহণযোগ্য : ইরানের প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পুলিশের হাতে আটক মাশা আমিনির মৃত্যু ইরানের সবাইকে ব্যথিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। তবে ওই তরুণীর মৃত্যু ঘিরে ইরানে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

মাথায় হিজাব না থাকায় গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী তেহরানে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মাশা আমিনি নামের ২২ বছরের এক তরুণী। গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চারদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মাশার।

মাশা আমিনির মৃত্যুর পর ইরান জুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। চার দশক ধরে চলে আসা কঠোর ইসলামি শাসনের অবসান চাওয়া হচ্ছে এ আন্দোলন থেকে।

ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাইসি বলেছেন, মর্মান্তিক ওই ঘটনায় আমরা সবাই দুঃখিত। কিন্তু বিশৃঙ্খলা অগ্রহণযোগ্য। তবে রাইসি যখন এসব বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখনও ইরানজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।

তিনি বলেন, জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে দেওয়া যাবে না। দাঙ্গার মাধ্যমে সমাজে শান্তি নষ্ট করতে দেওয়া যাবে না।

এদিকে দু’সপ্তাহের বিক্ষোভে ইরানের মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। শক্ত হাতে বিক্ষোভ দমন করে যাচ্ছে ইরানের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারপরও সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিক্ষোভ স্লোগান দেওয়া হচ্ছে স্বৈরশাসক নিপাত যাক।

ইরানের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, তবে নিকট ভবিষ্যতে ইসলামি শাসনের অবসানের কোনো লক্ষণ যাচ্ছে না। কারণ ১৯৭৯ সালে মার্কিন সমর্থিত মোহাম্মদ রেজা শাহের পতনের সময় তারা যেমন দুর্বলতা দেখিয়েছিল, এখনকার শাসকরা তেমন কোনো দুর্বলতা না দেখাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী মাশা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানের অন্তত ৮০টি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ঠিকভাবে হিজাব না পরার অপরাধে মাশা আমিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

মাশা আমিনির মৃত্যুর পর যে বিক্ষোভ ইরানে ছড়িয়েছে তা ২০১৯ সালে পেট্রোলের দাম বৃদ্ধির কারণে হওয়া বিক্ষোভের পর সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি মাশা আমিনির মৃত্যুর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কয়েকদিনের মধ্যে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যাবে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এখনও বিক্ষোভের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ ও সরকারপন্থী মিলিশিয়া সদস্যসহ ৪১ জন মারা গেছেন। তবে ইরানের মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলতে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি।

বিক্ষোভ দমনে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাইসি বলেন, তারা দেশকে সুরক্ষিত করার জন্য জীবন উৎসর্গ করছে।

তবে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে বহু ইরানি সেলিব্রিটি, ফুটবল খেলোয়াড় এবং শিল্পী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। ইরানের কট্টরপন্থী বিচার বিভাগ বলছে, এ কারণে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

রাইসি বলেন, বিশৃঙ্খলায় জড়িত প্রত্যেককে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

বুধবার প্রকাশিতএকটি ভিডিওতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছেন- মোল্লারা বেরিয়ে যাও!

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, সুশীল সমাজের কর্মী, অন্তত ১৮ জন সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আমিনির মৃত্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক নিন্দার ঝড় উঠেছে। ইরান অবশ্য এই অস্থিরতার জন্য কুর্দি ভিন্নমতাবলম্বীদের দায়ী করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ অস্থিরতার সুযোগ নিচ্ছে বলেও অভিযোগ তেহরানের।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.